শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. মুজিবুল হক বলেছেন, সরকারি ও বেসরকারি অংশীজনের সমন্বয়ে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের পাশাপাশি সব শিল্পের শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্যবীমাসহ অন্যান্য সুবিধার আওতায় আনার জন্য জাতীয় উদ্যোগ প্রয়োজন।
সরকারি বিমা সংস্থাকে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিমা কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক, নেদারল্যান্ডভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এসএনভি ও দৈনিক প্রথম আলোর আয়োজনে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিমা নীতি ও ব্যবস্থাপনা-শীর্ষক অনলাইন গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এই কথা বলেন।
এই সময়ে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহাদত্ হোসেন মাহমুদ বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পে বিজেএমইএ ও বিকেএমই, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন কেন্দ্রীয় তহবিলসহ একটি কাঠামো ইতোমধ্যে প্রস্তুত আছে যে কারণে তুলনামূলক সহজভাবে স্বাস্থ্যবীমা কার্যক্রম এই সেক্টরে এখনই শুরু করা যাবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শিল্পের শ্রমিকদেরও স্বাস্থ্যবীমার আওতায় নেওয়ার ব্যবস্থা করা যাবে।
ব্র্যাক আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের পরিচালক ড. মো. লিয়াকত আলী তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক স্বাস্থ্যবীমা শুরু করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এ কার্যক্রম শুরু করার জন্য তৈরি পোশাক শিল্প সবচেয়ে উপযোগী খাত। এ উদ্যোগে ব্র্যাক সবার সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।
ডায়াবেটিক এসোসিয়েশনের সভাপতি প্রফেসর এ কে আজাদ খান শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবীমা কার্যক্রম করের আওতামুক্ত রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
দৈনিক প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরীর সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন কেন্দ্রীয় তহবিলের মহাপরিচালক ড. সেলিনা আক্তার, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের গবেষণা পরিচালক ড. মো. নুরুল আমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা, বিজেএমই’র আ.ন.ম সাইফুদ্দিন, বিকেএমইএ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম, এসএনভি’র ফার্তিবা রাহাত খান, প্রগতি লাইফ ইন্সুরেন্সের এমডি এম. জালালুল আজিম, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ড. রেজাউল হক এবং বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম রনি।
মূল প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন তৈরি পোশাক শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষামূলকভাবে স্বাস্থ্যবীমা প্রকল্প পরিচালনা করছে। গবেষণায় দেখা যায় স্বাস্থ্যবীমায় অংশগ্রহণের ফলে শ্রমিকদের চিকিৎসা নেওয়া সহজতর এবং স্বাস্থ্যসেবায় নিজস্ব খরচ কমেছে। তাছাড়া স্বাস্থ্যবীমায় অংশগ্রহণের ফলে শ্রমিকের অসুস্থতাজনিত অনুপস্থিতি কমে যাওয়ায় কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অধিকাংশ প্রকল্পের সময়সীমা প্রায় শেষের দিকে হলেও প্রকল্পগুলোকে এগিয়ে নেওয়া বা স্থায়ী কার্যক্রম গ্রহণের বিষয়ে কোনো নীতিমালা এবং ব্যবস্থাপনা কাঠামো এখনো তৈরি হয়নি। শ্রমিক, মালিক এবং সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের সমন্বয়ে সামাজিক স্বাস্থ্যবীমা ব্যবস্থাপনা ইউনিট স্থাপন করার আহ্বান করা হয়। এর জন্য অর্থের উৎস নির্ধারণ, ব্যবস্থাপনা, অভিন্ন স্বাস্থ্য সুবিধা প্যাকেজ, অভিন্ন প্রিমিয়াম, অভিযোগ প্রতিকার, রেগুলেটরি অ্যান্ড কমপ্ল্যায়েন্সসহ বিভিন্ন বিষয় নির্ধারণ করার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
এ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন এবং ব্যবস্থাপনা কাঠামো তৈরির বিষয়টি নীতি নির্ধারণী মহলের সামনে তুলে ধরার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, ব্র্যাক, এসএনভি এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সমন্বয়ে একটি নেটওয়ার্ক কাজ করছে বলে বৈঠক থেকে জানানো হয়।
গোলটেবিল বৈঠকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, কেন্দ্রীয় তহবিল, অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট, ঢাকা বিশ্ববদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং ট্রেড ইউনিয়নসহ সংশিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দের সমন্বয়ে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়। এই কমিটি প্রস্তাবিত সামাজিক স্বাস্থ্যবীমা ব্যবস্থাপনা ইউনিট গঠনের নিমিত্তে নীতিনির্ধারনী মহলের সম্মতি গ্রহণ এবং এর ব্যবস্থাপনা কাঠামোর একটি চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করা।