রাজধানীর একটি ক্লু-লেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের দাবি করে পুলিশ বলছে, দেবর-ভাবির ৮ বছরের অনৈতিক সম্পর্কের জেরে ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে খুন করা হয় স্বামীকে।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর বনানীতে গুলশান উপ-পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য তুলে ধরেন গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ।
পুলিশের দাবি, দেবর আজমল হক মিন্টু তার ভাবিকে কাজল রেখাকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু কাজল তাকে জানায়, তার দুই সন্তান রয়েছে। বিয়ে করতে হলে স্বামী মনিরুজ্জামান মনিরকে সরিয়ে দিতে হবে। ভাবির কথা শুনেই বড় ভাই মনিরকে হত্যা করতে তিনজন ভাড়াটে খুনির সঙ্গে ১ লাখ টাকার চুক্তি করে মিন্টু।
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ সেপ্টেম্বর সকালে বাড্ডার সাতারকুলের মেরুল হিন্দু পাড়ায় রাম মঙ্গলের বাড়ির পাশে খোলা মাঠ থেকে গলা ও পেটে ছুরিকাঘাত করা একটি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পরে আজমল হক মিন্টু ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে নিহতের পরিচয় সনাক্ত করে জানায়, এটা তার বড় ভাই মনিরুজ্জামান মনির লাশ। তাদের গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরে।
এই ঘটনায় মিন্টু বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলাও দায়ের করে। এটি ছিনতাইজনিত ঘটনা হতে পারে বলেও পুলিশকে প্রাথমিকভাবে জানায় মিন্টু।
মামলার তদন্তে নেমে পুলিশ নিহত মনিরের স্ত্রী কাজলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাতেই লোমহর্ষক এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা এবং জড়িতদের নাম উঠে আসে।
গত শুক্রবার আদালতে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন কাজল।
বাড্ডা থানা পুলিশ তার দেয়া তথ্য এবং জবানবন্দীর ভিত্তিতে শুক্রবার রাতেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিন্টুসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তাকৃতরা হলো; আব্দুল মান্নান, সোহাগ ওরফে শাওন, ফাহিম।
ডিসি মোস্তাক বলেন: নিহত মনির ফেনীতে কাজ করতেন। তবে তার পরিবার থাকতো গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরে। সম্প্রতি তিনি বাড়ি যান। তখনই হত্যার পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘাতক মিন্টু তার বড় ভাই মনিরকে ফোন দিয়ে জানায়, অামি বিয়ে করবো, তাই ঢাকায় মেয়ে দেখেছি, তুমি এসে দেখে যাও।
‘এতে মনির রাজি না হওয়াতে মিন্টু বারবার অনুরোধ করে এবং মনির দিনাজপুর থেকে ঢাকার গাবতলী আসেন। সে ঢাকা ভালমতো না চেনার কারণে সে তার ছোট ভাইকে ফোন দেয়। তখন মিন্টু ভাড়াটে খুনি মান্নানের নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বলে এবং সেখান থেকে তাকে নিয়ে আসবে বলে জানায়।’
মোস্তাক আরো বলেন, মান্নান পরিকল্পনা অনুযায়ী মনিরকে বাড্ডা সাতারকুলের নির্জন ওই স্থানে নিয়ে যায়। ওইসময় তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলে ভাটারে খুনি শাওন ও ফাহিম। তিনজনই উপর্যুপরি আঘাত করে মনিরের মৃত্যু নিশ্চিত করে।
এরপর হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি মিন্টুকে জানায় মান্নান। এরপর মিন্টু বিষয়টি তার ভাবি কাজল রেখাকে জানায়।
আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাদ দিয়ে মোস্তাক আহমেদ জানান, কিলিং মিশন শেষে চুক্তির অগ্রিম পাওয়া ৩০ হাজার টাকা নিজের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয় খুনিরা। এই টাকার মধ্য থেকে মান্নান নেয় ১০ হাজার টাকা, ফাহিমকে দেয়া হয় ৫ হাজার টাকা এবং বাকি ১৫ হাজার টাকা নেয় শাওন।
‘তিন ভাড়াটে খুনি থাকত কড়াইল বস্তিতে। তাদের ৩০ হাজার টাকা দেয়া হয় বাকি ৭০ হাজার টাকা পরে দিবে বলে জানায় আসামিরা।’
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমাণ্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।