দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর পরই শিশু, বয়স্ক মানুষ এবং গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিদের সুবিধার কথা ভেবে বাসা বা বাড়িতে গিয়ে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মূলত নমুনা দিতে হাসপাতাল বা বুথের ভিড় এড়াতেই তাদের জন্য তখন এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু কোনো ঘোষণা ছাড়াই প্রায় মাসখানেক সময় ধরে নমুনা সংগ্রহের কাজটি বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আজ রোববার একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের আগে বিষয়টি বেশিরভাগ মানুষের কাছেই ছিল অজানা। জানার পর মানুষের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের কারণে আগে থেকে নানা রোগে অসুস্থ ব্যক্তি, বয়স্ক মানুষ ও শিশুরা আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে তাদের পক্ষে হাসপাতালে গিয়ে অন্যদের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেওয়া কঠিন একটা বিষয়। এতে তাদের জীবনও সঙ্কটের মুখে পড়ে।
সমস্যা এখানেই শেষ নয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিদ্ধান্তে সমস্যায় পড়েছেন এই কাজে নিয়োজিত মেডিকেল টেকনোলজিস্টরাও। করোনার শুরু থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা নমুনা সংগ্রহের কাজ করতেন। আজ তারা কর্মহীন অবস্থায় অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে দিন পার করছেন।
হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তের কারণ দেখাতে গিয়ে অধিদপ্তর বলছে, নমুনা সংগ্রহের কাজ তাদের নয়। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এই কাজটি আগে করতো। তাই এখন থেকে নমুনা সংগ্রহের সব দায়িত্ব তারাই পালন করবে। কিন্তু আমরা যতদূর জানি, মূলত নতুন কোনো রোগের আবির্ভাব ঘটলে, সেই রোগ নির্ণয়ে কিংবা গবেষণার জন্য নমুনা সংগ্রহের কাজ আইইডিসিআর করে থাকে। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করার মতো কাজ তাদের নয়। তার জন্য সময়, সুযোগ বা লোকবলও প্রতিষ্ঠানটির আছে বলে মনে হয় না।
তার মানে এটা দায়িত্ব এড়ানোর একটা কৌশল মাত্র। কারণ কাজটি যদি স্বাস্থ্য অধিদপ্তারের না হয়, তাহলে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা সেটা করে গেল কেন? আমরা দেখেছি, করোনাভাইরাসের শুরুতে কাজটি আইইডিসিআরের তত্ত্বাবধানে হলেও কিছুদিন পর তা পুরোপুরিই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এমনকি এ কাজের জন্য রাষ্ট্রপতির প্রমার্জনায় দুই শতাধিক মেডিকেল টেকনোলজিস্টও নিয়োগ দেয় তারা।
গণমাধ্যমগুলো তাদের প্রতিবেদনে বলছে, মূলত অর্থের অভাবে নমুনা সংগ্রহের কাজটি বন্ধ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তার মানে এতদিন অর্থ ছিল, তাই কাজটি অতি আগ্রহে নিজেদের কাছে রেখেছিল। এখন অর্থ ফুরিয়ে গেছে বলে তাদের আগ্রহও ফুরিয়ে গেছে।
আমাদের প্রশ্ন, এত গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ শুধু অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে কেন? বেশির ভাগ অর্থবছরের বাজেটে সর্বোচ্চ অর্থ বরাদ্দ পাওয়া খাতে কেন অর্থের অভাব হবে?
আমরা মনে করি, এক্ষেত্রে শুধু অর্থের অভাব নয়, অভাব সমন্বয়ের। এমন সিদ্ধান্ত বাতিল করে বাসা বা বাড়িতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হোক।