চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

হাওর এলাকায় ফখরুল, ইস্যু ও আতংকবাজী

হাওরের বাঁধের বরাদ্দ আত্মসাত বিএনপিকে একটি ইস্যু তুলে দিল। আরও নতুন ইস্যু তুলে দিল মির্জা ফখরুলের আগমন উপলক্ষে মোহনগঞ্জে বিএনপি অফিস ভাঙচুরকারীরা। তাদের বক্তব্য, দেশে গণতন্ত্র নেই বিএনপির জনমতে ভীত সরকার দেশজুড়ে জবরদস্তি চালাচ্ছে। বিএনপির এই বক্তব্যকে জনগণের সামনে দৃশ্যমান উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরল মোহনগঞ্জে বিএনপি অফিস ভাঙচুরকারীরা। এই ভাঙচুর কেন করলো, কার ইন্ধনে করল?

চরহাইজদা বাঁধে বারবার বরাদ্দ লুটপাট হচ্ছে। এই বাঁধের কার্যক্রম দেখাশোনা করা কি সরকারী কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ছিল না? কী দায়িত্ব পালন করল জনপ্রতিনিধিগণ? কী দায়িত্ব পালন করল পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসন? মামলা হল পিআইসি কমিটির ৬ জনের নামে। ৬ জনের নামের তালিকা:(১) কিরন আক্তার (২) গোলাম মোস্তফা (৩) মুর্শেদ আলম রঞ্জুল (৪) ডলি আক্তার (৫) রফিক (৬) আবুল ইসলাম।

পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির ঢলে কয়েক সপ্তাহ আগে বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে হাওড় এলাকা ডুবে যায়। এতে সেখানে থাকা ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়।

অাসামীদের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, একজন জনপ্রতিনিধি, একজন বিএনপি নেতা,একজন গৃহিনী ও দুজন এলাকাবাসী। সরকার বরাদ্দ দিল, বরাদ্দের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিয়ে সরকারী কর্তৃপক্ষ কী দায়িত্ব পালন করল? পত্রিকার রিপোর্টে জানানো হল, এক পরিবারের তিনজন পিআইসি কমিটিতে। এমন একটি জনগুরুত্বপূর্ন কমিটিতে এক পরিবারের তিনজন কীভাবে অন্তর্ভুক্ত হল। এলাকায় কি অন্য কোন মানুষ ছিল না?

ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ, বরাদ্দ দিল আওয়ামী লীগের সরকার আর সেখানে বিএনপি নেতা কীভাবে অন্তর্ভুক্ত হল। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান উপাধী পেয়েছে। তারা মাসিক ১০,০০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছে। গৃহনির্মাণ,ব্যাংক ঋন,বিশেষ অনুদান,নাতি পুতিদের বিশেষ কোটায় চাকরীর সুযোগ,প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর হতে অনুদান আরও কত কী। দেশ স্বাধীন করেছে বলে হাজার হাজার মানুষের রুটিরুজির নির্ভর ফসলরক্ষা বাঁধের টাকা আত্মসাতের অধিকারও রয়েছে তার? অল্পকিছুদিন আগে সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধারা লিপ্ত হল কাদা ছোঁড়াছুঁড়িতে একের বিরুদ্ধে আরেক অভিযোগ আনল ভুঁয়ামোর। অবাধে চলল বাছাইয়ের নামে উৎকোচ বানিজ্য। যার প্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেল। এসব ব্যাপারে কী দায়িত্বপালন করল মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রনালয়?

পানির ঢল থামাতে বাঁধ তৈরীর ব্যর্থ প্রচেষ্টা

মোহনগঞ্জের চরহাইজদা ফসলরক্ষা বাঁধটির বরাদ্দ লুটপাট করল যে মুক্তিযোদ্ধা তার নাম গোলাম মোস্তফা। তিনি আবার ডেপুটি কমান্ডার। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা মোহন গঞ্জকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবীতে মানববন্ধন করল। এটি ঘোষিত হলে আরও বরাদ্দ আসবে আর লুটপাটের সুযোগ হবে জনগণ যদি তা ভাবে তা কি ভুল ভাবা হবে। চরহাইজদা ফসলরক্ষা বাঁধের বরাদ্দ আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত ডেপুটি কমান্ডার গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে তারা কী কোন ব্যবস্থা নিয়েছেন? এবিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কী বক্তব্য। মুক্তিযোদ্ধা হলে কি তার জন্য সরকারি বরাদ্দ আত্মসাতও বৈধ হয়ে যাবে?

চোখের সামনে পানি এসে সব ফসল ডুবে যাচ্ছে। অসহায়ভাবে দেখছেন সবাই।

বিএনপি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল হাওরের দুর্গত মানুষের পাশে গেলেন সহমর্মিতা জানাতে। এই দুর্গতিতে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিলেন তিনি ও তার দল বিএনপি? দূর্গত মানুষদের প্রতি সমব্যথী হলে বিএনপির কি উচিৎ ছিলনা চরহাইজদা ফসলরক্ষা বাঁধের অর্থ আত্মসাতে অভিযুক্ত বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের? অনুরূপ প্রশ্ন আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও। পিআইসি কমিটিতে থাকা তাদের দলীয় নেতা,কর্মীর বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলোনা? জেলা পরিষদের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হান্নান রতন বাদী হয়ে থানায় মামলাটি করেছেন। ৫ই মার্চ ২০১৭ইং তারিখে দায়ের করা এই মামলাটির নম্বর:০৫, ধারা:৪০৬/৪২০/৪২৭/৩৪ দন্ডবিধি।

