মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সব সময় সরব অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলার সংবাদ প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এই হত্যা চেষ্টার সমর্থনকারীদের অবিলম্বে সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন দেশ বরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার।
শনিবার জাফর ইকবালের হত্যা চেষ্টার খবর প্রকাশের পর ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে অনেকেই হামলাকারীকে ‘বীর’ বলে আখ্যায়িত করে মন্তব্য করে। এমনকি কেউ কেউ হত্যা চেষ্টায় বাহবা ও সমর্থনের পাশাপাশি জাফর ইকবালের জানাজা পড়ারও ঘোষণা দেয়।
এই ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে তথ্য-প্রযুক্তি আইনে আওতায় আনার আহ্বান জানান রামেন্দু মজুমদার।
সোমবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে তিনি এ আহ্বান জানান।
সামাজিক মাধ্যমে ধর্মান্ধ মানসিকতা এবং হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন দেয়াদের আইনের আওতায় আনা হয় না কেন? এমন প্রশ্ন রেখে রামেন্দু মজুমদার বলেন, ফেসবুকে জাফর ইকবালের ওপর হামলাকে সমর্থন করে মন্তব্য করা হচ্ছে। যে হামলা করেছে তাকে ‘বীর’ বলছে তারা। জাফর ইকবালের জানাজা পর্যন্ত পড়ানোর প্রকাশ্য আস্ফালন চলছে সামাজিক মাধ্যমে।
‘কারা এসব পোস্ট করছে, মন্তব্য করছে? তাদেরকে কেন আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না? অথচ সরকারের কোনো শীর্ষ ব্যক্তির বিরুদ্ধে কিছু লেখা হলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। জাফর ইকবালের হত্যা চেষ্টাকে সমর্থন করাদের দেশের সাইবার আইনে আটক করা যেতে পারে না? অবশ্যই পারে। এই কাজটি করা প্রয়োজন। তা না হলে এদের সাহস বেড়ে যাবে এবং এরকম হামলার পর প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন নিয়ম হয়ে দাঁড়াবে।’
জঙ্গিবাদী, ধর্মান্ধ মানসিকতার গোষ্ঠী ছাড়া দেশে জাফর ইকবালের কোন শত্রু নেই, মন্তব্য করে বর্ষীয়ান এই সংস্কৃতিকর্মী বলেন, হামলাকারী পুলিশের কাছে বলেছে, “জাফর ইকবাল তার লেখায় ইসলামের অবমাননা করেছে। কিন্তু সে তার লেখা পড়েনি, কারও আদেশে এই চেষ্টা করেছে।” এরকম আদেশ কোথা থেকে এলো তা আমাদের জানা দরকার। কোথায়, কারা এই জঙ্গিবাদী কুশিক্ষায় কুশিক্ষিত হচ্ছে এবং করছে, সেসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি।
সাম্প্রদায়িকতার লালন এবং বিচারহীনতার ধারাবাহিকতায় জাফর ইকবালের ওপর হামলার মতো ঘটনা ঘটছে জানিয়ে তিনি বলেন, গত চার বছরে ব্লগার, লেখক, প্রকাশক হত্যাকাণ্ডগুলোর কোনটিরই দৃশ্যমান বিচার এখনো হয়নি। এজন্য হামলাকারীদের সাহস বেড়ে চলেছে। তাই জাফর ইকবালের মতো মানুষ, যিনি বাংলাদেশের বিবেকের কণ্ঠস্বর তিনি হত্যা চেষ্টার শিকার হন। তাকে হত্যা চেষ্টা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের আত্মাকে হত্যার চেষ্টা।
নির্বাচনকে সামনে রেখে অপচেষ্টার অংশ এই হামলা
সকাল ১১টার দিকে শুরু হওয়া এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে জাফর ইকবালের হত্যা চেষ্টাকে ‘কায়েমী স্বার্থ’ পূরণের চেষ্টা বলে মন্তব্য করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও ১৯৭১ সালে শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে অগণিত মানুষের মনে গান গেয়ে সাহস যোগানো দলের অন্যতম সদস্য তারিক আলী।
জঙ্গিবাদী, ধর্মান্ধ চেতনার প্রতি ঘৃণা জানিয়ে তিনি বলেন: দেশ এখন একটি সন্ধিক্ষণে পৌঁছেছে। সামনে নির্বাচন, এই নির্বাচনকে ঘিরে অনেক কায়েমী স্বার্থবাদীরা অনেক রকম কাজে তৎপর হচ্ছে। এই হামলা সেসবেরই একটি অংশ বলে মনে করি। দেশকে অস্থিতিশীল করার একটি চক্রান্ত এটি।
তারিক আলী আরও বলেন: জাফর ইকবাল বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীদের মনে মুক্তিযুদ্ধের বীজ বুনেছেন তাই তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের পরম সম্পদ। এই সম্পদের ওপর চালানো হামলার প্রকৃত বিচার হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে এটাই আমাদের দাবি।
মানববন্ধনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মানবাধিকার কর্মী খুশি কবীর, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ,কার্যনির্বাহী সদস্য ড. সরোয়ার আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আজিজুল হক, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের ঢাকা মহানগর সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।