চালের পর হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পেঁয়াজের দর। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ১৭ টাকা। আর সরকারি হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ২৮ থেকে ৩৩ টাকা। অর্থাৎ দ্বিগুনেরও বেশি।
তবে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়লেও আগামী সপ্তাহে তা কমে যাবে বলে মনে করেন পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা।
তারা বলেন, ভারতে পেঁয়াজের দর বাড়লে পাকিস্তান, চীনসহ কয়েকটি দেশ থেকে প্রতিবছরই পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। এবারও সেই চেষ্টা চলছে। তাছাড়া দেশের আড়ৎগুলোতে মজুদকৃত পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে পুরোদমে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজার ও কাঁঠালবাগান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। আর ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫২ টাকা। সপ্তাহ দুয়েক আগেও দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি দাম ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা।
আর সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী, গত এক মাসের ব্যবধানে পণ্যটির দাম গড়ে বেড়েছে ৯৫ শতাংশ আর বছরের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী, এক মাস আগে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ২৮ থেকে ৩২ টাকা, আর ভারতীয় পেঁয়াজ ২২ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা আর ভারতীয় পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
তবে বৃষ্টিকে দায়ী করলেও বাজারঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে দাম বাড়ার পেছনে অনেক কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতে বন্যায় পেঁয়াজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া দেশেও সম্প্রতি অতি বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতায় ব্যবসায়ীদের মজুদকৃত পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে দাম বাড়ছে। কারণ দেশের চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে প্রায় ৪ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়।
শ্যামবাজারের একজন ব্যবসায়ী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ভারতে বন্যার কারণে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এ কারণে বাংলাদেশের বাজারেও প্রভাব পড়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশে বছরে ২২ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা আছে। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন দেশে উৎপাদিত হয়। বাকিটা আমদানি হয় মূলত ভারত থেকে।
তবে ব্যবসায়ীদের যুক্তি মানতে নারাজ সাধারণ ক্রেতারা। শুধু বৃষ্টি নয়, দাম বাড়ার পেছনে অন্য কারণ দেখছেন তারা।
কারওয়ান বাজার ও শ্যামবাজারে ও কাঁঠালবাগান বাজারে কয়েকজন ক্রেতা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, মৌসুমী ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পেঁয়াজ আটকে রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, প্রতিবছরের মতো কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে মুনাফার লোভে অসাধু চক্রের দৌরাত্ম্য ও বাজারে তদারকির অভাবে সুযোগে দাম বাড়াচ্ছে ব্যবসায়ীরা।
ক্রেতাদের অভিযোগের সত্যতা মিলে দেশে পেঁয়াজের মাসিক চাহিদার হিসাবে।
জানা গেছে, দেশে গড়ে প্রতিমাসে পেঁয়াজের চাহিদা এক লাখ ১৫ হাজার টন। এর মধ্যে নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে পেঁয়াজের চাহিদা একটু বেশি থাকে। তবে রমজান মাস ও কোরবানির সময় দেড় থেকে দুই লাখ টন বাড়তি পেঁয়াজের চাহিদা তৈরি হয়। এ চাহিদাকে পুঁজি করেই সক্রিয় হয়ে ওঠে সিন্ডিকেট। কারণ দেশে উৎপাদন, আমদানি ও চাহিদা হিসাব করলে এখনও দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজের মজুদ থাকার কথা।
জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মার্কেট ফেডারেশনের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব শেখ শামসুল আলম বুলবুল চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, দেশে পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় মোকাম হচ্ছে রাজশাহীর তাহেরপুর ও বানেশ্বর, ফরিদপুরের গোয়ালন্দ। এছাড়া পাবনায়ও একটি মোকাম রয়েছে। এসব মোকামে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। কিছু দিন সমস্যা হলেও এখন বাজারে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ আসছে।
তবে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই পেঁয়াজের দাম কমে যাবে এমন দৃঢ় বিশ্বাস রেখে তিনি বলেন, নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি এক সপ্তাহের মধ্যে দাম কমবে। কিছু মৌসুমী ব্যবসায়ী দাম বাড়ালেও তা আর বেশিদিন স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
বাজার তদারকরি করা দরকার মন্তব্য করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, স্মরণকালের ইতিহাসে এবছর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে কিছু পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া চাহিদা অনুযায়ী আমাদের দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় না। ভারত থেকে আমদানি করতে হয়। কিন্তু সেখানেও বন্যায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বাংলাদেশে দামে প্রভাব পড়ছে।
ব্যবসায়ীদের হাতেও বাজার একেবারে ছেড়ে দেয়া যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, তদারকি অবশ্য করা দরকার। কারণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে আরো বৃষ্টিপাত হতে পারে। তখন যেন দাম হাতের নাগালে থাকে সেজন্য এখনই প্রস্তুত থাকা দরকার। তবে ব্যবসায়ীদের বাঁচিয়েই সবকিছু করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।