ফসল ডুবে গিয়ে কৃষকদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে

হাওরের মানুষের বক্তব্যে চরম ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে জনপ্রতিনিধিদের প্রতি। ১৪এপ্রিল দৈনিক ভোরের ডাক শিরোনাম করেছে:কৃষকের পাশে নেই জনপ্রতিনিধিরা’এতে হাওরবাসীদের বক্তব্য এসেছে নিম্নরূপ:সরকারের পক্ষ হতে যদি কোন সাহায্যসহযোগিতা আসে তাহলে যেনো তা চেয়ারম্যান মেম্বারদের মধ্যে বিতরণ না করে সেনাবাহিনী বা বিজিবির মাধ্যমে বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়। তাহলে সাধারণ জনগন সাহায্য পাবে নইলে অন্যের পেটে যাবে’। বারবার সরকারি বরাদ্দ আত্মসাতের বাস্তবতা ও আত্মসাতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না গ্রহনের বাস্তবতাতেই সাধারন জনগনের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে এই আস্থাহীনতা।

সমকাল সহ আরও অন্যান্য সংবাদ পত্র ও সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রতিনিধিদের প্রতি জন অনাস্থার খবর বেরিয়েছে। রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে মানুষ নির্ভরতা খুঁজছে সেনাবাহিনীর কাছে। এই ব্যর্থতার দায় কি রাজনীতিকরা নেবেন, না এ হতে শিক্ষা নেবেন না? মীর্জা ফখরুল ইস্যু চর্চার জন্য যাক বা দূর্গত মানুষদের প্রতি টানে যাক এটা তার ব্যপার। ইস্যু চর্চা দূষণীয় হলে ইস্যু সৃষ্টি কি দূষণীয় নয়? কেন বরাদ্দ লুটপাট ঠেকানো হলনা? ফখরুল হাওর পরিদর্শন করে তার বক্তব্য দিলেই কি সরকারের পতন হয়ে যেতো? মোহনগঞ্জ পৌরসভা অফিসের সামনে সুনামগঞ্জের এক বিএনপি নেতা ও চেয়ারম্যানকে কেন লাঞ্চিত করা হল। এতে মানুষ কী বলছে? জনস্রোত ঠেকানোর জন্যই বুঝি আওয়ামী লীগের এই জবরদস্তি। মূল উদ্দেশ্য আতংক সৃষ্টি। হাওর পরিদর্শনে বাধা দেয়ায় জনগণ বিরূপই হয়েছে। জনগণকে বিরূপ করার দায় কার? রাজনীতিকদের প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হলেই অরাজনৈতিক অগণতান্ত্রিক সরকার আসার পথ সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক দলের গোয়ার্তুমি সবসময়ই নিজেদের জন্যই ক্ষতির কারণ হয়। ইয়াজ উদ্দীনকে দিয়ে বিএনপির ক্ষমতাবাজীর পরিণতিতেই ফখর উদ্দীন-মঈন উদ্দীনরা বিরাজনীতিকীকরণের সরকার দিয়ে দেশ শাসনের সুযোগ পায়। মাইনাস টু ফর্মুলা দিয়ে দুই নেত্রীকেই তারা গ্রেফতার করে। বিএনপি-আওয়ামী লীগের অনেক বাঘা বাঘা নেতা কারান্তরীণ ও নির্যাতনের শিকার হয়। জনতা চুপ থাকে। দেশ হতে রাজনীতি বিদায় নেয়। অধিকাংশ মানুষ রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে অভিযানে উল্লসিত হয়। ড.কামাল হোসেনের মত বিশিষ্টজনও এ সরকারকে আল্লাহর রহমত হিসেবে মূল্যায়ন করে।

ফসল ডুবে যাওয়ায় মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছেন কৃষক

 

জিয়া পুত্র তারেক রহমানকে দেশত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। সেই থেকে তিনি দেশের বাইরে অসুস্থ ও নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। তার এই নির্বাসিত জীবনের জন্য দায়ী আওয়ামী লীগের সরকার নয়। দায়ী ফখর উদ্দীন ও মঈন উদ্দীনের সরকার। বর্তমানেও মানুষ রাজনীতিকদের দিকে মুখ ফিরিয়ে সেনাবাহিনী মুখী হচ্ছে। ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও দূর্গত মানুষদের জন্য প্রেরিত বরাদ্দ বন্টনেও তারা রাজনীতিকদের উপরে ভরসা করছেন। হাওরপারে জনপ্রতিনিধিদের(যারা রাজনৈতিক দলীয় পরিচয়েই নির্বাচিত হয়েছেন) প্রতি সঞ্চারিত হচ্ছে প্রবল ক্ষোভ। এসব কি অরাজনৈতিক শক্তির উত্থানের পক্ষে সহায়ক নয়? ক্ষমতার মোহে গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ডই অগনতান্ত্রিক শক্তিকে স্বাগতম জানায়।গণতন্ত্র হেরে গেলে যে রাজনীতিও থাকবেনা ক্ষমতার অপব্যবহারকারীরা সেটা ভুলে যায়। এই ভুলে যাওয়াই হয় বিরাজনীতিকীকরণ প্রক্রিয়ার আবির্ভাবের সিঁড়ি। তাই নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনেই সকলকে গণতান্ত্রিক আচরণ করতে হবে। ত্যাগ করতে হবে ক্ষমতাবাজী কারণ গণতন্ত্রই হচ্ছে রাজনীতির মেইন সুইচ।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)