হঠাৎ করে বেড়ে গেছে পেঁয়াজের ঝাঁজ। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০-২৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজির দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা। আমদানি করা (ভারতীয়) পেঁয়াজের কেজি ছিল ২৫-৩০ টাকা। কিন্তু শুক্রবার রাজধানীর খুচরা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজ ৫০-৫৫ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজ ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজের দাম বাড়ার এই চিত্র সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার মূল্য তালিকায়ও দেখা গেছে। ওই তালিকা অনুযায়ী, এক সপ্তাহ আগে যেখানে দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ২৫-৩০ টাকা, শুক্রবার ১২ জুলাই সেটা বিক্রি হয়েছে ৪৫-৫০ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম এক সপ্তাহ আগে ছিল ২৮-৩৫ টাকা। বুধবার তা বিক্রি হয়েছে ৪০-৪৫ টাকায়।
টিসিবির এই হিসাবেও দেখা যাচ্ছে, দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ২০ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০-১২ টাকা।
কিন্তু হঠাৎ কেন দাম বাড়ছে? এর জবাবে অতিরিক্ত গরম আর বৃষ্টিকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এটা খোঁড়া যুক্তি। সরকারকে দাম বাড়ার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। এর তদন্ত করে দোষী ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। নতুবা বছরের পর বছর এই রীতি চলতে থাকবে।
ভোক্তাদের অভিযোগ, প্রতিবছর কোরবানির ঈদ সামনে রেখে কারসাজি করে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় বিক্রেতারা।
রাজধানীর হাতির পুল বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা তোহিদুল বলেন, ৭/৮ দিন আগেও ২৫-৩০ টাকা দামে পেঁয়াজ কিনেছি। এখন দাম দ্বিগুণ হয়ে গেল কেন? একদিন বৃষ্টি হলেই ক্রেতারা বিভিন্ন উছিলা দিয়ে দাম বাড়ায়। সরকারের উচিত এখনি বাজার মনিটরিং করা। নতুবা কোরবানির ঈদকে ঘিরে দাম আরো বাড়াবে বিক্রেতারা।
কিন্তু পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা বলছেন, পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারত প্রণোদনা তুলে নিয়েছে। এখন অতিরিক্ত গরম ও বৃষ্টিতে পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ার কারণে দাম বাড়ছে। তবে দাম কমে যাবে।
এ বিষয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজের আড়ৎদার আমিনুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টি আর গরমে পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে দাম বাড়ছে। তবে বৃষ্টি হলে দাম আরো বাড়তে পারে।
খুচরা বাজারের এই বিক্রেতা বলেন, পাইকাররা দাম বাড়িয়েছে। ফলে খুচরা বাজারেও বেড়েছে।
কিন্তু শ্যামবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য ও পেঁয়াজ আমদানিকারক ওয়াহিদ হাসান রনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: বৃষ্টির কারণে দাম বেড়েছে। এছাড়া পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারত প্রণোদনা তুলে নিয়েছে। এসব কারণে দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন: দুই দিন দাম বেশি ছিল। এখন কমেছে। বর্তমান খুচরা বাজারের প্রতি কেজির দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এমন তথ্য জানালে রনি বলেন, পাইকারি পর্যায়ে দাম কম। ৩০ থেকে ৩২ টাকা। কিন্তু খুচরা বাজারে এত দাম নিচ্ছে কেন বলতে পারি না। তবে দাম কমে যাবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি সারা বছর যেন পেঁয়াজের দাম নাগালের মধ্যে থাকে সেজন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। কয়েক দিনের ব্যবধানে কেজিতে ২০-২৫ টাকা বেড়ে যাওয়া সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
ব্যবসায়ীরা খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে দাম বাড়ায় মন্তব্য করে তিনি বলেন: বাজারে সরকারের কোনো মোবাইল টিম কিংবা মনিটরিং ব্যবস্থা আছে বলে মনে হয় না। ভোক্তার স্বার্থে এখনি বাজার মনিটরিং করা উচিত। যেসব ব্যবসায়ী কোনো কারণ ছাড়াই পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে বছরে প্রায় ২৪ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। কোরবানির ঈদে বাড়তি আরো প্রায় ২ লাখ টনের চাহিদা তৈরি হয়। অর্থাৎ মোট ২৬ লাখ টন পেঁয়াজের দরকার হয়। এর মধ্যে দেশে উৎপাদিত হয় প্রায় ১৭ লাখ টন। ৭ থেকে ৮ লাখ টন ভারত থেকে আমদানি করা হয়।
এনবিআরের তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ৯ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। সে হিসাবে পেঁয়াজ ঘাটতি হওয়ার কথা নয়।
কিন্তু পেঁয়াজের চাহিদা এবং সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। অতিরিক্ত গরম ও বৃষ্টিতে পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ার অযুহাতে দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এতে ক্রেতাদের বাড়তি টাকা দিয়ে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা মূলত ভারত থেকেই বেশি পেঁয়াজ আমদানি করেন। এ ছাড়া মিসর, চীনসহ কয়েকটি দেশ থেকেও আমদানি করা হয়।