‘‘হাতটা এমন হলো কেন, হাতটা সোজা করে দাও, হাতে অনেক ব্যথা করছে”- এভাবেই দুপুরে নিজের কষ্টের কথাগুলো খালা জাহানারা বেগমকে বলছিল মঙ্গলবার দুই বাসের চাপায় ডান হাত হারানো সরকারী তিতুমীর কলেজের ডিগ্রীর তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রাজিব হোসেন (২২)।
বুধবার বিকালে রাজিব হোসেনকে শমরিতা হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ(ঢামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সযোগে স্বজনরা রাজিবকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসে।
বিকাল সাড়ে চারটায় ঢামেকের জরুরী বিভাগে তাকে কিছুক্ষণ রাখার পর হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের ইউনিট ১ এর ১০১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
বিকেলে ঢামেকের জরুরী বিভাগে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় রাজীবের মামা জাহিদুল ইসলামের। তিনি বলেন, রাজীব অনেক দুস্থ ঘরের সন্তান, ওর পড়ালেখার খরচ খালারা বহন করত। গত ষোল ঘণ্টায় আমাদের দুই লাখের কাছাকাছি টাকা খরচ হয়ে গেছে। আমাদের এখন আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। কোন সহৃদয়বান ব্যক্তিবর্গ সহায়তায় ইচ্ছুক হলে অগ্রণী ব্যাংকের যাত্রাবাড়ি শাখায় মেঝখালা খাদিজা বেগমের অ্যাকাউন্টে পাঠানোর অনুরোধ করা হলো। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বার ০২০০০০২১১৪৮৩২।
হাতটা ভেঙ্গে গেলেও তো রাজীবের এতো কষ্ট হতো না জানিয়ে খালা জাহানারা বেগম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ও অনেক ব্যথা পাচ্ছে, রাজীব আমাকে বলেছে হাতটা এমন হলো কেন, হাতটা সোজা করে দাও, হাতটা অনেক ব্যথা করছে”।
তিনি বলেন, ছোট বেলায় বাবা মাকে হারানো রাজীবকে নিজের সন্তানের মতো করেই মানুষ করেছি। আমার সঙ্গে ফকিরাপুলেই ও থাকত, বছর দুয়েক আগ থেকে যাত্রাবাড়ির মেসে থাকা শুরু করে।
বিআরটিসি ও স্বজন বাস কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে কিনা জানতে চাইলে রাজীবের চাচা পুলিশ সদর দপ্তরের পরিদর্শক (ট্রেনিং) মো. আল-আমিন হোসেন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: থানা পুলিশ আমাদের জানিয়েছে বাস কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ দিতে ইচ্ছুক। কিন্তু মামলা হওয়ার কারণে এখন চাইলেও এভাবে ক্ষতিপূরণ নেওয়া সম্ভব না।
রাজীবের বর্তমান শারীরিক অবস্থা জানতে চাইলে ঢামেকের অর্থোপেডিক্স বিভাগের প্রধান মো. শামসুজ্জামান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ঘটনার পর রাজিব যে শক পেয়েছিলো তা কেটে উঠেছে। তবে তাকে শঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। শমরিতার চিকিৎসাপত্র দেখা হয়েছে ও আমাদের এখানে আনার পর চিকিৎসা শুরু হয়েছে।
অধ্যাপক শামসুজ্জামান আরো বলেন, রাজীবকে আপাতত ড্রেসিং ও পাশাপাশি উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।পরে তার প্লাস্টিক সার্জারি লাগলে তা করা হবে।
তিন ভাইয়ের মধ্যে রাজীব বড়, তার অন্য দুই ভাই মেহেদী হাসান (১৩) ও মো. আবদুল্লাহ (১১)। তারা দুজনেই রাজধানীর তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসার ছাত্র। পটুয়াখালীর বাউফলে রাজীবের জন্ম। তার বাবার নাম হেলাল উদ্দিন ও মাতার নাম নাসিমা বেগম। রাজীব ডিগ্রী করার আগে বরিশালের সরকারী ফজলুল হক কলেজ থেকে ইংরেজীতে স্নাতক পাশ করে। রাজধানীর ধোলাইখালে এক কম্পিউটারের দোকানে পড়াশুনার পাশাপাশি খন্ডকালীন কাজ করত রাজীব।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান চ্যানেল আই অনলাইনকে জানায়, রাজীব হোসেনের হাত বিচ্ছিন্ন করে নেওয়া সেই দুই বেপরোয়া বাসের চালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা দু’জন হল ওয়াহিদ ও খোরশেদ।
মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে রাজধানীর বাংলামটরের দিক থেকে ফার্মগেটমুখী একটি দ্বিতল বিআরটিসি বাস সার্ক ফোয়ারার কাছে পান্থকুঞ্জের পাশে সিগনালে থেমে ছিলো। সে বাসের পেছনের ফটকে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন রাজীব। খানিকবাদেই একই দিক থেকে আসা স্বজন পরিবহন নামের একটি বাস দ্রুতগতিতে এসে দ্বিতল বাসের বাঁ পাশের ফাঁক দিয়ে ঢুকে সামনে যাওয়ার (ওভারটেক) চেষ্টা করে।
দুই গাড়ি তখন টক্কর দিতে গেলে চাপে পড়ে ডান হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ফটকে দাঁড়ানো রাজীবের। হাতটি দ্বিতল বাসের সঙ্গে ঝুলছিলোও তখন। তাৎক্ষণিকভাবে রাজীবকে পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে নেওয়া হলেও হাতটি আর জোড়া দেওয়া যায়নি। মঙ্গলবারই রাজীবের অস্ত্রোপচার করা হয়।