ইতিহাসের মাত্র দ্বিতীয় দল হিসেবে বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে পেনাল্টিতে জয় পেয়েছে ক্রোয়েশিয়া। ১৯৯০ বিশ্বকাপে প্রথম এমন জয় পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। শেষ ষোলোর ম্যাচে ডেনমার্ক ও কোয়ার্টার ফাইনালে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পেনাল্টিতে জিতে সেমিফাইনালে উঠেছে ক্রোয়েটরা।
গ্রুপপর্বে বিশ্বকাপের শুরুটা দুর্দান্ত করলেও ক্রোয়েশিয়ার সেই ধার নকআউটপর্বে দেখা যায়নি। বরং শেষ দুই ম্যাচে তাদের পারফরম্যান্সের আগুনে তাপ অনেকটা কমই মনে হয়েছে। ক্রোয়েটদের সামগ্রিক পারফরম্যান্সও ‘সম্ভাব্য বিশ্বকাপজয়ীদের’ মতো দেখায়নি।
দলের ২৩ জনের স্কোয়াডের ১৪জনই ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে খেলেন। ইংল্যান্ড, স্পেন, ইতালি, জার্মানি ও ফ্রান্সে খেলেন তারা। এর মধ্যে লুকা মদ্রিচ, মাতেও কোভাচিচ রিয়াল মাদ্রিদে, ইভান রাকিটিচ বার্সেলোনা, মারিও মানজুকিচ খেলেন জুভেন্টাসে। কিন্তু এসব খেলোয়াড়রা শেষ দুই ম্যাচে নির্ধারিত সময় তো বটেই, অতিরিক্ত সময়েও প্রতিপক্ষের গোলমুখ খুলে দলের জয় আনতে পারেননি। অনেকটা ভাগ্যের উপর ভর করে জিততে হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ পেনাল্টি শটে।
তবে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে পারফরম্যান্সের হারানো আগুনটা ফেরাতে মরিয়া ক্রোয়েশিয়া। সেই আগুন ফিরিয়ে ‘ঋণ শোধ’ করতে চায় তারা। তেমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন দলের সেরা তারকারা।
ক্রোয়েশিয়া দলের অধিনায়ক লুকা মদ্রিচ বলেছেন, ‘আমরা সময়টা উপভোগ করছি। আমরা ইংল্যান্ডের জন্য তৈরি।’ আর শেষ চারে জায়গা করে নেয়ার অন্যতম রূপকার বার্সেলোনা মিডফিল্ডার ইভান রাকিতিচের বক্তব্য, ‘আমাদের পারফরম্যান্স যথেষ্টই উজ্জ্বল। আশা করছি আমরা দূরে যেতে পারব।’
দলের রক্ষণভাগের অন্যতম নির্ভরতা প্রতীক লিভারপুল ডিফেন্ডার ডেজান লভরেন বলেছেন, ‘ইংল্যান্ড বড় দল। তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে। তবে এ মুহূর্তে ফুটবল খেলাটা আমরা দারুণভাবে উপভোগ করছি। আশা করছি আমরা ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারব।’
স্বাধীনতার পর দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের শেষ চারে পৌঁছাতে সমর্থ হয়েছে ক্রোয়েশিয়া। টানা দুই ম্যাচেই টাইব্রেকারে জেতা প্রসঙ্গে মদ্রিচের ভাষ্য, ‘এটা ছিল আমাদের জন্য আরেকটা নাটক। প্রথমার্ধে আমরা ভালো খেলিনি। তবে বাকি সময় ম্যাচে আমরাই নিয়ন্ত্রণ করেছি। কিন্তু এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক, ম্যাচটা আমরা শেষ করে আসতে পারিনি।’
তার আরও সংযোজন, ‘ বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচই আসলে এমন কঠিন। যথেষ্ট পরিশ্রম করেই জিততে হয়। এখন সময়টা আমাদের উপভোগ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রস্তুতির জন্য আমরা কিন্তু ইংল্যান্ডের চেয়ে কম সময় পাচ্ছি।’
১৯৯৮ বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান লাভ করেছিল ক্রোয়েশিয়া। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে তারা হেরেছিল স্বাগতিক ফ্রান্সের কাছে। ২০১৬ ইউরোতে শেষ ষোলোর লড়াইয়ে পর্তুগালের কাছে হার মানে ক্রোয়েটরা।
তবে এবার ভিন্ন কিছুই ঘটবে বলেই আত্মবিশ্বাসী মদ্রিচ, ‘২০ বছর আগে সেমিতে ওঠাটা ছিল আমাদের জন্য খুব বড় একটা গর্বের ব্যাপার। তবে দুবছর আগে ইউরোতে ভাগ্য আমাদের সঙ্গে ছিল না। এবারের বিশ্বকাপ আমাদের জন্য সেই ঋণ পরিশোধের।’
টাইব্রেকারের জয় নিয়ে কিছু ভাবছেন না রাকিটিচও। দল এখনও শিরোপা রেসে আছে এটাকেই বড় করে দেখছেন বার্সা মিডফিল্ডার, ‘আমি বলব আমরা পরিশ্রমের ফল পেয়েছি। আমাদের ওপর ভীষণ চাপ ছিল, আর আমরা তা জয় করেছি। ১৯৯৮-এ কী ঘটেছিল, সেটা নিয়ে আমরা ভাবছি না। আমরা ইতিবাচক মানসিকতা নিয়েই মাঠে নামব। আমরা নিজেদের হাতেই ইতিহাস লিখতে চাই।’
সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারানোর ব্যাপারেও আত্মবিশ্বাসী রাকিটিচের মন্তব্য, ‘এবার ভালো কিছু করার জন্য আমরা পাগলের মতো খেটেছি। আশা করি তাদের হারানোর ক্ষমতা আমাদের আছে। চিরকালই আমরা বড় দলের বিরুদ্ধে খেলতে ভালোবাসি। তাই ইংল্যান্ডকে ভয় পাওয়ার প্রশ্নই নেই।’