১৯১৮ সালে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া স্প্যানিশ ফ্লুতে ৫০ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়। এতে ৫ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। করোনাভাইরাসের মতো এই স্প্যানিশ ফ্লু এর প্রভাবও পড়েছিল হলিউডে। থেমে গিয়েছিল শুটিং, বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সব সিনেমা হল।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ তখন শেষের পথে। হলিউড আশার আলো দেখছে। ধীরে ধীরে শুটিং শুরু হয়ে সব স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। আমেরিকার প্রায় ২০০০০ সিনেমা হল গমগম করছে সিনেমাপ্রেমীদের ভিড়ে। কৃষি, কয়লা, স্টিল, ট্রান্সপোর্টেশনের পর বিনিয়োগের দিক থেকে পঞ্চমে ছিল সিনেমা। ২৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়েছিল সিনেমার উন্নয়নের জন্য। কিন্তু সব থমকে যায় স্প্যানিশ ফ্লু এর প্রকোপে।
বর্তমান সময়ের মতোই তখন সব স্টুডিও, থিয়েটার বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয় ভাইরাসের ভয়ে। অনিশ্চিত হয়ে যায় এসব পেশায় জড়িতদের জীবন।
বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে লস অ্যাঞ্জেলসে ঝুঁকি নিয়ে স্বল্প পরিসরে কিছু শুটিং এর কাজ চালানো হচ্ছিল। কিন্তু নিউ ইয়র্ক থেকে খবর আসে ‘ভেনাস ইন দ্য ইস্ট’ ছবির শুটিং এর সময় জনপ্রিয় অভিনেতা ব্রায়ান্ট ওয়াশবার্ন তার সহ-শিল্পী অ্যানা কিউ নিলসনকে সংক্রমিত করেছেন। এই খবর ছড়ানোর পরে ধীরে ধীরে শুটিং পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
১৯ অক্টোবর জনপ্রিয় মেট্রো ম্যাটিনি তারকা হ্যারল্ড লকউড এবং রাশিয়ার প্রথম সিনে তারকা ভেরা খলোদনায়া স্প্যানিশ ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এতে শোকের ছায়া নামে সিনেমাপ্রেমীদের মনে।
ছোটখাটো কয়েকটি স্টুডিও তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে ক্যালিফোর্নিয়া কংগ্রেসম্যান এইচজেড অসবর্নের কাছে লিখিত বার্তা পাঠান। সেখানে তারা উল্লেখ করেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আগেই স্টুডিও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বড় ক্ষতি হয়েছে তাদের। এমনকি এক মাস স্টুডিও বন্ধ রাখলেও কর্মীদের বেতন দেয়া যাবে না।
অক্টোবরের শেষে কিছু সিনেমার কাজ আবার শুরু হয়। তখনও স্প্ল্যানিশ ফ্লু তার দাপট দেখাচ্ছিল লস অ্যাঞ্জেলসে। পুলিশ চিফ নিয়ম জারি করেছিল সিনেমায় কোনো জনবহুল দৃশ্য দেখানো যাবে না।
স্টুডিওগুলোতে ঢোকার আগে জীবাণুনাশক ছিটানো হতো শরীরে। কোনো কোনো স্টুডিওতে কর্মীদের মাস্ক বিতরণ করা হয়েছিল। এত সাবধানতার পরেও নভেম্বরের শুরুতে নির্বাক ছবির তারকা লিলিয়ান গিশ সানসেট স্টুডিওতে কাজ করতে গিয়ে ফ্লুতে আক্রান্ত হন। তার বোন এবং সহ-শিল্পী ডরোথিও সংক্রমিত হন। এছাড়াও অভিনেত্রী অলিভ থমাস এবং স্ক্রিন রাইটার ফ্র্যান্সেস ম্যারিয়ন ফ্লুতে আক্রান্ত হন। নভেম্বরের শেষের দিকে আক্রান্ত হন নির্মাতা অ্যালান ডিওয়ান।
১৯১৯ এর বসন্তে স্প্যানিশ ফ্লু এর প্রকোপ কমতে শুরু করে। স্টুডিওগুলোও আবার আগের মতো ব্যস্ত হতে শুরু করে। তবে স্প্যানিশ ফ্লু এর ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বহু সময় লেগে গিয়েছিল। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাসে স্প্যানিশ ফ্লু রয়ে যায় ইতিহাসের করুন এক অধ্যায় হয়ে। হলিউড রিপোর্টার