সড়কে আইন না মানার প্রবণতা সবচেয়ে বড় সমস্যা জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো, যানজট নিয়ন্ত্রণ এবং সচেতনতা তৈরীর জন্য পুনরায় ট্রাফিক সপ্তাহ শুরু হচ্ছে। বুধবার (২৪ অক্টোবর) থেকে শুরু হওয়া এ ট্রাফিক সপ্তাহ চলবে আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত।
বৃহস্পতিবার মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আছাদুজ্জামান মিয়া এসব কথা জানান।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনের পর শুরু হওয়া ট্রাফিক সপ্তাহ ও মাসব্যাপী ট্রাফিক কর্মসূচি পালনে বেশ কিছু উন্নতি হলেও তা কাঙ্খিত পর্যায়ের না হওয়ায় এ ঘোষণা দেন তিনি।
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘রাজধানীবাসীদের ফুট ওভার ব্রিজ দিয়ে চলাচলে অভ্যস্ত করতে, সড়কে জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করা হবে। এছাড়াও যানবাহনগুলো যে জেব্রা ক্রসিংয়ের আগে গাড়ি থামিয়ে দেয় এ ব্যাপারেও সচেতনতা তৈরি করা হবে।
‘প্রতিটি বাসের সামনে চালকের ছবি ও ফোন নম্বর থাকতে হবে। বাসচালক সিটবেল্ট বেঁধে গাড়ি চালাবেন। চুক্তিভিত্তিক নয়, বাসের ড্রাইভার হবে বেতনভুক্ত।’
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা সপ্তাহে রাজধানীবাসীকে আইন মানতে বাধ্য করতে নানাবিধ উদ্যোগ বাস্তবায়নে পুলিশের সঙ্গে এই ট্রাফিক সপ্তাহে পুলিশের পাশপাশি ২১৬ জন রোভার স্কাউট, গার্লস গাইড ও বিএনসিসি, বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছে।’
চালক ও মালিকদের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন: ‘যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, স্টপেজ ছাড়া যত্রতত্র বাস থামানো, ফুটপাথে মোটরসাইকেল উঠানো, লাইসেন্স ও নিবন্ধন ব্যতীত গাড়ি চালানো, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, মোটরবাইক চালক ও আরোহী উভয়ের হেলমেট পরা, উল্টোপথে গাড়ি চালানো, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইলে কথা বলাসহ এ ধরণের অপরাধ করে পার পাবে না চালক ও মালিকরা।
মোটর সাইকেল আরোহীদের সম্পর্কে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে মোটরসাইকেল চালকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী উভয়কেই হেলমেট পরে সুশৃঙ্খলভাবে বাইক চালানোর অনুরোধ করছি। দুইজনের বেশি যাত্রী উঠতে দেয়া হবে না। থাকতে হবে হেলমেট। আর নো হেলমেট নো ফুয়েল নির্দেশনা সফল হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকায় মত ১৩০টি বাস স্টপেজের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব স্টপেজ ছাড়া কোথাও বাস না থামানো যাবে না। এগুলোতে বোর্ড লাগানো হচ্ছে। এসব স্থানের বাইরে কেউ বাস থামাতে পারবে না। পাশাপাশি বাস স্টপেজ ছাড়া কোথাও বাসের দরজা খুলবে না, বন্ধ থাকবে।’
যাত্রীদের উদ্দেশ্যে কমিশনার বলেন, ‘যাত্রীরাও বাস স্টপেজ ছাড়া অন্য কোথাও নামতে পারবেন না। বাসযাত্রীরা সড়কে যত্রযত্র দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে পারবেন না। যত্রতত্র ও ফোনে কথা বলা অবস্থায় রাস্তা পারাপারা হওয়া যাবে না। তাদের শুধুমাত্র জেব্রা ক্রসিং কিংবা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে হবে। বাস স্টপেজে দাঁড়াতে হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলায় পুলিশের জনবলের অভাব অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটা কারণ, তবে অন্যতম নয়। পুলিশের আইন প্রয়োগের পাশপাশি সবাই যদি সহযোগিতা করেন তবেই সম্ভব শৃঙ্খলা ফেরানো। স্পষ্ট করেই বলি, ট্রাফিক পুলিশ সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় কাজ করে থাকে মাত্র, রোড সেইফটি, রোড ইঞ্জিনিয়ারিং, সিগনাল বাতি সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান করে। সবগুলো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। ঢাকায় ৫৪টি ট্রাফিক চেকিং আমরা সক্রিয় রেখেছি। আর ৮৮টি সিগন্যাল বাতির মধ্যে ১২টি সক্রিয় রয়েছে। ১২টি অটোমেটিকভাবে চালানের উদ্যোগ আমরা নিয়েছি।’
সমাজের প্রভাবশালীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা শৈত্যপ্রবাহ, তাপদাহ, রোদ বৃষ্টি ঝড়েও সড়কে দাঁড়িয়ে কাজ করে। এটা আসলে সকলের দায়িত্ব। আমি পুলিশ কমিশনার যদি আইন না মানি তবে আমার অধীনস্তরা মানবে না। সবার ক্ষেত্রেই তাই। সুতরাং আসুন আমরা সবাই আইন মানি এবং অন্যকে আইন মানতে উদ্বুদ্ধ করি।’