চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

হাসপাতালে চিকিৎসক সংগঠনের ভোট, ভোগান্তিতে রোগীরা

হাসপাতালে রোগীদের বিড়ম্বনায় ফেলে সরকারি হাসপাতালে ভোট কেন্দ্র করেছে একটি চিকিৎসক সংগঠন। শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনিষ্টিটিউড ও হাসপাতালে ভোট কেন্দ্র স্থাপন করে চলেছে প্রচারণা ও ভোটগ্রহণ। ফলে ভর্তি হওয়া রোগীরা যেমন সমস্যায় পড়েছিলেন, তেমনি ভর্তি হতে আসা রোগীরাও ভোগান্তির সন্মুখীন হন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় ৮ হাজার ভোটার-চিকিৎসকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটি’র নির্বাচন উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁয়ে ওই হাসপাতালে নির্বাচনী ভেন্যু করে চলেছে ভোটযজ্ঞ। শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট চলে। হাসপাতালের গেটে নির্বাচনী ক্যাম্প আর প্রচরণার জটলায় এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অনেক রোগীরা দুর্ভোগে পড়েছিলেন।

আবার প্রবেশ মুখে ভোটারদের পরীক্ষায় কড়া পাহারার কারণে রোগীদের স্বজনদের পড়তে হয় না সমস্যায়। রোগীদের সাথে ঠিকমতো দেখা করতে না পারায় আক্ষেপ করেছেন অনেকে। ছুটির দিনে রাজধানীর বাইরে থেকে অনেকে হাসপাতালে এসে ভোগান্তিতে পড়েছেন।

নেত্রকোনা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা ললিতা আকতার বলেন, আমার ছেলে চাকরি করে, নিয়ে আসতে পারে না তাই আজ শুক্রবার ভীড় কম হবে বলে এসেছি। কিন্ত এখানে এসে যে অবস্থা দেখলাম, তাতে অন্যদিন আসাই ভাল ছিলো।

সাত দিন আগে বাবাকে ভর্তি করানো সাজ্জাদ জানান, সকালে খাবার নেওয়ার জন্য বাহিরে গিয়েছিলাম ভেতরে ঢুকতে এক ঘন্টা লেগেছে। আমি বুঝলাম না, হাসপাতালে নির্বাচন হয় কী করে।

ওই নির্বাচনে দুইটি প্যানেলে মোট ৯৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এক পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন, ডা. মো. শামছুজ্জোহা নিজাম আর অপর পক্ষে ছিলেন ডা. মো. আবুল কাশেম। মোট ভোটার সংখ্যা সাড়ে সাত হাজারের বেশী।

রোগী ও রোগীর আত্নীয়স্বজন সমস্যার কথা জানালেও বিষয়টি মানতে নারাজ চিকিৎসক ও চিকিৎসক নেতারা।

জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনিষ্টিটিউড ও হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত ডা. তৈহিদ আনোয়ার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমাদের এখানে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আমরা ঠিকমতো রোগী দেখছি। ভোট তো বাইরে হচ্ছে, তবে বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন।

ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ডা. আবু মোহাম্মদ শরিফুল আলম খান সবুজ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, নির্বাচনের ভেন্যুর জন্য মহাপরিচালক মহোদয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো। তিনি ১০ সদস্যের যে কমিটি করেছিলেন, ওই কমিটি এই জায়গা নির্ধারণ করেছেন।

হাসপাতালে কেনো নির্বাচনের ভেন্যু হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের চাওয়া ছিল নিরপেক্ষ ভেন্যুতে নির্বাচন হোক। কথা ছিল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিষ্টিটিউটে হবে, পরে বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় থেকে এখানে নির্ধারণ করা হয়।

হাসপাতালে নির্বাচন ও রোগীদের সমস্যার বিষয়ে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনিষ্টিটিউড ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. জালাল আহমেদ টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, হাসপাতালের মধ্যে নির্বাচন হচ্ছে না, হাসপাতালের অডিটরিয়ামে হচ্ছে। আসলে মহাপরিচালক মহোদয়ের চিঠির কারণে আমরা এই ব্যবস্থা করেছি।

প্রায় ৮ হাজার ভোটারের নির্বাচন কীভাবে একটি অডিটরিয়ামে হয় এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমিতো এখন হাসপাতালে নেই, তাই আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। 

হাসপাতালে ভোটযজ্ঞের আশেপাশে অনেক সিনিয়র চিকিৎসক ও চিকিৎসক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তাদের অনেককে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা বিষয়টি নিয়ে বিব্রতবোধ করেন এবং কোনো কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।