নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে গিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা হামলার শিকার হচ্ছেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তার জবাবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বলছে: এটি পুরনো কথা, নতুন করে বলা হচ্ছে। তাদের এমন অভিযোগ দলটির চিরাচরিত অপরাজনীতির অংশ।
মঙ্গলবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটি দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান।
আনুষ্ঠানিক বক্তব্য শেষ হলে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ সংক্রান্ত প্রশ্ন করা হলে তার জবাবে আবদুর রহমান বলেন: এটি আসলে পুরনো কথা, নতুন করে বলা হচ্ছে। তারা বলছে সারা দেশে হামলা চালানো হচ্ছে। অথচ সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ কিংবা কার ওপর হামলা হয়েছে, কোন জায়গায় হামলা হয়েছে এ ব্যাপারটি কিন্তু তারা আনতে পারে নাই। এটা তাদের (বিএনপি) মিথ্যাচার রাজনীতিরই একটা অংশ। সেটি সফল করতেই বিএনপি এ ধরনের অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। আপনাদের (সাংবাদিক) বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানাবো।
লিখিত বক্তব্যের শুরুতে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে। বলা হয়: একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে সারাদেশে আওয়ামী লীগের এক অভূতপূর্ব জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশজুড়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের গণপদত্যাগ এবং আওয়ামী লীগে যোগদান চলছে। বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্ট নেতারা এতে করে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে মিথ্যাচার এবং অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন। নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে তারা এখন পরিকল্পনামাফিক নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার বিভিন্ন অজুহাত খুঁজছে।
বিএনপি তাদের অপরাজনীতির ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়: আমরা দেখেছি এই দলটি বিভিন্ন মামলায় দণ্ডিত প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়ে প্রার্থী করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। পবিত্র নির্বাচনকে কলুষিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। জিয়াউর রহমান পবিত্র সংবিধান এবং সেনা আইন লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছিল। সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে বিএনপি খুন-দুর্নীতির অপরাজনীতির ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে।
জাতির দুর্ভাগ্য এই যে বিএনপির অপরাজনীতিকে বাংলাদেশে স্থান করে দিতে ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন ড. কামাল হোসেনের মত নীতিভ্রষ্ট রাজনীতিকরা। যিনি দেশের মানুষকে সুস্থ রাজনীতির এবং আইনের শাসনের জ্ঞান বিতরণ করেন।
খালেদা জিয়া ও দণ্ডপ্রাপ্তদের মনোনয়ন দিয়ে বিএনপি নির্বাচনকে কলুষিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অভিযোগ করা হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। বলা হয়: এদের মুখোশ এখন জাতির কাছে উন্মোচিত হয়েছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে জনগণ তা তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অশ্রুসজল নয়নে জাতির সামনে বলেছিলেন, তারা তাদের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়াই এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। তিনি জানতেন বিএনপি যতভাবেই বিএনপি খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করুক না কেন, তিনি আদালতের চোখে এতিমের টাকা আত্মসাৎকারী দুর্নীতিবাজ। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
এ প্রসঙ্গে সংবিধানের উদ্ধৃতি তুলে ধরে বলা হয়: বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি নৈতিক স্খলনের কারণে ফৌজদারি দায়ে দুই বছর কিংবা তার অধিক সময় দণ্ডিত হলে তার সাজা শেষ হওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর সব দেশেই দণ্ডিত ব্যক্তিদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে বিধিনিষেধ রয়েছে। এসব জেনেও ড. কামাল হোসেন এবং বিএনপি নেতারা বিভিন্ন অপকৌশল অবলম্বন করছেন। বিএনপি তার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেশের জনগণের মাঝে সহানুভূতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা প্রকৃত অর্থে নির্বাচনকে কলুষিত করতে চাইছে।
অপচেষ্টা থেকে ফিরে এসে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ফিরে আসতে সংবাদ সম্মেলন থেকে এ সময় আহ্বান জানানো হয়। বলা হয়: বিএনপির উচ্চ আদালতকে বিভ্রান্ত করার প্রয়াসে খালেদা জিয়ার পক্ষে উচ্চ আদালতে তিনটি রিট পিটিশন দায়ের করেছিল। সংবিধান মেনে বিচারকরা ওই রিটগুলো বাতিল করে দেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো হাইকোর্টের রায় নিয়ে বিএনপির তার চিরাচারিত মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছে। এ সকল অপচেষ্টা থেকে বের হয়ে দেশের সংবিধান, সর্বোচ্চ আদালত এবং নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থাশীল হয়ে নির্বাচনী কাজে তাদের অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
এ সময় বুধবার টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারতের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর কথা জানানো হয়। পরদিন সড়ক পথে ফেরার সময় ফরিদপুর ভাঙা থেকে সাভার পর্যন্ত একাধিক পথসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখবেন।