সর্বাধুনিক থ্রিডি প্রিন্টারে প্রিন্ট করা আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলছে একটি হত্যা মামলার জট খোলার চেষ্টা। যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির (এমএসইউ) একদল শিক্ষক-শিক্ষার্থী এ কাজে পুলিশকে সাহায্য করছেন।
প্রথম আইফোন ৫এস-এ ফিঙ্গারপ্রিন্ট রেকগনিশন (আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে পরিচয় সনাক্ত করা) প্রযুক্তিতে স্মার্টফোন আনলক করার ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়। এরপর থেকেই প্রযুক্তিটি স্মার্টফোন নির্মাতাদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
কিন্তু এত নিরাপদ একটি প্রযুক্তিকেও যে চাইলে ধোঁকা দেয়া যায়, তার প্রমাণ এমএসইউ’র কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক অনীল জৈনের প্রকাশ করা একটি ইউটিউব ভিডিও। ভিডিওতে তিনি দেখান কীভাবে কনডাক্টিভ ইঙ্ক বা বিদ্যুৎ পরিবাহী কালি ব্যবহার করে কাগজে প্রিন্ট করা আঙ্গুলের ছাপের সামান্য ছবিকেই মালিকের আঙ্গুলের বদলে ব্যবহার করে ফোন আনলক করা যায়।
ওই ভিডিও দেখেই মিশিগানের একটি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট গত মাসে অনীল জৈন এবং তার গবেষক দলের সাহায্য চায় একটি হত্যাকাণ্ড মীমাংসার জন্য। হত্যাকাণ্ডটির কোনো কূল কিনারা করতে পারছিলো না পুলিশ। তাই আপাতত তাদের একমাত্র ভরসা নিহতের ব্যবহৃত স্মার্টফোন, যা তার আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে লক করা। পুলিশ আশা করছে, ফোনটি আনলক করা গেলে সেখান থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
অনীল অবশ্য জানিয়েছেন, এখনকার ফোনের ফিঙ্গারপ্রিন্ট রেকগনিশন প্রযুক্তি আগের চেয়ে আরও উন্নত। এগুলোতে শুধু অপটিক্যাল স্ক্যানার নয়, বিশেষ ধরণের ক্যাপাসিটারও যুক্ত করা হয়েছে, যা আঙ্গুলে থাকা সূক্ষ্ম খাঁজের ফাঁকগুলোর স্পর্শও সনাক্ত করতে পারে। এ কারণে শুধু কনডাক্টিভ ইঙ্কের কাগুজে প্রিন্ট দিয়ে নিহতের ফোনটি আনলক করা সম্ভব নয়।
তাই অনীলের নেতৃত্বে পরিচালিত দলটি শরণাপন্ন হয় এমএসইউ’র গবেষকদের ব্যবহৃত সর্বাধুনিক প্রযুক্তির থ্রিডি প্রিন্টারের। উন্নত কাঁচামালের সঙ্গে বিদ্যুৎ পরিবাহী বিভিন্ন বস্তু যোগ করে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যতটা সম্ভব হাই রেজ্যুলেশনে প্রিন্ট করা হচ্ছে নিহত ব্যক্তির আঙ্গুলের একেকটি নকল। একেকবার একক ধরণের বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থ ব্যবহৃত হচ্ছে।
আগামী কয়েক সপ্তাহে দু’হাতের পুরো দশ আঙ্গুলের থ্রিডি প্রিন্টেড কপি তৈরি হয়ে গেলে পরীক্ষা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন অনীল জৈন। তবে এ চেষ্টায় যে আসলেই ফোনটি আনলক করা যাবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই বলেও জানান তিনি।