বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তে পুঁতে রাখা স্থল মাইন ও সেনাবাহিনী ও সীমান্ত পুলিশের গুলি থেকে বেঁচে নিরাপদে পালিয়ে আসতে স্থল পথের পরিবর্তে সমুদ্রপথকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা।
মাছ ধরা ট্রলারে করে বাংলাদেশে আসতে মাথাপিছু পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা করে গুনতে হচ্ছে তাদের। যারা এই অর্থ যোগাড় করতে পারছে না, তারা হাতের মুঠোতে প্রাণ রেখেই স্থল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে এসে ঢুকছে।
যেসব শরণার্থী টাকা দিতে পারে না, তাদেরকে আটকে রাখে জেলেরা। পরে আত্মীয় বা পরিচিত কেউ টাকা শোধ করলে ছাড়া পায় তারা। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের হস্তক্ষেপে মুক্তি মেলে।
এরকম একজন মোহাম্মদ। যিনি মাছের ট্রলারে করে টেকনাফ বন্দরে নেমেছেন। তার কোলের বাচ্চাটির বয়স অনেক কম। মাত্র নয়দিন আগেই তার জন্ম হয়েছে। তার নাম এখনও ঠিক হয়নি। জন্মের আগেই তার পরিবার সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়।
এই ছোট্ট শিশুটিকে এই বয়সেই যে যন্ত্রণা ও নিপীড়ন সহ্য করতে হয়েছে, তা একজন মানুষ হয়তো সম্পূর্ণ জীবনেও তা সহ্য করেন না।
মোহাম্মদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা টানা তিনদিন জঙ্গলের ভিতর দিয়ে হেঁটেছি। সেখানে এই শিশুর জন্ম হয়।’
মিয়ানমার বাংলাদেশ সীমান্তের একটি জায়গায় তারা এক রাত অপেক্ষা করেন। পরে মাছ ধরা ট্রলারে ঠাঁই মেলে তাদের। দীর্ঘ পাঁচ ঘন্টা বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউ মোকাবেলা করার পর তারা পৌঁছেন টেকনাফে।
কিছুক্ষণ পর পর টেকনাফ উপকূলে রোহিঙ্গা শরণার্থী বোঝাই একরকম অনেক মাছ ধরা ট্রলার ভিড়ছে। তীরে এসে ট্রলার থামার পর শরণার্থীদের কেউ কেউ নৌ-যান থেকে নিচে নামতে গিয়ে ঢলে পড়ে যাচ্ছেন। নিশ্চিত মৃত্যু মাথায় নিয়ে মৃত্যুপূরীর ভিতর দিয়ে টেকনাফে আসতেই অনেকে অজ্ঞান হয়ে পড়ছে।
ক্ষুধা, পানিশূন্যতা, ক্ষত-বিক্ষত শরীর, ক্লান্তি, ভয়সহ নানা ধরনের প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করে এদের অধিকাংশেরই অমানবিক মৃত্যু হয়েছে।
পরিবারের ১০ সদস্য নিয়ে টেকনাফে আসা হাফেজ মোহাম্মদ (৪৫) জানান, মিয়ানমারে পোর্টে আরও অসংখ্য মানুষ ট্রলারের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের সবাইকে ট্রলারে করে বাংলাদেশে আনতে একমাসের বেশি সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।