চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

স্বাধীনতা পদক নিয়ে ‘ক্ষুব্ধ’ নির্মলেন্দু গুণ

স্বাধীনতা পদক নিয়ে এবার মুখ খুললেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। এই বিষয়ে নিজের ক্ষোভ ও দুঃখের কথা অবশেষে প্রকাশ করলেন এই কবি।

চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথোপকথনে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়েও বলেছেন, স্বাধীনতা নিয়ে, বঙ্গবন্ধু নিয়ে বা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কবি নির্মলেন্দু গুণসহ যেসব কবি-সাহিত্যিক লেখালেখি করেছেন; তাদের সবাইকে আমরা সবসময় শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবো। যারা এসব গল্প তুলে এনেছেন তাদের কথায় আমরা গর্বভরে স্মরণ করবো। সেই গর্বের প্রতিফলন কোথায়? ভেবেছিলাম সরকারি সবগুলো পুরস্কার একে একে পাবো। এটাকেই আমি আমার পোস্ট-এ মুলা হিসেবে উল্লেখ করেছি।’ 

গতকাল বৃহস্পতিবার নিজের ফেসবুকে একটি পোস্টে নির্মলেন্দু গুণ নিজের মনের কথা জানান। সেখানে ‘স্বাধীনতা শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’ কবিতার রচয়িতা লিখেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান 1976 সালে একুশে পদক প্রবর্তন করেন। বঙ্গভবনে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে প্রথমবারের মতো একুশে পদক প্রদান করা হয়। পরে কবি জসীম উদ্দীন ও বেগম সুফিয়া কামাল একুশে পদকে ভূষিত হন।

অজানা কারণে আমি ঐ অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত অতিথি ছিলাম। কিন্তু তৎকালীন কেবিনেট সচিব শফিউল আজম একুশে পদকের মানপত্রটি ইংরেজীতে পাঠ করার প্রতিবাদ জানালে আমাকে বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে বের করে দেয়া হয়। তাই পুরো অনুষ্ঠানটি আমার দেখার সুযোগ হয়নি, যদিও আমার নিমন্ত্রণ পুরো অনুষ্ঠানের জন্যই বৈধ ছিলো।’

এরপর জিয়া সরকারের সময়ের আরেকটি ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘সম্ভবত পরের বছর (1977) স্বাধীনতা বিরোধীদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে জেনারেল জিয়া একুশে পদকের পাশাপাশি “স্বাধীনতা পদক” চালু করেন। জিয়ার সবই খারাপ বিবেচনায় জেনারেল জিয়ার বাকি অনেককিছু পরিত্যাগ করলেও তার প্রবর্তিত একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদক প্রদানপ্রথাটি শেখ হাসিনা ত্যাগ করেননি। এই পুরস্কার দুটি চালু রাখা হয়।

এরপর ২০০০ সালে শেখ হাসিনার সরকার আমাকে একুশে পদকের জন্য মনোনীত করেন। কিন্তু সেই পদক তিনি নিজ হস্তে আমাকে প্রদান করে যেতে পারননি। তখন নিয়ম ছিল প্রাপকের নাম ঘোষণার পরের বছর পুরস্কার দেয়া। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন এবং ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে বেগম খালেদা জিয়া হাসিমুখে আমাকে একুশে পদক প্রদান করেন।’

এরপরের ১৫ বছরের কথা উল্লেখ করে এই কবি লিখেন, ‘তারপর ১৫ বছর কেটে গেছে। এর মধ্যে আট বছর কেটেছে শেখ হাসিনার সরকারের। শেখ হাসিনা স্বাধীনতা পদকের মুলোটি আমার নাকের ডগায় ঝুলিয়ে রেখেছেন। কিন্তু কিছুতেই সেটি আমাকে দিচ্ছেন না। উনার যোগ্য ব্যক্তির তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হতে হতে আকাশ ছুঁয়েছে। কিন্ত সেই তালিকায় আমার স্থান হচ্ছে না। আমার একদা সহপাঠিনী, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার দৃষ্টে আমি প্রথম কিছুকাল অবাক হয়েছিলাম- কিন্তু আজকাল খুবই বিরক্ত বোধ করছি। অসম্মানিত বোধ করছি। ক্ষুব্ধ বোধ করছি।

আমাকে উপেক্ষা করার বা কবি হিসেবে সামান্য ভাবার সাহস যার হয়, তাকে উপেক্ষা করার শক্তি আমার ভিতরে অনেক আগে থেকেই ছিল, এখনও রয়েছে। পারলে ভুল সংশোধন করুন। অথবা পরে এক সময় আমাকে এই পদকটি দেয়া যাবে, এই ধারণা চিরতরে পরিত্যাগ করুন।’