করোনার কারণে দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও বন্ধ। উচ্চ শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে অনলাইনে কোনোরকমে ক্লাস চললেও পরীক্ষা বন্ধ আছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) আবাসিক হল বন্ধ রেখে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের চূড়ান্ত পরীক্ষা নিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সুপারিশ করেছে। সে প্রেক্ষিতে শিক্ষা কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়ায় বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে প্রথমে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। পরে বিভিন্ন মেয়াদে ছুটি বাড়িয়ে সর্বশেষ ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ছিল। দেশের ইতিহাসে দীর্ঘ এ ছুটির পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৩১ মে থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য সবকিছু খুলে দেয়া হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি আজ আরেক দফায় ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
দেশে শীতকাল শুরু হবার ফলে করোনার প্রকোপ কিছুটা বেড়েছে। দেশে মোট আক্রান্ত ৫ লাখ ২ হাজার ১৮৩ জন এবং মারা গেছেন ৫ হাজার ৫৭৫ জন পুরুষ এবং ১ হাজার ৭৩৭ জন নারী। তবে সুস্থ হবার হার বেশ সন্তোষজনক। সবমিলিয়ে সুস্থ হওয়ার সংখ্যা ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৬৯৪ জন। এই পরিস্থিতির মধ্যে গত অক্টোবর মাস থেকেই দেশের অফিস-আদালত ও স্বাভাবিক জীবন কার্যক্রম একদম আগের মতো। বোঝার উপায় নেই যে দেশে করোনা নামের কোনো ভাইরাসের মহামারি আছে। অর্থনীতি ও মানুষের জীবন জীবিকার প্রয়োজনে এরকম হয়েছে বলে আলোচিত। শুধু শিক্ষা কার্যক্রমে শতভাগ স্থবিরতা।
গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের এক সভায় অনার্স ফাইনাল ও মাস্টার্সের পরীক্ষা সশরীরে নেওয়া ও অনলাইনে ইনকোর্স, মিডটার্ম, টিউটোরিয়াল পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে। শিক্ষার্থীদের থাকার কোনও ব্যবস্থা না করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছে প্রশাসন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পথে হাঁটতে শুরু করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯ সালের চতুর্থ বর্ষ স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) পরীক্ষা আগামী ২ জানুয়ারি ২০২১ তারিখ শনিবার থেকে অনুষ্ঠিত হবে বলে সোমবার (২১ ডিসেম্বর) ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রাজশাহীতেও শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে।
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের নানা প্রান্তের নানা জেলার শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করে, তাদের বেশিরভাগই আবাসিক হল নয়তো আশেপাশে মেস করে থাকে। এই যে আবাসিক হল না খুলে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত, তাতে যেসব সঙ্কট তৈরি হবে তা নিয়ে কেউ কি ভাবছে? কিছু ছাত্র সংগঠন ইতিমধ্যে প্রতিবাদ ও তাদের সম্ভাব্য অসুবিধার বিষয়গুলো তুলে ধরলেও প্রশাসন এখনও নিরব। আমরা মনে করি, পরীক্ষা যদি নিতেই হয় তবে নির্দিষ্ট কিছু সময় আগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আবাসিক হলগুলো খুলে দেয়া দরকার। যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে বলে আমাদের আশাবাদ।