বিগ ব্যাং থেকে কৃষ্ণবিবর- পুরো বিশ্বের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার জন্য যার মুখের দিকে এতদিন তাকিয়ে ছিল বিশ্ববাসী- তিনি স্টিফেন হকিং। মোটর নিউরনে আক্রান্ত হয়ে কয়েক দশক ধরে তিনি ছিলেন হুইল চেয়ারে। কিন্তু, শারীরিক অক্ষমতা দমাতে পারেনি তাঁকে। অসুস্থ অবস্থায় বিজ্ঞানের নানা ধাঁধার সমাধান করে গেছেন জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত।
টাইম ম্যাগাজিনের বাছাই করা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার ১০ প্রশ্নকর্তার ১০ টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন স্টিফেন হকিং।
আইনস্টাইনের সাথে কথা বলার সুযোগ পেলে কী বলতেন তাঁকে?
জিজ্ঞাসা করতাম তিনি কৃষ্ণবিবরে বিশ্বাস করতেন না কেন? আইনস্টাইনের ‘থিওরি অব রিলেটিভিটি’র সমীকরণে দেখা গেছে বড় নক্ষত্র কিংবা গ্যাসের বড় মেঘ নিজে ধ্বংস হয়ে এটি সৃষ্টি করে। আইনস্টাইন নিজেও সেটি জানতেন।
আপনার কি মনে হয় দূর মহাকাশে যাওয়া পর্যন্ত মানব সভ্যতা টিকে থাকবে?
আমার মতে সৌরজগতে বাস গড়ে তোলার জন্য এখনও সময় আছে অনেক। তবে, পৃথিবীর মতো বসবাসযোগ্য স্থান আর নেই। পৃথিবী বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়লে সভ্যতার টিকে থাকার বিষয়টি পরিষ্কার নয়। টিকে থাকতে আমাদের বিভিন্ন গ্রহে পোