চক্রাকার বাস সার্ভিস, ওয়াটার ট্যাক্সি, ভাসমান অ্যাম্ফিথিয়েটার এবং মিউজিক্যাল ড্যান্সিং ফাউন্টেনের পর রাজধানীর অন্যতম বিনোদনের স্থানে পরিণত হওয়া হাতিরঝিলের ভিতরে এবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে একটি অত্যাধুনিক অপেরা হাউজ কমপ্লেক্স।
বৃহস্পতিবার গণভবনে এই প্রকল্পের নকশা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে উপস্থাপন করেন স্থপতি প্যাট্রিক ডি রোজারিও। এসময় সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সংস্কৃতি সচিব ইব্রাহিম হোসেন খান এবং শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী এসময় উপস্থিত ছিলেন।
হাতিরঝিলে অপেরা হাউজ করার পরিকল্পনার কথা গত বছরই জানিয়েছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন। আন্তর্জাতিক মানের এই অপেরা হাউজে দেশি-বিদেশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেছিলেন, হাতিরঝিলে একটি দ্বীপ তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে লন্ডনের টেমস নদীর তীরে নির্মিত ‘লন্ডন আই’ নামের ‘অবজারভেশন হুইলের’ আদলে নির্মিত হবে ‘ঢাকা আই’।
অপেরা হাউজ প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন মেজর জেনারেল আবু সাইয়িদ মো. মাসুদ। অপেরা হাউজের পর হাতিরঝিলে ভাসমান রেস্তোরাঁ, ব্যাটারিচালিত ওয়াটার স্কুটার চালু এবং বহুতল গাড়ি পার্কিং নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের।
২০০৭ সালে হাতিরঝিল সংস্কার প্রকল্প শুরু হয় রাজধানীর পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি, যানজট ও জলাবদ্ধতা নিরসন এবং পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে। ৩০২ একর জামির ওপর গড়ে ওঠা এ প্রকল্প এলাকায় মোট ১৬ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এটি এখন রাজধানীবাসির বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
একই দিনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের স্থাপত্য প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করা আধুনিক জাতীয় জাদুঘর ও পাবলিক লাইব্রেরির সমন্বিত প্রকল্পের নকশাও দেখেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বের বিখ্যাত নাগরিক কেন্দ্রগুলোর মতোই উন্মুক্ত অথচ নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে, এমন ডিজাইন দিয়ে প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান করে নেয় ডিকন কিউব জে ভি। স্থপতি খন্দকার আশিফুজ্জামান রাজন এবং আবু আনাস ফয়সাল এই প্রকল্পের নকশা করেছেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর সামনে ১০ মিনিটের ভিডিওচিত্রে পুরো নকশা উপস্থাপন করেন।
এ বিষয়ে স্থপতি আবু আনাস ফয়সাল চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, প্রায় ঘণ্টাব্যাপী উপস্থাপনার পুরোটা সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী নকশার খুঁটিনাটি বিষয় বুঝে নেন। নকশার সামনের অংশে পানি রাখার পরিবর্তে সবুজ গাছ রোপন ও সিজনাল বাগান করার পরামর্শ দেন তিনি।
নিজেদের স্থাপত্য পরিকল্পনা এবং ডিজাইনের পেছনের ভাবনা বিষয়ে তিনি বলেন, শাহবাগ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এখানে বিপুল সংখ্যক ঢাকাবাসীর মনন চর্চার সুযোগ আছে। অথচ জাদুঘর চত্বরটি দেয়াল দিয়ে ঘেরা। তাই নাগরিকদের জন্য জায়গাটি উন্মুক্ত করার চিন্তা করেছি আমরা। বিশ্বের প্রায় সব মিউজিয়ামের বাইরের জায়গাটিতে নাগরিকদের উন্মুক্ত বিচরণ দেখা যায়। তবে নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই উচুঁ দেয়াল না দিয়ে কিভাবে বিকল্পভাবে নিরাপত্তা বলয় গড়া যায় তা নিয়ে আমরা ভেবেছি।
শাহবাগ, ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, চারুকলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, টিএসসি, বাংলা একাডেমি এমন স্থাপনাগুলোর সমন্বিত একটি সাংস্কৃতিক বলয় গড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জাতীয় জাদুঘর এবং পুরোনো পাবলিক লাইব্রেরির আধুনিক কমপ্লেক্সের ডিজাইন বাছাইয়ের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় স্থাপত্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলো।
সেই প্রতিযোগিতায় জমা পড়া ডিজাইনগুলো থেকে ডিকন কিউব জে ভির ডিজাইনকে সেরা নির্বাচিত করে ইন্সটিটিউট অব আর্কিটেক্টস। ডিকেন কিউব জে ভির অন্যতম প্রতিষ্ঠান ডিকন ডিজাইন স্টুডিওর অন্যতম স্থপতি রাকিবুল আলমও এই নকশায় অবদান রাখেন।