চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

হারিয়ে যাচ্ছে রাজশাহী সিল্ক!

ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী সিল্ক হারিয়ে যেতে বসেছে। শুধু তাই নয় রেশম সুতার অভাবে স্থানীয় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি-মালিকানাধীন রেশম কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে । বর্তমানে যে ক’টি কারখানা চালু আছে সেগুলোও বন্ধ হওয়ার পথে। এজন্য বিশ্ববাজারে রেশম সুতার দাম বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করছেন রেশম ব্যবসায়ীরা।

রাজশাহীর রেশম ব্যবসায়ীদের মতে, বাংলাদেশ রেশম বোর্ড যে পরিমাণ রেশম সুতা উৎপাদন করে, তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। ফলে স্থানীয় রেশম ব্যবসায়ীরা জাপান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, কাজাখস্তান ইত্যা‌দি দেশ থেকে রেশম সুতা আমদানি করে দীর্ঘ দিন চাহিদা মিটিয়েছেন। আর অবাধে চোরাই পথে সুতা আমদানির কারণে দেশীয় রেশম সুতার বাজার ধ্বংসের মুখে রয়েছে।

বর্তমানে বেশির ভাগ দেশ রেশম সুতা রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা রেশমী সুতার জন্য এতদিন চীনের উপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু চীনও বস্ত্রখাতের উন্নতিতে নজর দেয়ায় এবং ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় চীন থেকে রেশম সুতার আমদানি বন্ধ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের একমাত্র রেশম নগরী হিসেবে পরিচিত রাজশাহীর বিসিক শিল্প এলাকায় দু’বছর আগেও ছোট-বড় মিলিয়ে ৭২টি রেশম কারখানা ছিল। এর মধ্যে অর্ধশতাধিক কারখানা রেশম সুতার অভাবে এরইমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে । বা‌কি কারখানাগুলোও বন্ধের উপক্রম হয়েছে।

টানা হরতাল আর অবরোধের পর বর্তমানে মহানগরীর সাহেব বাজার, সোনাদীঘির মোড়, নিউমাকের্ট ও বিসিক এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সিল্কের দোকান ও শো-রুমগুলোতে  তেমন বেচাকেনা নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা । তারপরও সপুরা সিল্ক, উষা সিল্ক, রাজশাহী সিল্ক, দোয়েল সিল্ক , বিভা সিল্ক ফ্যাশন, মহুয়া সিল্ক সহ অনেক রেশম প্রতিষ্ঠান তাদের কারখানা ও শো রুম চালু রেখেছে।

ব্যবসায়ীরা রাজশাহী সিল্ক এর ঐতিহ্য ধরে রাখতে সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা চেয়েছেন। দেশী সুতার উৎপাদন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা ।

তাদের মতে বেশী দামে সুতা আমদা‌নি করে সিল্ক কাপড় উৎপাদন করে ব্যবসাটিকিয়ে রাখা সম্ভব না। রাজশাহীর সপুরা সিল্ক মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সদর আলী জানান, বিদেশ থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি রেশম সুতা সাড়ে ৫ হাজার টাকা  থেকে ৬ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। একই সাথে প্রতি কেজি দেশীয় সুতার দাম সাড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা।

ব্যবসায়ীরা জানান, সরকার রেশম বোর্ডের সহযোগিতায় ২৩টি রেশম পল্লীর মাধ্যমে সুতা সংগ্রহ, কুপন তৈরি ও সুতা উৎপাদনের প্রকল্প গ্রহণ করেছিল। তবে কবে নাগাদ সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে ব্যবসায়ীরা সংশয় প্রকাশ করেছেন।

তবে একেবারে হাল ছেড়ে দেননি রেশম শিল্প মালিকরা। বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি চাষিদের সহজ শর্তে ঋণসুবিধা, কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি প্রয়োগ, চাষি পর্যায়ে গুটি বিক্রির মাধ্যমে আগামী দু’বছরের মধ্যে দেশের চাহিদা মতো সুতা উৎপাদন করা সম্ভব বলে তারা মনে করেন।

তারা বল‌ছেন, দেশীয় রেশম চাষিরা সুযোগ-সুবিধার অভাবে রেশম গুটি উৎপাদন করতে পারছেন না। কারণ হিসেবে প্রান্তিক চাষিরা অপর্যাপ্ত ঋণসুবিধা ও সরকারের অবহেলাকেই দায়ী করেন।

বাংলাদেশ রেশম বোর্ডের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও রেশমের সমস্যাগুলোর সত্যতা স্বীকার করেছেন। তারা জানান, রেশমের গুটি ও সুতার অভাবে ব্যক্তি মালিকানার কারখানা বন্ধে রেশম কাপড়ের উৎপাদন হুমকির মুখে রয়েছে। তবে রেশম বোর্ড ও সরকার বিরাজমান সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছে।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্টিজ এর সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান মনি ব‌লেন, রাজশাহীকে বলা হয় রেশম শিল্প নগরী । এই শিল্পকে বাচাঁতে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে  সুতা উৎপাদনের উদ্যোগে নিতে হবে। সুতার উৎপাদন বাড়াতে  প্রযুক্তির প্রয়োগ, চাষি পর্যায়ে গুটি বিক্রি ও ঋণের ব্যবস্থা নেয়ারও আহবান জানিছেন তি‌নি।