আসাদুজ্জামান বাবুল, গোপালগঞ্জ:
প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের প্রথম ছয় লেন বিশিষ্ট সেতু নির্মাণ হচ্ছে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর কালনা ফেরিঘাটে।
গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার কালনা ফেরিঘাট মধুমতি নদীর উপর নির্মাণাধীন সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার ও প্রস্থ ২৭ দশমিক ১ মিটার। নির্মাণাধিন সেতুটির ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯শ’ ৬০ কোটি টাকা। জাইকার সহযোগিতায় ও দেশীয় অর্থে তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এ সেতু নির্মাণের কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারী এই সেতুটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন, আর ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। আগামী ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে সেতুটির ৩৫শতাংশ কাজ শেষ করেছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।
এই সেতুর স্টীল ফ্রেমের কাজ চলছে সুদুর ভিয়েতনামে। প্রতিদিন তিন শতাধিক শ্রমিকসহ অসংখ্য প্রকৌশলী এই সেতুর নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এটি নির্মাণের ফলে গোপালগঞ্জ, নড়াইল, খুলনা ও যশোর, বেনাপোলসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ বছরের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের প্রাণের স্পন্দন হয়ে উঠবে এই কালনা সেতু।
কালনা ফেরী পার হওয়া ট্রাক চালক কামাল মোল্লা ও খোকন ফলিয়ারা দারুণ খুশি এই সেতুর নির্মিত হচ্ছে বলে।
তারা বলেন, কালনা ফেরী ঘাট এই এলাকার একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘাট। এই ঘাট দিয়ে বেনাপোল যশোরসহ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের যাতায়াতের শর্টকাট রাস্তা। এই পথ দিয়ে প্রায়ই আমাদের যাতায়াত করতে হয়। এই ঘাটে ফেরির অবস্থা তেমন একটা ভালো নয়। পারাপারের সময় ভীড় লেগেই থাকে। প্রায়ই ঘাটে এসে বসে থাকতে হয়। এখানে এমন একটা সেতু নির্মিত হচ্ছে, তাই আমরা আনন্দিত। ব্রীজ তৈরীর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই ও ব্রীজের কাজটি যেন সময় মতো শেষ হয় সে জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
কালনা ঘাট দিয়ে যাতায়াত করা শংকরপাশা গ্রামের ব্যবসায়ী মশিউর রহমান, মুকসুদপুরের উপজেলার সরদার মুজিবুর রহমান ও লক্ষীপাশা গ্রামের শেফালী বেগম সাথে কথা হলে তারা বলেন, কালনাঘাটে এসে কখনো নৌকা আবার কখনো ফেরীতে পারাপার হতে হয়। তাতে অনেক সময় লাগে। ব্রীজ হলে আমাদের ঘাটে এসে আর বসে থাকতে হবে না। আমরা চাই শীঘ্রই ব্রীজটি তৈরী হোক। আমাদের কষ্টের কথা চিন্তা করে কালনায় ব্রীজ তৈরীর জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
কাশিয়ানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, সেতুটি নির্মিত হলে গোপালগঞ্জ, নড়াইল, খুলনা ও যশোর অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ বছরের স্বপ্ন পূরণ হবে। এই রাস্তায় চলাচলকারী লাখ লাখ যাত্রী সাধারণের ঢাকার সাথে যোগাযোগ সহজ হবে। সেই সাথে দীর্ঘ বছরের অসহনীয় দুঃখ-দুর্দশা থেকে রেহায় পাবে এই ঘাট দিয়ে চলাচলকারিরা। তাদের আর ঘন্টার পর ঘন্টা ফেরী ঘাটে বসে থাকতে হবে না। শুধু তাই নয়, কালনা সেতু নির্মান হলে বেনাপোল-ঢাকা মহাসড়কটি দিয়ে বেনাপোল স্থল বন্দরের সাথে ঢাকার দূরত্ব কমে আসবে। বেনাপোল স্থল বন্দর থেকে আমদানী-রফতানী পন্য সরাসরি পদ্মা সেতু হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহনে সুবিধা পাবে ব্যবসায়ীরা। যাত্রী সাধারণও কোন ভোগান্তি ছাড়া যাতায়াত করতে পারবেন।
কালনা ফেরী ঘাট ইজারাদার মঞ্জুর হাসান বলেন, আর বেশী দিন যাত্রীদেরকে ভোগান্তি পোহাতে হবেনা। খুব তাড়াতাড়ি তারা এই সেতু পার হয়ে এবং পদ্মা সেতু দিয়ে রাজধানীতে স্বল্প সময়ের মধ্যে যাতায়ত করতে পারবেন।
কালনা সেতুর সহকারী প্রকল্প পরিচালক ও সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন জানান, ছয় লেনের এ সেতু হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। চারটি মূল লেনে দ্রুতগতির এবং দুটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচল করবে। সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬শ ৯০ মিটার ও প্রস্থ ২৭ দশমিক ১ মিটার। উভয় পাশের অ্যাপ্রোচ সড়ক হবে ৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার। সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯শ ৬০ কোটি টাকা।
তিনি আরো জানান, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে এ সেতু নির্মিত হচ্ছে। জাপানের টেককেন কর্পোরেশন, ওয়াইবিসি ও বাংলাদেশের আব্দুল মোনেম লিমিটেড যৌথভাবে এই সেতুর নির্মাণ কাজ করছে। কালনা সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে পাল্টে যাবে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান, আর সেই সাথে বেনাপোল-ঢাকা মহাসড়ক পথে অল্প খরচে পণ্য পরিবহনে সুযোগ পাবে আমদানী-রফতানীকারকরা।