এবারের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিবার্চন সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে অজনপ্রিয়দের প্রতিযোগিতা হতে যাচ্ছে। ভোটারদের প্রায় অর্ধেক হয় ডেমোক্র্যাট মনোয়ন প্রত্যাশী হিলারি ক্লিনটন অথবা রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন করেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, হিলারি-ট্রাম্পের সেই সমর্থকরাই দুজনের জয় ঠেকানোর কথা বলছেন।
তবে তারা এও বলেছেন, এই দুজন থেকেই যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হয়, তাহলে হিলারিকে থামিয়ে ট্রাম্পকেই নির্বাচিত করবেন।
রয়টার্সের চালানো জরিপে কথা উল্লেখ করে ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়া’স সেন্টার ফর পলিটিকসের ডিরেক্টর ল্যারি সাবাটো বলেন, জরিপে যুক্তরাষ্ট্রে আদর্শিক দ্বন্দ্বের স্পষ্ট ছাপ দেখা গেছে। এখানে বিরোধী দলের প্রতি ভীতিজনক অবস্থা অনেক বেড়েছে। রিয়েল স্টেট টাইকুন ট্রাম্প ও সাবেক ফাস্ট লেডির দ্বন্দ্ব সেটাকে আরো প্রকট করেছে।
তিনি বলেন, এসব ঘটনাকে নেতিবাচক পক্ষাবলম্বন বলা হয়। এখানে পূর্ণ প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা যদি কার্যকরীভাবে কাজটা করতে পারতাম তাহলে ট্রাম্প এবং ক্লিনটনের চেয়ে বেশী ভালো মানুষকে মনোনীত করতে পারতাম।
কট্টরপন্থী প্রস্তাবের জন্য নিন্দিত ট্রাম্প তার আবেগী এবং বিধ্বংসী সমর্থকদের ভোটে জিতেছেন। মুসলমানদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা, সীমানা প্রাচীরের জন্য মেক্সিকোর কাছ থেকে বলপূর্বক হলেও টাকা আদায় এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংক্রান্ত ব্যাপার নিয়ে অনেক উল্টাপাল্টা কথা বলেছেন ট্রাম্প।
আর সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ওবামা প্রশাসনের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বেশির ভাগ রাজ্য এবং ডেলিগেটসদের ভোট জিতে একজন শক্তিশালী প্রার্থীতে পরিণত হলেও ওবামাব প্রশাসনের অগ্রগতিতে যেসব অভাব ছিল তার কিছুই তিনি উল্লেখ করেননি। এ নিয়েও ভোটারদের অসন্তোষ রয়েছে।
৮ নভেম্বরের নির্বাচনে কে আসল শিরোনাম হবে? রয়টার্সের জরিপে ভোটারদের সামনে এমন প্রশ্ন রাখা হয়েছিল।
জরিপে অংশ নেওয়া ৪৭ শতাংশ ট্রাম্প সমর্থক বলেছেন, তারা প্রাইমারিতে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন কারণ হিলারিকে জয়ী দেখতে চান না। বাকি ৪৩ শতাংশ বলেছেন, তারা রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। তবে মাত্র ৬ শতাংশ বলেছেন, তারা ট্রাম্পকে ব্যক্তিগতভাবে পছন্দের জন্য ভোট দিয়েছেন।
প্রায় একই রকম উত্তর দিয়েছেন হিলারি সমর্থকরাও। ৪৬ শতাংশ বলেছেন, তারা হিলারিকে ভোট দিয়েছেন কারণ ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চান না। আর হিলারির রাজনৈতিক অবস্থানের সাথে একমত ৪০ শতাংশ সমর্থক। আর সাবেক ফাস্ট লেডিকে ব্যক্তিগতভাবে ভাল লাগার কারণে ভোট দিয়েছেন ১১ শতাংশ সমর্থক।
২৯ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত ৪৬৯ জন ট্রাম্প সমর্থক ও ৫৯৯ জন হিলারি সমর্থক ভোটারের সাক্ষাত নেওয়া হয়। এতে বিশ্বাসযোগ্যতা পার্থক্য হয়েছে ৫ শতাংশ। জরিপের ফল এটাই বলে যে, ভালো প্রার্থী হিসেবে নয় রাজনৈতিক আদর্শিকতার কারণেই প্রাইমারিতে ট্রাম্প-হিলারিকে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা। কিন্তু সমর্থকদের অধিকাংশই ভেতর থেকে চাইছেন না যে এই দুজনের কেউ একজন তাদের প্রেসিডেন্টে হোক।
এটা নিশ্চিত যে আগামী কয়েক মাসে ভোটারদের মনোভাব পরিবর্তন হতে পারে। প্রার্থীদের নিয়ে জাতীয় কনভেশনের আয়োজন করা হবে, জাতীয় বিতর্ক হবে এবং বিজ্ঞাপন মূল্য মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে।
ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যালান আব্রামউইচ বলেছেন, যাই হোক শেষ পর্যন্ত নেতিবাচক পরিবেশ রাজত্ব করতে পারে। হিলারি-ট্রাম্প, একে অপরের কৌশলগত প্রচারণার উপরই তাদের ভাগ্য নির্ধারণ হবে। তবে তিনি বলেন, ‘এটা অনেক অনেক নেতিবাচকের দিকেই যাচ্ছে।’
এই নেতিবাচক প্রবণতা যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘমেয়াদী রুপ নিতে পারে। ২০১৪ সালে পিউ রিচার্সের চালানো জরিপে দেখা যায়, গত কয়েক দশকের মধ্যে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে একে-অপরের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব অনেক বেড়েছে। এই বিরোধীতার হার ডেমোক্রদের মধ্যে এক চতুর্থাংশের বেশী এবং রিপাবলিকানদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশের বেশী। আর এটাকে ‘আমেরিকান জাতির মঙ্গলের জন্য একটি হুমকি বলে দেখা হচ্ছে।’
বারবারা মোনসন নামের ৫৯ বছরের এক নারী বলেন, রিপাবলিকানদের মনোনয়ন কে পেলো সেটা কোনো বিষয় না। যেই হোক আমি তাকেই ভোট দেব। প্রাইমারির ভোটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছি। এটা কখনো হিলারির দিকে যাবে না। কখনো না।