বৃহস্পতিবার দু’টি চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে। একটি গাইবান্ধায় সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলা, আর অন্যটি ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যার ঘটনায় ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে।
এমপি লিটন হত্যা মামলায় প্রধান আসামি সাবেক এমপি কর্নেল (অব.) কাদের খানসহ ৭ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। অন্যদিকে নুসরাত জাহান রাফির কথোপকথন ভিডিও করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার দায়ে সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে ৮ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়াও তাকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এ দু’টি রায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে থাকবে বলেই আমরা মনে করি। এছাড়া এ রায় রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বন্ধে প্রভাব রাখবে বলেও আমরা আশাবাদী।
গাইবান্ধার ঘটনায় আদালত বলেছেন: প্রধান আসামি কাদের খান হত্যাকাণ্ড পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে। কাদের খানসহ বাকি আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সন্দোতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধেও মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গার মাস্টারপাড়ার নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন নিহত হন। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এই ঘটনাকে একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলে মন্তব্য করেছেন।
নিহত এমপি লিটনের এলাকায় স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত-শিবিরের শক্ত অবস্থান রয়েছে। যার ফলে তাকে প্রচুর প্রতিকূলতা জয় করে নির্বাচনে জয় লাভ করতে হয়েছে। নিজের জীবন ছিল মারাত্মক ঝুঁকির ভেতর। কয়েকবার তাকে আক্রমণও করা হয় হত্যার উদ্দেশে। কিন্তু এরপরও তাকে সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে। এমনকি এক শিশুকে গুলি করার কারণে তাকে কারাগারে যেতে হয়েছে। কিন্তু তিনি বলেছিলেন, হামলার শিকার হয়ে তিনি গুলি করেছিলেন। তার প্রতিপক্ষরা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাতে তার বাড়িতে গিয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করে।
রাজনীতিতে ভিন্নমত থাকবে। এটা সকল গণতান্ত্রিক দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতর চর্চা হয়। কিন্তু প্রতিপক্ষকে হত্যা করে নির্মূল করে দেয়ার প্রচেষ্টা অত্যন্ত নিন্দনীয় গর্হিত অপরাধ। মূলত ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই দুর্বৃত্তধারা চালু হয়।
হত্যাকারীদের ফেলে যাওয়া একটি ম্যাগাজিনের সূত্র ধরে ২০১৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার বাসা থেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আবদুল কাদের খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। কাদের খান গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি।
লিটন হত্যার মূল আসামী সাবেক এমপি কাদেরকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে আদালত একটি মাইলফলক রচনা করেছে। এই ধরনের রাজনৈতিক হত্যার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি রাজনৈতিক অঙ্গণে গুরুত্বপূর্ণ মেসেজও বটে। প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধে এই বিচার কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমরা মনে করি। একইভাবে সোনাগাজীর সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমের শাস্তির বিষয়টিও সংশ্লিষ্টদের জন্য সতর্কবার্তা। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের আরও দায়িত্বশীল আচরণের চর্চা করার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।