উজানের ঢলে নদ-নদীতে পানি বাড়ায় ফসলরক্ষা বাঁধ নিয়ে মারাত্মক শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনার হাওরের কৃষক। ইতিমধ্যে ফসল হারিয়ে দিশেহারা সুনামগঞ্জের কৃষকরা, তাদের কান্না ও আহাজারি উঠে আসছে গণমাধ্যমে। আর অনিয়ম-দুর্নীতি-অবহেলায় হাওরে দুর্বল বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
সুনামগঞ্জের হাওরে আকস্মিক বন্যার ফলে ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। সোমবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে হাওরে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরে কয়েকদিন আগে স্মারকলিপি দিয়েছে ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ সুনামগঞ্জ জেলা কমিটি। আর প্রধানমন্ত্রীও বিষয়টি নিয়ে বিশ্ব পানি দিবসের আয়োজনে কথা বলেছেন, তাগিদ দিয়েছেন বাঁধ নির্মাণের নামে দুর্নীতি বন্ধ করে পরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণে নজরদারি বাড়ানোর বিষয়ে।
করোনা মহামারির এই সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সারাবিশ্বে মারাত্মক খাদ্য সঙ্কট ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতি দেখা দিয়েছে। যা কমবেশি ধনী-গরীব সবদেশকেই বেশ সমস্যার মধ্যে ফেলেছে। কমবেশি প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। করোনাকালে দেশের কৃষিতে বেশ ইতিবাচক অবস্থা থাকায় খাদ্যদ্রব্যের দাম অনেকটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। দেশের ধান উৎপাদনের অন্যতম ক্ষেত্র হাওরে এবছর বড় ধরণের বিপর্যয়ে তার প্রভাব নিশ্চিতভাবে পড়বে দেশের বাজারে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, হাওরের সমস্যা কিন্তু নতুন নয়, আর প্রতি বছর বছর কোটি কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েও কেন অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না? স্থানীয় জনগণ ও বিশেষজ্ঞদের দাবি, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ এবারও নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি। অনেক জায়গায় অপরিকল্পিত ও অপ্রয়োজনীয় বাঁধের প্রকল্প নিয়ে সরকারি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। সঠিক তদারকির অভাবে কাজে অনিয়ম ও গাফিলতি হয়েছে। এসব অনিয়মের সঙ্গে অভিযুক্ত হচ্ছেন প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা।
জরুরি ভিত্তিতে আন্ত:মন্ত্রণালয়ের কমিটি গঠন করে হাওর বিষয়ে পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি। এছাড়া খাদ্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্দ্ধগতির বিষয়টি মাথায় রেখে সরকারি পর্যায়ে মজুত ও আমদানির প্রয়োজন আছে কিনা, সেটাও খতিয়ে দেখা যেতে পারে।