কঠোর আইন, নানান বিধিনিষেধ কিংবা ক্রমাগত সচেতনতা তৈরির পরও কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। কোনোভাবেই সড়ক, মহাসড়কে মৃত্যু রোধ করা যাচ্ছে না। সড়ক-মহাসড়কগুলোতে যেন মানুষ মরার প্রতিযোগিতা চলছে। যার সর্বশেষ উদাহরণ নাটোরের বনপাড়ার মহিষভাঙ্গা। শনিবার সকালে দুটি বাসের সংঘর্ষে সেখানে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থা আরও অন্তত ৭ জনের।
নাটোরে যখন এই ঘটনা ঘটেছে, ঠিক তার কাছাকাছি সময়ে শনিবার রোড সেফটি ফাউন্ডেশন গত মাসে (এপ্রিল) সড়কে কতগুলো দুর্ঘটনায় কতজন মানুষ হতাহত হয়েছে, তার পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। মূলত সংবাদ মাধ্যমে আসা খবর থেকে তথ্য নিয়ে সংগঠনটি বলছে, এপ্রিল মাসে সারাদেশে ৪২৭টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। যাতে নিহত হয়েছেন ৫৪৩ জন মানুষ। আহতের সংখ্যা ৬১২ জন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন তাদের প্রতিবেদনে বলছে, এই সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী। যাদের সংখ্যা ৬৩ জন। আগের মাসে (মার্চ) এই সংখ্যা ছিল ৭৪। শুধু তাই নয়, মোট নিহতদের ২০৬ জনই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। যা মোট নিহতের ৩৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এমন সব ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে ওই প্রতিবেদনে।
তবে আমরা মনে করি, সড়কে নিহতের এই সংখ্যা প্রকৃত নিহতের চেয়ে কম। কারণ, প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক দুর্ঘটনা এবং তাতে হতাহতের খবর গণমাধ্যমে পৌঁছায় না। সেসব হিসাবে ধরলে নিহতের পাশাপাশি আহতের সংখ্যাও বেড়ে যাবে।
তারপরও হতাহতের এই সংখ্যা অবশ্যই সড়কে ভয়াবহ এক পরিস্থিতিরই প্রকাশ। আর দিনের পর দিন তা বেড়েই চলছে। এসব ঘটনার পেছনে সবচেয়ে বেশি দায়ী চালকদের বেপরোয়া গতি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানুষের অসচেতনতাও কাজ করেছে। আবার অন্যের কারণে মৃত্যু হয়েছে নিরীহ মানুষেরও।
করোনার কারণে বিগত দুই বছর ঈদ করতে না পারা মানুষ এবার অবিশ্বাস্যভাবে ঈদের ছুটিতে স্বস্তি নিয়ে গ্রামে পৌঁছাতে পেরেছিল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও একইভাবে স্বস্তিতেই কর্মস্থলে ফিরতেও পেরেছে। অথচ অন্যান্য বছরের চেয়ে দ্বিগুণ মানুষ এবার ঢাকা ছেড়েছিল। তাতেও কোনো সমস্যা তৈরি হয়নি। কিন্তু ঈদের ছুটিতে সড়কে বহু মানুষের মৃত্যু অনেক পরিবারের ঈদ আনন্দ শোকে পরিণত হয়। এরমধ্যে একদিনেই সারাদেশে মৃত্যু হয় ২৬ জনের।
আমরা মনে করি, মানুষ সচেতন না হলে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব না। যতই কঠোর আইন করা হোক; তাতে যে কোনো লাভ যে হচ্ছে না, সড়কে হতাহতদের সর্বশেষ পরিসংখ্যানই তার প্রমাণ। এমন প্রাণহানী বন্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।