ইঁদুরের দেহে পরীক্ষা চালিয়ে স্তন ক্যান্সারের কোষ হাড়ের ভেতর ঢুকে লুকিয়ে থাকা আটকে দিতে সফল হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক ইউনিভার্সিটির একটি গবেষকদল এই সফল গবেষণাটি করেছেন।
মারাত্মক এই ক্যান্সারে আক্রান্ত কোষগুলো সাধারণত দেহ থেকে হাড়ের অস্থিমজ্জার ভেতর থাকা রক্তনালীতে ঢুকে লুকিয়ে থাকে, যেখানে কেমোথেরাপি বা হরমোনাল থেরাপি পৌঁছাতে পারে না। সেখানে কোষগুলো দীর্ঘ সময় নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে। পরে সুযোগ বুঝে বেরিয়ে এসে আবার দেহে ছড়িয়ে পড়ে ক্যান্সার তৈরি করে।
অনেক রোগীর ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, টানা চিকিৎসায় ক্যান্সার নিরাময় হওয়ার বহু বছর পর আবার ক্যান্সার ফিরে এসে দেহের অন্য অংশকেও আক্রমণ করেছে। ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলো বোন ম্যারো বা অস্থিমজ্জায় লুকিয়ে থেকে আত্মরক্ষা করে বলে এমনটা সম্ভব হয় বলে এর আগে বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা যায়। এই বিপদেরই একটি সমাধান বের করেছেন বিজ্ঞানীরা।
শুধু তাই নয়, ইঁদুরের অস্থিমজ্জা থেকে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত কোষ বের করতেও সক্ষম হয়েছেন তারা। এর ফলে একদিকে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অন্যদিকে প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার মাধ্যমে দেহ থেকে তুলনামূলক সহজে স্তন ক্যান্সার নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে।
সায়েন্স ট্রান্সলেশনাল মেডিসিন নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে ডিউক ইউনিভার্সিটির ডিউক ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের ওই বিজ্ঞানীরা চলমান সময়ে (real-time) আণুবীক্ষণিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইঁদুরের দেহে অস্থিমজ্জার ভেতর স্তন ক্যান্সার কোষের যাওয়া-আসা পর্যবেক্ষণ করেন।
তারা দেখেন, অস্থিমজ্জায় থাকা ই-সিলেকটিন (E-selectin) নামের একটি প্রোটিন ক্যান্সার কোষকে অস্থিমজ্জায় ঢুকতে সুযোগ করে দেয়। অন্যদিকে, সিএক্সসিআর৪ (CXCR4) নামের আরেকটি প্রোটিন হাড়ে তাদের লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করে।
ইঁদুরকে ই-সিলেকটিন নিরোধক চিকিৎসা দেয়ার পর বিজ্ঞানীরা দেখেন, ক্যান্সার কোষগুলো আর অস্থিমজ্জায় আর ঢুকতে পারছে না। এর সঙ্গে সিএক্সসিআর৪ নিরোধক ব্যবহার করায় সেটি আক্রান্ত কোষগুলোকে উল্টো আবার রক্তে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।
গবেষকরা জানিয়েছেন, ইঁদুরের ওপর পরিচালিত ওই পরীক্ষাটি মানবদেহেও শিগগিরই চালানো হবে। তারা আশা করছেন, এর মাধ্যমে স্তন ক্যান্সারের সবচেয়ে ভয়াবহ সমস্যাগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।