গত এপ্রিলে নেপালসহ এ অঞ্ঝলের কয়েকটি দেশে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিলো; যার কেন্দ্রস্থল ছিলো নেপাল। ওই ভূমিকম্পে শুধু নেপালেই কমপক্ষে তিন হাজারের মতো মানুষের মৃত্যু হয়। ১৯৬০ সালে চিলিতে ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের পর বেশ কয়েকটি দেশে কম-বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে।
সোমবার ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিস্তৃত এলাকাজুড়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছে। রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প হয় জাপানে। তবে ইতিহাস কুখ্যাত ভূমিকম্পটি জাপানে না হয়ে চিলিতে আঘাত হেনেছিল। বিজ্ঞানীদের মতে, এক হাজারটি পারমাণবিক বোমা ফাটালে যে ধ্বংসযজ্ঞ হবে, সেই একই পরিমাণ শক্তি নিয়ে ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল।
চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল প্রায় সোয়া ১২টার দিকে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালে একসঙ্গে ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্পটি নেপালের রাজধানী থেকে ৪৮ মাইল দূরের পোখরা এলাকায় আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিলো ৭ দশমিক ৫। পরের দিনও ভূমিকম্প হয়; যার কেন্দ্রস্থলও ছিল নেপাল।
২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় ভারতীয় মহাসাগরে সৃষ্ট ৯ দশমিক ১ থেকে ৯ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্পটি ৩২ গিগাট্রন শক্তি নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় আঘাত হানে।
পার্শ্ববর্তী দেশ মালদ্বীপ এবং থাইল্যান্ডেও এই ভূমিকম্পের ধাক্কা লাগে। ওই ঘটনায় প্রায় আড়াই লাখ মানুষ মারা যায়।
বিশ্লেষকরা জানান, ওই ভূমিকম্পটি আট মিনিট থেকে দশ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী ছিলো। এছাড়াও সুমাত্রায় ২০০৫, ২০১১ এবং ২০১২ সালে দফায় দফায় ভূমিকম্পে বহু মানুষের প্রাণহাণী ঘটে।
পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর অংশে ২০০৫ সালের ৮ অক্টোবর ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। প্রাথমিক ধাক্কাতেই সেখানে ৮৫ হাজার মানুষ নিহত এবং ৬৯ হাজার আহত হয়। পাশাপাশি জম্মুতে এই ভূমিকম্পের কারণে মারা যায় আরো ১৪ হাজার। চীনের একাংশ এবং তাজাকিস্তানেও এই ভূমিকম্প আঘাত হানে।
ভূমিকম্পের দেশ জাপানের থোকো অঞ্চলে ২০১১ সালের ১১ মার্চ ৯ দশমিক শূন্য ৩ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এই ভূমিকম্পে প্রায় ১৫ হাজার ৮৭৮ জন মানুষ মারা যায়, আহত হয় প্রায় সাড়ে ছয় হাজার এবং আরো তিন হাজার মানুষকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। থোকো শহরের প্রায় দেড় লাখ বাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে যায়।
১৯৭৬ সালের ২৮ জুলাই চীনের তাংসান এবং হেবেই অঞ্চলে ৮ দশমিক ২ মাত্রার এই ভূমিকম্পটি আড়াই গিগাট্রন শক্তিমত্তা নিয়ে আঘাত হানে। মাত্র ১০ সেকেন্ডের ভূমিকম্পে পুরো একটি অঞ্চল ধ্বংস হয়ে যায়। এই ভূমিকম্পে প্রায় সাত লাখ মানুষ মারা যায়।
১৯৬০ সালে চিলির ভালদিভিয়া অঞ্চলে প্রায় ৯ দশমিক ৫ মাত্রার প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প আঘাত হানে। গবেষকরা জানিয়েছিলেন যে, ওই ভূমিকম্পটির শক্তিমত্তা ছিল প্রায় ১৭৮ গিগাট্রন। প্রাথমিক ধাক্কাতেই প্রায় ছয় হাজার মানুষ মারা যায় ওই ভূমিকম্পে।
১৫৫৬ সালের ২৩ জানুয়ারি চীনের শানসি প্রদেশের এই ভূমিকম্পটিকে বলা হয় ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প। চীনের শানসি প্রদেশকে কেন্দ্র করে এই ভূমিকম্পটি মোট ৯৭টি দেশে একযোগে আঘাত হেনেছিল। বেশ কয়েকটি দেশের সমতল ভূমি প্রায় ২০ মিটার দেবে গিয়েছিল। এতে প্রায় সাড়ে আট লক্ষাধিক মানুষ মারা যায়। শানসি প্রদেশের মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশই এই ভূমিকম্পে মারা গিয়েছিল।
১১৩৮ সালের ১১ অক্টোবরে ৮ দশমিক ৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প প্রায় তিন গিগাট্রন শক্তি নিয়ে নাড়িয়ে দেয় সিরিয়ার আলেপ্পোকে। ভূমিকম্পের ইতিহাসে এই ভূমিকম্পটিকে বলা হয় চতুর্থ ভয়ঙ্কর দুর্যোগ। ওই ভূমিকম্পে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ মারা যায় এবং পুরো একটি শহর মাটির সঙ্গে মিশে যায়।
এশিয়ার দেশ ইরানে হাতেগোনা কয়েকবার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর মধ্যে ১৮৫৬ সালের ২২ ডিসেম্বর ইরানের দামহানে (ইরানের তৎকালীন রাজধানী) ৮ দশমিক শূন্য মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে প্রায় দুই লাখ মানুষ মারা যায়।