চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

হতাশ করল সালাহর মিশর

২৮ বছরের বিরতির পর বিশ্বকাপে আসতে পারা। দলে সময়ের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড মোহামেদ সালাহর থাকা। সঙ্গে অভিজ্ঞ-প্রতিভাবানের মিশেলে গড়া মিশরের দিকে দৃষ্টি ছিল ফুটবলপ্রেমীদের। টানা দুই হারে সেখানে এক ম্যাচ হাতে রেখেই বিদায়ের সামনে দলটি।

মিশরের বিশ্বকাপ রেকর্ড খুব ভালো নয়। ২৮ বছর তো বিশ্বমঞ্চে আসাই হয়নি। বিশ্বকাপে এ যাবতকালে কোনো ম্যাচেই জয়ের মুখ দেখা হয়নি দলটি। ছয় ম্যাচ খেলে তারা ড্র করেছে দুটিতে, হার চারটি। অস্বাভাবিক কিছু না ঘটলে সৌদি আরবের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটিই মিশরের এবারের মিশন সমাপ্তির ম্যাচ হতে যাচ্ছে। অনেক প্রত্যাশা ঘিরে থাকা দলটির সমর্থকদের জন্য তা হতাশারই।

সালাহর কারণেই মিশরকে নিয়ে আশার বেলুনটা ফুলে ওঠে। লিভারপুলের জার্সিতে উড়ন্ত একটা মৌসুম কাটিয়েছেন। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড গড়েছেন। অলরেডদের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে তোলার পথে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এমন ফর্মে থাকা সালাহর দলের কাছ থেকে প্রত্যাশা তো একটু বেশিই থাকবে।

সেই প্রত্যাশাটা ফলের মুখ দেখবে কি, চাপ-ভার হওয়ার সময়টুকুও পেল না! সালাহ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে চোটে পড়ার পর বিশ্বকাপে খেলবেন, কি খেলবেন না, অনেকটা সময় সেটির দিকেই থাকল দলের মনোযোগ। প্রস্তুতিতে সেটির ছাপ পড়ে থাকলেও থাকতে পরে।

বিশ্বকাপে নেমে অবশ্য মিশর সালাহীনতায় আত্মবিশ্বাসের কমতি দেখায়নি। গত শুক্রবার উরুগুয়ের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সালাহকে ছাড়া মাঠে নেমে দারুণ ফুটবল খেলে আশা জাগায় মিশর। লাতিন জায়ান্ট সুয়ারেজ-কাভানির উরুগুয়েকে প্রায় আটকেই দিচ্ছিল দলটি। ৯০ মিনিটে গোল হজম করে জয়বঞ্চিত হয়।

সেই ম্যাচে সালাহ খেলার মতো ফিট ছিলেন বলা হচ্ছিল। খেললে হয় ফল ভিন্নও হতে পারত! তবে বাড়তি সতর্কতা আর ঝুঁকি এড়াতেই তাকে খেলানো হয়নি বলে পরে দলের পক্ষ থেকে বিবৃতি আসে। সঙ্গে রাশিয়া ম্যাচে তার ফেরার মঞ্চ প্রস্তুত বলেও ঘোষণা আসে। ২৫ বছর বয়সী সালাহ স্বাগতিকদের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ফিরলেন ঠিকই। দলের ভাগ্যটাই কেবল বদলাল না।

মঙ্গলবার রাতে শুরুর একাদশেই ছিলেন সালাহ। বাছাইপর্বে মিশরের পাঁচ ম্যাচে পাঁচটি গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। কিন্তু লম্বা একটা বিরতির পর যেন বলই খুঁজে পাচ্ছিলেন না এদিন। অথবা, রাশানরা তাকে বলই পেতে দিচ্ছিল না। প্রথম ২০ মিনিটে কেবল ৫বারই বলে ছোঁয়া দিতে পেরেছেন সালাহ। প্রথমার্ধে সবমিলিয়ে সেটা মাত্র ১৮বার!

বল ছুঁয়ে দারুণ কিছু করার চেষ্টা অবশ্য তাতে আটকে রাখা যায়নি মিশর ফরোয়ার্ডের। দ্বিতীয়ার্ধে রাশিয়া রক্ষণের কাছে খেই হারাচ্ছিলেন, তবে আগের অর্ধের চেয়ে বেশি করে ঝলকে ওঠার চেষ্টা ছিল। আবার দলের নিউক্লিয়াস তিনি, কাঁধে অনেক ভার, পারফরম্যান্সে সেটির ছাপও মিলল।

পিটার্সবার্গে সেই ঝলক স্ফুলিঙ্গ ছড়ানোর আগেই তিন গোলে পিছিয়ে পড়ে মিশর। তখন রাশিয়ান রক্ষণদেয়াল ভাঙার জন্য আরও মরিয়া হয়ে ওঠেন সালাহ। ম্যাচের ৭২তম মিনিটে বক্সের ভেতর সালাহকে ফাউল করেন রাশিয়ার ডিফেন্ডার। রেফারি ফ্রি-কিকের নির্দেশ দেন বক্সের বাইরে। পরে ভিডিও রেফারির সাহায্যে রিপ্লে দেখে পেনাল্টি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। স্পটকিক থেকে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম গোল করেন সালাহ।

গোলের পর ম্যাচে ফিরতে যথেষ্ট সময় ছিল না মিশরের। রাশিয়ার কাছে ৩-১ ব্যবধানের হারই তাই পরিণতি। শুরু থেকেই দুর্দান্ত আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে স্বাগতিকরা। গ্যালারির গর্জন, চেরিশেভ-জিউবাদের জ্বলতে থাকা, দিশেহারা হয়ে পড়ে মিশর। রাশানরা যেখানে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, মিশরের আক্রমণে সেখানে না থাকল ধার, না মিলল তেড়েফুঁড়ে আসার মানসিকতা।

সেখানে ৪৭ মিনিটে রাশিয়ার এগিয়ে যাওয়া গোলটি আবার মিশরের আত্মঘাতী। জবনিনের শট ঠেকাতে গিয়ে ফাতহির নিজেদের জালেই বল ঠেলে দেন। সেটা মানসিকভাবে ধাক্কা দেয় মিশরকে। রাশিয়া আবার সময়টা কাজে লাগিয়ে টপাটপ আরও দুবার ব্যবধান বাড়িয়ে নেয়। ৫৯ মিনিটে চেরিশেভের গোলটি ছিল দুর্দান্ত। দুই মিনিট পর জিউবার গোলের দায় মিশর রক্ষণের। ব্যাস, সর্বশান্ত মিশর।

মিশর আহামরী কিছু করবে সেটা হয়ত অপ্রত্যাশিত। কিন্তু এভাবেই গ্রুপপর্ব থেকে বিদায়ের ক্ষণ গুণবে সালাহর দল, সেটাও অপ্রত্যাশিতই। হতাশাজনক পারফরম্যান্সেরই যোগফল আসলে এসব। বুধবার উরুগুয়ের বিপক্ষে সৌদি আরব জয় না পেলে দেশের বিমানে চেপে বসা সালাহদের জন্য হয়ে দাঁড়াবে সময়ের ব্যাপার।

তখন নিজেদের শেষ ম্যাচ কেবলই একটা জয়ের চেষ্টার মিশন। মিশর এবার গ্রুপ ‘এ’তে খেলছে। উরুগুয়ে ও স্বাগতিক রাশিয়ার বিপক্ষে হারতে হল। গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে ২৫ জুন সৌদি আরবের বিপক্ষে খেলবে তারা।