২০১৬ ইউরোতে ইতালির কাছে হেরে দ্বিতীয় রাউন্ডেই বাদ পড়ার পর স্প্যানিশদের নতুন শুরুর জন্য ডাক পড়ে হুলেন লোপেত্তেগির। ভিসেন্তে ডেল বস্কের উত্তরসূরি হওয়ার মতো যোগ্যতা তার ছিল কিনা এমন প্রশ্নে পক্ষে খুব কম শুভাকাঙ্ক্ষীকেই পেয়েছিলেন লোপেত্তেগি।
দুই বছর পার হওয়ার পর লা রোজাদের কোচ হিসেবে যোগ্যতা আছে কিনা এমন প্রশ্ন যদি ওঠেই, তবে লোপেত্তেগির বিপক্ষে যাবেন খুব কম ফুটবলবোদ্ধাই। এবারের স্পেন যেন ঠিক ২০১০ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলটির মতোই ক্ষীপ্র। বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট দলতো অবশ্যই।
৫৮ বছর বয়সী এ কোচ এখন ব্যস্ত শিষ্যদের নিয়ে বিশ্বকাপের রণকৌশল গোছাতে। তারই ফাঁকে সাক্ষাৎকারে জানিয়ে দিলেন নিজের বিশ্বকাপ ভাবনাও। যেখানে উঠে এসেছে রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনা প্রসঙ্গ। যার কিছু অংশ বরাদ্দ থাকল স্পেন-পর্তুগাল ম্যাচ নিয়েও-
২০১৪ বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়ার পর ২০১৬ ইউরোতে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায়। রাশিয়া বিশ্বকাপে স্পেন কী ফিরে আসতে পারবে?
লোপেত্তেগি: অবশ্যই আমরা ফিরে আসবো। সত্যি বলতে আমাদের ফিরে আসা উচিতও। কোনো কারণ তো নেই ভালো না খেলার। আমাদের ভালো একটা দল আছে। দলের প্রত্যেকে বিশ্বকাপে নিজেদের সেরাটা দিতে মুখিয়ে আছে। প্রস্তুতিও হয়েছে দারুণ। কোনো প্রকার চোটের ঝামেলা নেই। আমরা দারুণ একটা খেলা উপহার দিতে মুখিয়ে আছি।
তাহলে ওই দুই আসরে(বিশ্বকাপ ও ইউরো) কী সমস্যা ছিল?
লোপেত্তেগি: আমি তো সেসময় কোচ ছিলাম না। তাই এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।
আচ্ছা, তাহলে অন্য পথে এগোনো যাক। ২০১৬ সালে ভিসেন্তে ডেল বস্ক সরে যাওয়ার পর আপনার হাত ধরে টানা ১৮ ম্যাচে হার দেখেনি স্পেন। ১৩টিতেই পেয়েছে জয়। দলের এমন রূপান্তরের কারণটা কী?
লোপেত্তেগি: স্পেন সাধারণত একসঙ্গে অনেক ম্যাচ হারে না। আমরা বিশ্বকাপ বাছাইয়ে খেলেছি, আর সঙ্গে কিছু প্রীতি ম্যাচও। পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে আমরা দারুণ খেলেছি। কিছু বড় বড় ম্যাচ ছিল মাঝে। যেমন বাছাইপর্বে ইতালি ছিল আমাদের গ্রুপে। দুঃখের বিষয় তারা বিশ্বকাপে আসতেই পারল না।
২০১০ সালে স্পেন যখন বিশ্বকাপ জিতল, সেবার একাদশে ছয়-সাতজনই ছিল বার্সেলোনার খেলোয়াড়। আট বছর পর রাশিয়া বিশ্বকাপের জন্য স্পেন দলের বেশিরভাগই রিয়াল মাদ্রিদের। আরেকটি পরিবর্তন?
