বাংলা টিভি নাটকের দাপুটে অভিনেতাদের একজন ফারুক আহমেদ। একাধারে কাজ করেছেন টিভি, মঞ্চ এবং বড় পর্দায়। অভিনয় জীবনে তার কাজের একটা বড় অংশ প্রয়াত কথাসাহিত্যিক এবং নির্মাণের কারিগর হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে কেটেছে। শুধু কাজ নয়, কাজের বাইরেও খুব কাছে থেকে হুমায়ূন আহমেদকে দেখার সুযোগ হয়েছে তার। ১৩ নভেম্বর হুমায়ূন আহমেদের ৬৯তম জন্মদিন। তাই এইদিনটিকে সামনে রেখে তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন এই অভিনেতা। উত্তরার একটি শুটিং হাউজে বসে সম্প্রতি হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে মজার অভিজ্ঞতার কথা জানালেন চ্যানেল আই অনলাইনকে-
কেমন আছেন?
ভালো আছি।
আজ হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আপনার স্মৃতিচারণ শুনবো…
আসলে স্মৃতির ভান্ডারতো অনেক বেশি সমৃদ্ধ। কোনটা রেখে কোনটা বলবো। তাকে আমি দেখেছি খুব কাছে থেকে। অনেকটা পারিবারিকভাবে পরিচয় তার সঙ্গে। কারণ, তার ছোট ভাই আহসান হাবিব আমার স্কুল বন্ধু। সেই সুবাদে তাদের বাসায় আমি অনেকবার গিয়েছি এবং তাকে কাছে থেকে দেখেছি। কিন্তু তখন কোনো ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে নাই। ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে কাজের মাধ্যমে। অর্থ্যাৎ আমাদের ব্যক্তিগত পরিচয় ১৯৭৩ সালে আর কাজের পরিচয় ৯০ দশকে।
হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে প্রথম কাজ কোনটা ছিল?
নব্বই এর দশকে বিটিভিতে কাজটা করেছিলাম। আমি যখন তার সাথে কাজের অফার পাই তখন ভীষণ খুশি হয়ে গিয়েছিলাম। কারণ, সেই সময় ‘কোথাও কেউ নাই’ ‘বহুব্রীহি’ এসব নাটক দিয়ে হুমায়ুন আহমেদ অনেক বেশী এগিয়ে ছিলেন সমসাময়িকদের থেকে। আমি তার যে নাটকে প্রথম কাজ করি সেটার নাম ছিল ‘অচিন বৃক্ষ’। এরপর ‘মাটিরও পিঞ্জিরার মাঝে বন্দী হইয়া রে’ ‘আজ রবিবার’সহ একের পর এক দর্শকনন্দিত নাটক করি তার নির্দেশনায়।
কাজ এবং কাজের বাইরের হুমায়ূন আহমদ কেমন ছিলেন?
কাজের কথা বলতে গেলে বলতে হবে, উনি আসলে কাজের ব্যাপারে শতভাগ মনোযোগী ছিলেন। মানের সাথে কখনও আপোষ করতেন না। প্রায় ১৮-১৯ ঘন্টা উনি কাজের মধ্যেই ডুবে থাকতেন। আড্ডা যে চলতো তা শুধু আড্ডা ছিল না, সেটাও ছিল কাজেরই একটা অংশ। সেখানে জ্ঞান, অভিজ্ঞতা আর চিন্তার আদান-প্রদান চলতো। নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে বেশ মজা করতেন। আড্ডায় নিজে মজা করতেন এবং যারা মজা করতে পারতেন তাদেরকেও বেশ পছন্দ করতেন। তবে তার মাঝে পরিমিতিবোধ ছিল অনেক বেশি।
তার সঙ্গে কতগুলো কাজ করেছেন?
প্রায় সাড়ে তিনশ’র মতো কাজ করেছি আমি তার সঙ্গে। আমার মনে হয়, কাজের সংখ্যার দিক থেকে আমিই র্সবাধিক। আমি তার প্রায় ৮০ ভাগ কাজ করেছি।
হুমায়ুন আহমেদের এত কাজের মাঝে সবচেয়ে পছন্দের কাজ কোনটা ছিল?
আসলে পছন্দটা চেঞ্জ হয়। তারপরেও বলছি, আমরা একটা সিক্যুয়াল করতাম ‘তারা তিনজন’। ওখানে স্বাধীন খসরুর মামা থাকি আমি আর ডাক্তার এজাজ। ঐ ক্যারেক্টারটা আমার বেশ ভালো লেগেছিল। এছাড়া ‘অদেখা ভুবন’ সিক্যুয়ালের ‘জৈতুরী’ নামে একটা নাটক ছিল। ওখানে আমি একজন ড্রাগ অ্যাডিক্টেডের চরিত্রে অভিনয় করি। যা আমার পছন্দের ক্যারেক্টার।
হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে বিশেষ স্মৃতি?
তার সঙ্গে দেখা হবার শেষ স্মৃতিটাই আমার কাছে বিশেষ স্মৃতি। অসুস্থ অবস্থায় প্রথমবার কেমো দিয়ে যখন আমেরিকা থেকে দেশে ফিরেন মাত্র ১৫ দিনের জন্য। তখন কথা হয় নুহাশ পল্লীতে। আর সেই সময়ে এসেও তিনি একটা নাটক করেন ‘পিপীলিকা’। যেই নাটকে আমি অভিনয় করেছি। সেইবার ফিরে যাবার আগের দিন উপস্থিত সবার মাঝে আমাকে নিয়ে একটা গল্প বলেন। সেই গল্পের স্মৃতিটা আজও মনে পড়ে। ওটাই শেষ স্মৃতি আর ওটাই ছিল জীবিত অবস্থায় আমার সাথে শেষ সাক্ষাত।
গল্পটা কী ছিল?
উনি বলছিলেন, একবার আমার ছেলে নিষাদের জন্মদিনে আমি এবং শাওন দুজনেই ভুলে যাই ফারুককে দাওয়াত দিতে। কিন্তু সেদিন সন্ধ্যায় সে ঠিকই নিষাদের জন্য সুন্দর একটা উপহার নিয়ে হাজির!! এটা আসলে তার অধিকার এবং নিষাদের প্রতি ভালোবাসা থেকেই ফারুক করেছে।
অনেক ধন্যবাদ চ্যানেল আই অনলাইনকে সময় দেবার জন্য
আপনাকেও ধন্যবাদ, চ্যানেল আই অনলাইনকেও ধন্যবাদ।
ফিচার ছবি: ওবায়দুল হক তুহিন