কিছুদিন আগে একজন ইসলামিক জ্ঞান তাপসের ভাইরাল হওয়া ওয়াজ শুনলাম। সেখানে তিনি “নারীদের নিয়ে অবমাননাকর ও ধর্মীয় গোঁড়ামী” প্রচারণাকালে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রধান নারী নেতাদের ও কর্মজীবী নারীদের নিয়ে যেসব কটুক্তি করেছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে আমি ও আমার একজন আমেরিকান প্রবাসী ভাই মিলে কয়েকজন আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করেছি ও করছি সেই অপপ্রচারণা প্রচারকারীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য।
দুঃখের বিষয় হলো কেউ এখনও রাজী নন। সবার নিজের “কল্লার” ভয় আছে। স্যার, আপনার কেন ভয় নেই? আপনার উপর খুব রাগ হচ্ছে। আপনি এতো বোকা, একদম আপনার বাবার মতো। তা না হলে, কেন এই দেশটাকে এমন করে ভালোবেসে বিশ্বের অন্যতম সেরা কোম্পানির কিংবা বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরির অফার ছেড়ে বাংলাদেশে আসেন, আছেন? বাংলাদেশে, যেখানে প্রতিটি মানুষ রাজধানীমুখী, সেখানে আপনি কেন বছরের পর বছর থেকে গেলেন সিলেটে?
আপনি ছাত্রদের আলোকিত করার জন্য, শিক্ষা দিয়ে জাতির বিবেক বানানোর প্রাণান্ত চেষ্টা করে গেলেন। আর তার উপহার চাপাতি কিংবা ছুরির আঘাত? যেমনটি হয়েছিলো হুমায়ুন আজাদ স্যারের সাথে। যেই বিশ্ববিদ্যালয়কে আপনি ভালোবেসে থেকে গেলেন সেই ক্যাম্পাসেই আপনার উপর হামলা হয়? কারণ, আপনি খুব বোকা স্যার। আপনি জানেন না এই দেশে সব কথা বলতে হয় না। সব আলো ছড়াতে হয় না।
এই দেশে মানুষ এখন আপনার কিংবা আপনার বাবার মতো লাখ লাখ মুক্তিযোদ্ধার আদর্শের আলো দেখতে চায় না, ওই পথে চলতে চায় না। তারা ধর্মের নামে এক অন্ধকার সময়ের দিকে যেতে চায়। ওদের কাছে বিজ্ঞানের চেয়ে ধর্মের অন্ধকার পথ বেশী পছন্দ। ওদের পৃথিবীতে ভালো থাকার দরকার নেই, ওরা মৃত্যুর পর ৭০ হুরপরী নিয়ে আরামে-আয়েসে সূরা পান করতে চায়। আপনি কেনো এই দেশে ওইসব বলতে গেলেন।
স্যার, সত্যি বলছি আপনি একদম আপনার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বাবার মতো বোকা। আপনার বাবাও নিজের জীবনের মায়া না করে দেশের জন্য যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছেন। আপনিও সেইরকম নিজের জীবনের এতটুকু মায়া করেননি। এতো ভালোবাসা ঠিক না স্যার। এই যে দেখেন, আমার মতো কতজনকে দেখি উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশে ছেড়ে এসে দিব্যি সামাজিক নিরাপত্তা অথবা সন্তানের নিরাপদ ভবিষ্যতের কথা কিংবা অন্য হাজারো অজুহাত দেখিয়ে প্রবাসে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আপনি কেনো নিজেকে ভালোবাসেননি।
এই দেশ এখন সেইসব মোল্লাদের, যারা প্রকাশ্যে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সকল কর্মজীবী নারীসহ অমুসলিমদের নিয়ে বাজে কথা বলে, ওয়াজ করে বেড়ায়। এই দেশ তাদের যারা একটা বিশেষ ধর্ম নিয়ে সঠিক পথে ব্যবসা করতে পারে। যারা টুপি আর বোরখার ব্যবসার প্রসার ঘটিয়ে চলেছে। যারা আধুনিক বিজ্ঞান চর্চার চেয়ে গায়েবী জ্ঞান চর্চাকে প্রাধান্য দেয়। যারা (ফতোয়াবাজ-পীর-হুজুর-ধর্ম ব্যবসায়ী-নারীবিদ্বেষী-মোল্লা-জঙ্গী-ধর্মান্ধ) মৃত্যুর পর মানুষকে বেহেশতে নিয়ে যাওয়ার পথ দেখায়, তাদেরকে এখন সরকারসহ সকল রাজনৈতিক দল আগলে রাখে।
তাদেরকে আগলে রাখার দলে একসময় শুধুমাত্র জামায়াতে ইসলাম ছিলো, এখন বাম-ডান সকল দলই এগিয়ে আছে। কারণ, তাদের ভোটের হিসাব কষতে হয়। আর সাধারণ জনগণকে ঐ যে মৃত্যু পরবর্তী হুরের লোভ দেখিয়ে সব করানো যায়। জাফর ইকবাল স্যার কিংবা হুমায়ুন আজাদ স্যারদের কুপাতে-হত্যা করতে লেলিয়ে দেয়া যায়। স্যার, বাংলাদেশে মানুষ এখন আর আপনাদের দেখানো মুক্তি ও আলোর পথ দেখতে চায় না। এখন তারা বেহেশতের দিকে এগিয়ে চলেছে। আপনার উপর রাগের কত যে কারণ? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক শ্রেণীর মানুষ আপনাকে নিয়ে যেই ধরণের মন্তব্য করছে সেসব পড়েও আপনার উপরই রাগ বাড়ছে। আপনি স্যার, বিজ্ঞানের এতো কঠিন জিনিস বুঝেন, কিন্তু বাংলাদেশের ধর্মান্ধ মানুষদের মানসিকতা বুঝেন না?
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ফ্যাকাল্টি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক স্ট্যাটাসে কিছু স্ক্রিনশট দিয়ে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছেন। যেখানে তিনি লিখেছেন, স্যারের উপর হামলার নিউজ দেখার জন্য তিনি একটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলের ফেসবুকে লাইভ নিউজ দেখছিলেন, সেখানে সেই লাইভ নিউজ এর নিচে করা কমেন্টগুলোর ভালো দুই একটা নমুনা দেই (বাকিগুলো কী হতে পারে তা কল্পনা করতে পারেন) – “নাস্তিক এখনো মরে নাই, কৈ মাছের জান”, “আমীন- মারা গেছে”, “আল্লাহদ্রোহী মারা গেলে মুমিন খুশী হবে” থেকে শুরু করে স্যারকে এমন কোনো খারাপ গালিগালাজ নেই যা করা হয়নি।
আপনার উপর ভীষণ রেগে আছি স্যার! যদিও জানি, আপনি সুস্থ হয়ে আবার শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের আলো দিয়ে যাবেন।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)