ডাঃ মোঃ আবু বকর ছিদ্দিক ফয়সল: স্তন ক্যান্সার এক নিরব ঘাতক। বহির্বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও দিন দিন এ ক্যান্সারে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। তাই সচেতনতা, দ্রুত রোগ নির্ণয় ও সে অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ অতীব জরুরি।
স্তন ক্যান্সারের উপসর্গগুলোর মধ্যে ব্যথাহীন চাকা (Lump) স্তন ক্যান্সারের অন্যতম লক্ষণ। এছাড়া স্তনের বোঁটা (নিপল) দিয়ে রক্ত পড়া, স্তনের চামড়া কুঁচকে যাওয়া, বগলের নিচে চাকা, স্তনের আকার পরিবর্তন ও স্তনের বোঁটা ভেতরের দিকে ডেবে যাওয়া স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ।
স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি নিরুপণ খুবই জরুরি। দীর্ঘ প্রজনন কাল, নিঃসন্তান নারী ও যে মা স্তন দুগ্ধ পান করান না তাদের ঝুঁকি বেশি। পরিবারের ১ম ডিগ্রির আত্মীয়- মা, খালা, বোন, নানী কেউ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যায়। এছাড়াও দীর্ঘ সময় ধরে জন্মনিরোধক পিল ও হরমোন প্রতিস্থাপন পদ্ধতি গ্রহণ করলেও ঝুঁকি বাড়ে।
আতঙ্ক ও লজ্জা নয়, সচেতনতাই স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের অন্যতম হাতিয়ার। ৩৫ বছরের পর নিয়মিত (বছরে অন্তত ১ বার) স্তন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ সার্জন দ্বারা স্তন পরীক্ষা করা অত্যাবশ্যকীয়। নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করে প্রাথমিক পর্যায়ে স্তনের যেকোন সমস্যা সনাক্ত করা সম্ভব। স্তনে যেকোনো চাকা (lump) অনুভূত হলে, স্তনের আকার, বোঁটার কোন বিকৃতি, বগলের নিচে চাকা পরিলক্ষিত হলে দ্রুত সার্জনের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
যতদ্রুত রোগ নির্ণয় করা যাবে, ততো স্তন ক্যান্সার সার্জারীতে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে। স্তন ক্যান্সার শনাক্তকরণে রোগের ইতিহাস জানা খুবই জরুরি। বিশেষজ্ঞ সার্জন দ্বারা স্তন পরীক্ষা করা (Clinical Breast Examination ), রেডিওলোজিকাল পরীক্ষা- স্তন ও বগলের আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ম্যামোগ্রাফি এবং হিস্টোলজিক্যাল পরীক্ষা – FNAC, TRUCUT BIOPSY এর মাধ্যমে আমরা সহজেই রোগ নির্ণয় করতে পারি।
স্তন ক্যান্সার চিকিৎসার মধ্যে সার্জারি (অপারেশন) অন্যতম। প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় করা গেলে বর্তমানে সম্পূর্ণ স্তন না ফেলে (ব্রেস্ট কনজার্ভিং সার্জারী) চিকিৎসা সম্ভব। এছাড়াও ক্যান্সারযুক্ত স্তন সম্পূর্ণ কেটে ফেলে প্লাস্টিক সার্জারীর মাধ্যমে শূন্যস্থান প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। অপারেশন পরবর্তী চিকিৎসার মধ্যে কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ও হরমোন থেরাপি উল্লেখযোগ্য।
অপারেশন পরবর্তী ফলোআপ বিভিন্ন ধাপে সারাজীবন করতে হবে।
পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা, আধুনিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করে স্তন ক্যান্সারকে জয় করতে হবে। স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাসে এ হোক আমাদের অঙ্গীকার।
লেখক: এমবিবিএস(ঢাকা), বিসিএস(স্বাস্থ্য) এফ.সি.পি.এস (সার্জারী) আবাসিক সার্জন (ক্যাজুয়ালটি) কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। স্পেশালাইজড ব্রেস্ট (স্তন) সার্জারি বিশেষজ্ঞ।