লোপেত্তেগি: আচ্ছা, ২০১০ সালেও খেলোয়াড়রা স্পেনের হয়ে খেলেছে। এখনও তারা স্পেনের হয়েই খেলবে। আমি যখন জাতীয় দলের দায়িত্বে আছি, তখন ক্লাব নিয়ে ভেদাভেদ করতে চাই না। যারা ভালো খেলেছে, তারাই জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে। অন্য বিষয় এখানে মুখ্য নয়। ২০১০ সালেও রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ইকার ক্যাসিয়াস, সার্জিও রামোস আর জাবি আলোনসোরা খেলেছে। তারা আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, জাভি হার্নান্দেজ, সার্জিও বুস্কেটসদের মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিশ্বকাপ জিততে আপনার সেরা খেলোয়াড়দের লাগবে। নির্দিষ্ট এক দলের বিশেষ কিছু খেলোয়াড় নয়।
কিন্তু একই ক্লাব থেকে যদি একাধিক খেলোয়াড় উঠে আসে সেটা দলের জন্যই তো ভালো। তাই নয় কী?
লোপেত্তেগি: তা ঠিক। কিন্তু এটা কিন্তু বাধ্যতামূলক নয়। আপনাকে খেলোয়াড়দের যোগ্যতা বিচারে ফুটবলার বাছাই করতে হবে। যাকে নিতে চান তার পজিশন, খেলার ধরণ, পদ্ধতি আর ফর্ম গণনায় আনতে হবে। আমাদের দেশে দারুণ একটা লিগ আছে। বিশ্বের সেরা সেরা খেলোয়াড়রা আমাদের দুটো বড় দলের হয়ে নিজেকে প্রমাণ করে যায়। স্বাভাবিকভাবেই দল নির্বাচনের সময় আমরা সেই দুই দলের দিকে একটু ঝুঁকে থাকি।
২০১০ সালে তো গোল করা নিয়ে খুব সমস্যা ছিল। সাত ম্যাচে মাত্র আট গোল!
লোপেত্তেগি: আপনি যদি শেষ দুই বছরের পরিসংখ্যান ঘাঁটান, দেখতে পাবেন আমাদের গোল ব্যবধানটা ছিল ৪৫’র বেশি। ১৮ ম্যাচে ৬০টির বেশি গোল করেছি আমরা। ম্যাচ প্রতি দুই থেকে তিনটা করে। যেকোনো দলের জন্য দারুণ ইতিবাচক। ভালো দলগুলো প্রতি ম্যাচে দুইয়ের বেশি গোল করে। আমরা আমাদের পারফরম্যান্স নিয়ে বেশ খুশি। আর আমাদের এমনিতেই বেশি বেশি গোল করা জরুরি।
আপনাদের প্রথম ম্যাচ পর্তুগালের বিপক্ষে, যার নেতৃত্বে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। রিয়াল মাদ্রিদ কিংবদন্তি। আইভরিয়ান ডার্বির(স্পেন-পর্তুগাল ম্যাচকে আইভরিয়ান ডার্বি বলা হয়) একজন সেরা খেলোয়াড়।
লোপেত্তেগি: প্রথমত। ক্রিস্টিয়ানো সবদিক থেকেই একজন কিংবদন্তি। একজন কিংবদন্তি খেলোয়াড় যে ক্লাবের হয়ে খেলুক না কেন বিস্ময় ঘটায়।
দ্বিতীয়ত, আমরা বর্তমান ইউরো চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে খেলবো। তবে ফুটবলটা একজনের সঙ্গে একজনের লড়াই নয়। ফুটবলটা এক ভিন্ন খেলা। আপনি দলের হয়ে কীভাবে খেলবেন সেটাই মুখ্য বিষয়। রোনালদো একাই একটি ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়ার যোগ্যতা রাখে। কিন্তু তার ঝলক থাকে হঠাত হঠাত, যদি আপনি প্রস্তুত না থাকেন।
আপনাকে সবরকম পরিস্থিতির জন্যই তৈরি থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে এটা স্পেন বনাম রোনালদো অথবা রোনালদো বনাম রামোসের খেলা নয়। মনে রাখতে আইভরিয়ান ডার্বি হল বিশ্বকাপের একটা ম্যাচ!