অভিনেতা হিসেবে প্রথমবার দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি (জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার) অর্জন করলেন ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়ক সিয়াম আহমেদ। বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে এ পুরস্কার গ্রহণ করেন তিনি।
পুরস্কার হাতে নিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। সেইসঙ্গে কৃতজ্ঞতা জানালেন নিজের পরিবার এবং ‘বিশ্বসুন্দরী’ সিনেমার পুরো টিমকে। বিকেলে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন সিয়াম। তার কথাগুলো হুবহু তুলে ধরা হলো…
‘মানুষের ভালোবাসা হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার রহমত। এটার ওপরে তো কিছু নেই। সবসময়ই মানুষের ভালোবাসা পেয়ে এসেছি, এখনও পাচ্ছি। কিন্তু একটা দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পাওয়ার সুপ্ত বাসনা তো সবার মনেই থাকে যে, একদিন হয়তো দেশ আমাদেরকে এ সম্মাননা দেবে। এ সম্মাননা প্রাপ্তি মানেই তো যেকোন শিল্পীর জন্য স্বপ্ন সত্যি হয়ে যাওয়ার মত ঘটনা।
আলহামদুলিল্লাহ যে দুই বছরের ক্যারিয়ারেই এ সম্মাননা পেয়েছি। এরজন্য দর্শকদের ভালোবাসা তো আছেই, বিশেষ করে যারা তরুণ শিক্ষার্থী রয়েছেন, তাদের ভালোবাসা যেভাবে পেয়েছি সেভাবেই সকল মায়েদের ভালোবাসা পেয়েছি। একইভাবে দাদী-নানীদের ভালোবাসা, সেইসাথে এখন ছোট ছোট বাচ্চাদেরও ভালোবাসা পাচ্ছি। সামগ্রিকভাবে এই ভালোবাসার মূল্য আসলে অনেক।
‘পোড়ামন ২’ ছবির মাধ্যমে ২০১৮ তে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করি। আমার অভিজ্ঞতা এখনও অনেক কম; খুবই নগণ্য একজন শিল্পী আমি। সেই জায়গা থেকে এত অল্প সময়ে এত বড় সম্মাননা আসলে আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। এটা কাজের প্রতি দায়িত্ববোধ আরও অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে, মনে হয়েছে আরও অনেক বেশি এফোর্ট দেওয়া দরকার।
আমি যখন পুরস্কারটা গ্রহণ করছিলাম তখন আমি শুধু আমার পরিবারের দিকে তাকাচ্ছিলাম আমার বাবা, মা, স্ত্রীর দিকে। আমি শুধু ভাবছিলাম যে, আমি কখন এটা তাদের হাতে তুলে দেব। আমার চেয়ে তাদের অনুভূতিটাই আমার বেশি ভালো লাগছিল। এই পুরস্কারটা আসলে তাদের, এই পুরস্কারটা আমার টিমের।
আমি যখন পুরস্কারটা আমার পরিচালকের হাতে তুলে দিচ্ছিলাম দেখলাম তার চোখে পানি চলে এসেছে। পজেটিভ নেগেটিভ অনেক আলোচনায় হবে কিন্তু এই অনুভূতিগুলো তো সারাজীবন থেকে যাবে। শুটিং করার সময় তো আসলে এভাবে চিন্তা করে কাজ করি না। তবে আমার পরিচালক এবং চম্পা ম্যাডাম, যাকে মা বলে ডাকি সেটে উনারা আমাকে ভীষণ সহযোগিতা করেছেন, অনুপ্রাণিত করেছেন। কিছু কিছু দৃশ্য করার পর আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন, বুঝিয়েছেন এবং ভালো হলে সেটা ভালো বলেছেন।
এছাড়া চিত্রনাট্যকার রুম্মান রশীদ খানও অনেক সহযোগিতা করেছেন। তিনি বলেছিলেন যে, তুমি কতটুকু পারফর্ম করতে পারবা জানি না, তবে যদি করতে পারো তাহলে হয়তো এটা তোমাকে দেশের মধ্যে একটা সম্মান এনে দেবে। অনেক মানুষের ভালোবাসা পাবে। দায়িত্ববোধ নিয়ে বলবো, শুটিং সেটে যাওয়ার আগে তো কখনও এমন মনমানসিকতা নিয়ে যাই না যে, আজকে একটু কম এফোর্ট দিবো! সবসময় তো নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করি।
সব কাজ হয়তো সবার ভালো লাগবে না, সবার মন জয় করতেও পারবো না। তবে চেষ্টা করি যতটা সম্ভব বেশি মানুষের মন জয় করার। তবে এমন সম্মাননা তো দায়িত্ববোধ অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়, তাই চেষ্টা থাকবে যেটুকু ভুল থাকে সেটাকে আরও ভালো করে এফোর্ট দিয়ে কাজটা শেষ করার। নাটক থেকে সিনেমায় আসার পর দর্শকদের আরও অনেক বেশি ভালোবাসা পেয়েছি এবং সেটা খুব কাছ থেকে অনুভব করতে পেরেছি। বিভিন্ন জায়গায় শুটিং করতে যাওয়ার সুবাদে কিংবা কোথাও গেলে সেখানে সবার অনেক অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। যতটুকু পেয়েছি এটুক অনেক।