চ্যানেল আই এর কৃষিভিত্তিক নিয়মিত প্রামাণ্য অনুষ্ঠান হৃদয়ে মাটি ও মানুষ এবার ১৯ বছরে পদার্পণ করছে। ২০০৪ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ সমকালীন কৃষি অর্থনীতি, বাজার, প্রযুক্তি, গ্রামীণ উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তাসহ সামগ্রিক জীবন জীবিকা বিষয়ক নিয়মিত অনুষ্ঠান শুরু করেন।
১৮ বছরে এ অনুষ্ঠানটি দেশের কৃষি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে রেখে চলেছে অসামান্য অবদান। কৃষকের অধিকার আদায় থেকে শুরু করে কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ এমনকি রাষ্ট্রীয় নীতি-চিন্তায় কৃষির প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপের এক নজির গড়ে উঠেছে এ অনুষ্ঠানের কল্যাণে। দেশের অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী থেকে শুরু করে সাংবাদিকসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে কৃষির গুরুত্ব অনুধাবনের পথ প্রশস্ত করেছে। এখন বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো কৃষির দিকে মনোযোগী হয়েছে। সংবাদপত্রের পাতায় কৃষি পেয়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
হৃদয়ে মাটি ও মানুষ একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠান হলেও অনুষ্ঠান শুরুর অল্পদিনের মধ্যেই এটি পরিণত হয়েছে সামাজিক আন্দোলনে। এ অনুষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে সারাদেশের কৃষক সম্প্রদায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। এ অনুষ্ঠানের পক্ষ থেকে নেয়া একেকটি পদক্ষেপ দেশবাসীকে নতুন নতুনভাবে আলোড়িত করেছে।
হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানের অন্যতম এক আয়োজন ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’। ২০০৫ সাল থেকে এই আয়োজন শুরু হয়। এটি দেশের কৃষকের পাওয়া না পাওয়ার সব চিত্রকে রাষ্ট্রের সামনে তুলে ধরার ক্ষেত্রে রেখে আসছে অনন্য অবদান। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের নীতি নির্ধারকের সঙ্গে কৃষকের এক সেতুবন্ধন রচিত হয়েছে। হৃদয়ে মাটি ও মানুষের কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট এর মাধ্যমে উঠে আসা সুপারিশমালার আলোকে আমাদের কৃষি পরিকল্পনায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধন হয়েছে।
কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে একসময় পিছিয়ে থাকলেও এখন দেশীয় উৎপাদন দিয়েই মিটছে ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য চাহিদা। এক্ষেত্রে কৃষক, কৃষি বিজ্ঞানী, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণী যন্ত্রের অবদানের পাশাপাশি গণমাধ্যমের ভূমিকা স্বীকৃত হয়েছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের পথিকৃত উন্নয়ন সাংবাদিক হিসেবে কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ বিশ্বব্যাপী এক মডেল-এ পরিণত হয়েছেন। তার টানা চার দশকের কৃষি বিষয়ক টেলিভিশন কার্যক্রম উন্নয়নশীল বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে রেখেছে অসামান্য অবদান। সারাদেশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য কৃষি উদ্যোক্তা। দেশে সমন্বিত খামার, মাছ চাষ, পোল্ট্রি খামার, দুগ্ধ খামার, প্রাণি সম্পদের খামার গড়েছেন বহু মানুষ। আজকের দিনে উচ্চমূল্যের ফল ফসল আবাদের ক্ষেত্রেও বহু মানুষের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণার নেপথ্য শক্তি হিসেবে কাজ করছেন তিনি। তার চিন্তা ও ধারণায় নির্মিত হৃদয়ে মাটি ও মানুষ এদেশের সব শ্রেণিপেশার মানুষের শিক্ষা, বিনোদন, উৎপাদন, ব্যক্তি উদ্যোগ, মাটির প্রতি প্রেম থেকে শুরু করে সব ধরণের মানবিক ও সামাজিক দায়িত্বে মনোযোগী করে।
হৃদয়ে মাটি ও মানুষ দেশের ভেতরে ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত সেরা অনুশীলনগুলোর তুলে ধরে কৃষি সম্প্রসারণের এক বিকল্প শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে গণমাধ্যমকে। এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কৃষি অনুশীলনগুলো বারবার এ অনুষ্ঠানে উঠে আসায় কৃষি প্রযুক্তি বিনিময়ের একটি নতুন পথ উন্মুক্ত হয়েছে।
হৃদয়ে মাটি ও মানুষের নিয়মিত অনুষ্ঠানমালার বাইরে বড় একটি কাজ হচ্ছে কৃষকের ঈদ আনন্দ। প্রতি ঈদে টেলিভিশনের সেরা ঈদ আয়োজন হিসেবে দর্শকপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছেছে এ অনুষ্ঠান। এছাড়া হৃদয়ে মাটি ও মানুষের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে নাগরিক শিক্ষার্থীদের কৃষিশিক্ষার ব্যবহারিক অনুষ্ঠান ফিরে চল মাটির টানে, শিশু শিক্ষার্থীদের গ্রাম ও কৃষি সম্পর্কে ধারণা দেয়ার অনুষ্ঠান ফিরে চল মাটির টানে জুনিয়র দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। হৃদয়ে মাটি ও মানুষ-এর নাগরিক কৃষির নিয়মিত আয়োজন ছাদকৃষি। এ অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয় হৃদয়ে মাটি ও মানুষের আরেকটি আয়োজন হৃদয়ে মাটি ও মানুষের ডাক অনুষ্ঠানে। এ অনুষ্ঠানটিও পরিণত হয়েছে শহরে কৃষি অনুশীলনের এক সামাজিক আন্দোলন হিসেবে।
১৯ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে হৃদয়ে মাটি ও মানুষের উপস্থাপক, কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যমব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ বাংলাদেশ ও বিশ্বময় বসবাসকারী বাঙালিদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন: প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সব নীতি নির্ধারক, অর্থনীতিবিদ, কৃষিবিদ, গবেষক, বিজ্ঞানী তথা সব পেশাজীবীর অকুণ্ঠ ভালোবাসা ও সহযোগিতায় হৃদয়ে মাটি ও মানুষ সবার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে।
তিনি দেশের সব কৃষক ও খামারির প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানান।