বাংলাদেশ দলের কোচিং স্টাফদের বড় অংশ শ্রীলঙ্কান। হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, ফিটনেস ট্রেনার মারিও ভিল্লাভারায়ন, ব্যাটিং পরামর্শক থিলান সামারাবীরা। এর আগে স্পিন কোচ হিসেবে কাজ করে গেছেন রুয়ান কালপাগে। দুর্ভাগ্য কালপাগের, শিষ্যদের ঐতিহাসিক সাফল্যের দিন কোচ হিসেবে গর্বিত হতে পারলেন না। ছুটিতে গিয়ে হঠাৎ বেতন-ভাতা বাড়ানোর অন্যায্য দাবি তুলে বুঝিয়ে দেন বাংলাদেশে আর ফিরতে চাচ্ছেন না তিনি। বাধ্য হয়েই তাকে বিদায় জানায় বিসিবি।
বাংলাদেশ দল প্রথম টেস্ট খেলতে গল স্টেডিয়ামে পা রাখতেই ক্রিকেটারদের সঙ্গে দেখা করতে ছুটে গিয়েছিলেন কালপাগে। মুশফিক-সাকিবদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন হয়তো অনুশোচনা থেকেই। ওভাবে বিদায় নেয়া যে মোটেও ঠিক হয়নি তার! কলম্বোয় দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশের মহাকাব্যিক জয় নিশ্চয়ই আফসোস বাড়ালো তার, এমন দলটার সঙ্গে যে থাকা হলো না।
তারপরও তো বাংলাদেশের সাফল্যের পেছনে অবদান ওই লঙ্কান কোচদেরই। শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়ার আগে মিরপুরে হাথুরুসিংহে ও সামারাবীরাকে দেখা গেছে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি সিরিয়াস। প্রত্যেকটা ব্যাটসম্যানকে নিয়ে আলাদা করে কাজ করেছেন। অনুশীলনের প্রত্যেকটা সেশনে বাড়তি সময় ব্যয় করেছেন খেলোয়াড়দের পেছনে। আবেগ দেখা গেছে তাদের চোখেমুখে।
কোচ পরিচয়ে নিজ দেশে প্রথম সফরে সাফল্য পেতে মরিয়া ছিলেন হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। আজ তার খুশির দিন। পেরেছে শিষ্যরা। শততম টেস্টকে জয়ের উৎসবে রাঙিয়েছেন সাকিব-তামিম-মুশফিকরা। এসেছে ৪ উইকেটের গর্বের জয়। পাঁচটি দিনই লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কার চেয়ে এগিয়ে ছিল টাইগাররা।
শ্রীলংকা দলে খেলা সাবেক এই ক্রিকেটার নিজ দেশের সহকারী কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন কিছুদিন। ওই সময় শ্রীলংকান ক্রিকেট বোর্ড এবং খেলোয়াড়দের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ার কারণে চাকরি হারান তিনি। চাকরি খুঁজতে থাকেন। চাকরি জোটে অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানেই স্থায়ী নিবাস গড়েন। ২০১৫ সালে হেড কোচ হিসেবে যোগ দেন বাংলাদেশ দলে। সেই থেকেই একের পর এক সাফল্যের পথে হাঁটা শুরু বাংলাদেশের। প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই বাংলাদেশকে তুলে দেন বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে। এরপর ঘরের মাঠে টানা তিন ওয়ানডে সিরিজ জয়। গত বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয়। এবার বাংলাদেশের শততম টেস্ট ম্যাচে জয় এলো হাথুরুসিংহের দেশ শ্রীলঙ্কায়।
বাংলাদেশের কোচ হিসেবে শ্রীলঙ্কায় পা রাখার পর থেকেই সে দেশের মিডিয়ায় আলোচনার তুঙ্গে হাথুরুসিংহে। কোচ হিসেবে তার উত্থান, তার সঙ্গে শ্রীলংকা ক্রিকেট বোর্ডের অতীত আচরণ এবং তার বর্তমান অবস্থা নিয়ে লেখালেখি হয়েছে অনেক। শ্রীলংকা থেকে প্রত্যাখ্যাত এই কোচ মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে হারাক, প্রমাণ করুক সামর্থ্যের।
শততম টেস্ট শুরুর আগে হাথুরুসিংহে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ যদি শ্রীলংকাকে হারাতে পারে, তাহলে এটা হবে অনেক বড় একটি অর্জন। হ্যাঁ আমাকে এখান থেকে (শ্রীলংকান ক্রিকেট) সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। এবং সত্যিই আমি দেশের হয়ে ক্রিকেটে ভূমিকা রাখতে পারিনি বলে খুব হতাশ। তবে আমি এখন যা করছি এটা নিয়ে খুবই খুশি।’ হাথুরুর মতো কোচ পেয়ে খুশি বাংলাদেশও।