বিতর্কিত রাজাকারের তালিকা নিয়ে সমালোচনা শেষ হতে না হতেই শুরু হলো স্বাধীনতা পদক প্রাপ্তদের তালিকা নিয়ে বিতর্ক৷ রাজাকারের তালিকা করার পর সমালোচিত হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেছিলেন, বেয়াক্কেলের মতো কাজ করেছি৷ এবার স্বাধীনতা পদককে কী বলবেন তিনি? জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আহবায়কও তিনি!
সাহিত্য সংস্কৃতি, জনসেবা, শিক্ষাসহ বেশকিছু অঙ্গনে অবদানের জন্য প্রতি বছরই পুরস্কার প্রদান করা হয়৷ এবার এই পুরস্কার নিয়েও সৃষ্টি হলো বিতর্ক৷ এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদ কে? তার নাম পুরস্কার পাওয়ার আগে কেউ জানত না? তাহলে তিনি কিভাবে পুরস্কারটি পেয়ে গেলেন? তিনি কি পুরস্কার পাওয়ার জন্য আবেদন করলেন? আর সেই আবেদনে কাউকে দিয়ে সুপারিশ করালেন? এস এম রইজ উদ্দীনকে স্বাধীনতা পদক দিয়ে কেন পুরস্কারটিকে বিতর্কিত করা হলো?
মুক্তিযুদ্ধের এত বছর পর রাজাকারের তালিকা করেও প্রশ্নবিদ্ধ হতে হলো। এবার স্বাধীনতা পদকও প্রশ্নবিদ্ধ হলো৷ এই প্রশ্নবিদ্ধ তালিকাগুলো কারা, কেন করছে? দায়ীদের চিহ্নিত করা অতীব জরুরী৷ তা না করে কেবল পদক বাতিলে কোন লাভ নেই৷ যারা এস এম রইজ উদ্দীন আহম্মদকে স্বাধীনতা পদক দিলো তারাই কি আবার আরেকজনকে একই পুরস্কার দিচ্ছে? এবারের পদক নিয়ে রইজ উদ্দীন ছাড়াও আরও অন্যদের নিয়েও কথা উঠছে৷ এই কথাগুলোরও সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেয়া উচিত৷ স্বাধীনতা পদক স্বাধীনতার পক্ষের কবি লেখকরা পাবে, এটাই সংগত৷ রইজ উদ্দীনের কোন লেখনীর জন্য এই পুরস্কার দেয়া হলো৷ পুরস্কার প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য প্রকাশ আবশ্যক৷
পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন বোর্ডে কারা কারা থাকে? কর্তৃপক্ষ রইজ উদ্দীনকে জানলো কিভাবে৷ কোন পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশ হয়েছে তা দেখেছে এমন লোকও পাওয়া যায় না৷ এর আগে স্বাধীনতা বিরোধী আবু সালেহও দুইবার স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন৷ ১৯৮০ সালে জনসেবায় ও ১৯৮৫ সালে শিক্ষায় তিনি এ পদকে ভূষিত হন৷ শর্ষিনার পীর খ্যাত আবু সালেহর বিরুদ্ধে রয়েছে পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে মিলে বাঙালী হত্যার অভিযোগ। অথচ তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার পেলেন জনসেবায় ও শিক্ষায়! আসলে এই পুরস্কারগুলোর জন্য মনোনয়ন দেয় কারা? স্বাধীনতা, একুশে পদক খুবই সম্মানিত পদক৷ অনেক নিরলস সাহিত্যকর্মী সারাজীবন সাহিত্য চর্চা করেও এসবের ধারে কাছে যেতে পারে না৷ কারণ তারা লবিং ও তদবির করতে পারে না৷ পুরস্কারতো কোন চাকরি নয়, এটা সেবামূলক কর্মের স্বীকৃতি৷ সুতরাং এতে আবেদন নিবেদন কিংবা সুপারিশের প্রশ্ন আসতে পারে কিভাবে? বছরজুড়ে কর্মকৃতি পর্যবেক্ষণ করে এই পুরস্কার কিভাবে নির্ধারিত হয়? স্বাধীনতাবিরোধী আবু সালেহ কোন যুক্তিতে স্বাধীনতা পুরস্কার পেলো? সোশ্যাল মিডিয়ায় এ পুরস্কার বাতিল করা উচিত বলে মন্তব্য করছেন অনেকে৷
জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে এত এত মন্ত্রী ও সরকারী কর্মকর্তা থাকতে এতবড় ভুলটি হলো কী করে? এসএম রইজ উদ্দীন আহম্মদের চেনা এই কমিটিতে কারা কারা? আর তা হলে সেটি কি সাহিত্যিক হিসাবে না সাবেক সরকারী কর্মকর্তা হিসাবে? রইজ উদ্দীনের জন্ম ১৯৬০ সালে৷ বলা হয়েছে তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা৷ ১০ বছর বয়সে তিনি কি মুক্তিযোদ্ধা না কিশোর গেরিলা নাকি এখানেও গলদ-এ প্রশ্নও কেউ কেউ করছেন৷
কেবল রইজ উদ্দীন আহম্মদ নয় এখন কথা উঠছে স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত কালিপদ দাসকে নিয়েও৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়েও লেখালেখি হচ্ছে৷ বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান ফেসবুকে এক পোস্টে লেখেন: ‘এবার সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পেলেন রইজ উদ্দীন, ইনি কে? চিনি না তো। কালীপদ দাসই বা কে! হায়! স্বাধীনতা পুরস্কার!’
কবি সরদার ফারুক সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেন: ‘পুরস্কার পেলেন এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদ। তাকে প্রাণঢালা অভিনন্দন। তবে তিনি কে, অথবা তিনি কোথায়, কবে, কী লিখেছেন এসব জানতে চেয়ে লজ্জা দেবেন না৷’
তবে প্রকাশিত নতুন তালিকায় সাহিত্য ক্যাটাগরিতে পুরস্কারপ্রাপ্ত এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদের নাম বাদ পড়েছে৷ তিনি পুরস্কারটি পেয়েও আবার হারালেন৷ ২০ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত তালিকায় রইজ উদ্দীন আহম্মদকে সাহিত্য ক্যাটাগরিতে পুরষ্কার দেয়া হয়। এই তালিকায় মোট নয় ব্যক্তি এবং একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল।
১২ মার্চ বৃহস্পতিবার মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ যে সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করে তাতে সাহিত্য ক্যাটাগরিতে বিজয়ী ঘোষিত এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদের নাম নেই। এমনকি সাহিত্য ক্যাটাগরিটিই সেখানে নেই৷ এই শূন্যস্থান আবার কোন সংশোধিত তালিকায় পূর্ণ হচ্ছে? আর সেই ভাগ্যবান কবি কে হচ্ছেন? সেটি নির্ধারণ করার মানদণ্ড কী? এত কবির ভিড়ে কোন কবিকে তারা বেছে নেবেন? আর বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়াটি কী?
বাংলাদেশে এই পুরস্কারটির জন্য সবাই মুখিয়ে থাকে৷ কাউকে কাউকে উপযাচক হয়ে তা চেয়ে নিতেও দেখা যায়৷ পদক বাতিল, সংশোধিত তালিকা ও বাতিল স্থান পূর্ণ করে চূড়ান্ত তালিকার মধ্য দিয়ে একটা সুস্থ প্রক্রিয়া চালু হবে বলে প্রত্যাশা৷ আর এই ভুল নির্বাচনটা হলো কিভাবে ও তার দায় কার তাও উন্মোচিত হবে বলে আশা রাখি৷ এমন ভুলের পুনরাবৃত্তি চাই না৷
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)