একেবারে ছোট বেলার বর্ষা দিনের কথাগুলো হয়তো বলতে পারবো না। তবে কৈশোরের বর্ষা কিংবা তারুণ্যের বর্ষা দিনগুলো আজও হৃদয় দিয়ে অনুভব করি। স্মৃতির দরজায় সে বর্ষা আজও কড়া নাড়ে।
কৈশোরের বর্ষা দিন ছিল অনেকটা উচ্ছ্বসিত। ঝুম বৃষ্টিতে পাড়ার ছেলেদের সাথে ফুটবল খেলা। মেঘের ডাকের সাথে সাড়া দিয়ে ছোট্ট নদীর দু’কূল ধরে কৈ মাছ খোঁজা। নদীতে বিরামহীন সাঁতার কাটা। স্কুল বাদ দিয়ে সমবয়সীদের সাথে সাপ-লুডু খেলা ছাড়াও আরও কত কি না করতাম কৈশোরে বর্ষায়!
সময়ের হাত ধরে একসময় কৈশোর পার হয়ে তারুণ্যদীপ্ত যৌবনে পা রাখি। সে সময় বর্ষা দিনগুলো যেন অনেক বেশি আবেগী করে তুলত আমাকে! তখন কেন যেন বর্ষায় আর বৃষ্টিতে ভিজে নদীর দু’কূল ধরে কৈ মাছ খুঁজতে ইচ্ছে করত না। সাপ-লুডু খেলারও তেমন কেউ ছিল না। কেন যেন ঝুম বৃষ্টিতে কলেজে যেতে ইচ্ছে করত! অপেক্ষা করতে ইচ্ছে করত! ‘মল্লিকাদের’ বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে হাঁটতে ভাল লাগতো।
একগুচ্ছ কদম ফুল নিয়ে মুখোমুখি দাড়াতে ইচ্ছে হত। হ্যাঁ… এভাবেই চলছিল জীবনের অতীত বর্ষাগুলো। জীবনের প্রয়োজনে একসময় আমার প্রিয় সবুজ গ্রাম, ছোট্ট নদী, সেই কলেজ আর মল্লিকাদের ছেড়ে আসতে হল ‘আজব’ শহর ঢাকায়।
হ্যাঁ.. যে শহরেও বর্ষা দিনে বৃষ্টি হয়। তবে সে বৃষ্টি গ্রামের স্নিগ্ধ বৃষ্টির মত টিনের চালে টুপটাপ শব্দের ছন্দ তুলতে পারেনা। এক্কেবারেই পারেনা সাপ-লুডু খেলার পরিবেশ তৈরী করতে। হ্যাঁ… এই শহরে বৃষ্টি পারে না গ্রামের ছোট্ট চায়ের দোকানে রং-বেরঙের গল্পের আসর বসাতে।
আজ আমি প্রকৃতির সেই স্নিগ্ধ বর্ষা থেকে অনেক দূরে। ইট-পাথরের এই বদ্ধ শহরে জীবনের অতীত বর্ষা দিনগুলো আজ কেবলই স্মৃতির দরজায় কড়া নাড়ে।
ছবি: তানভীর আশিক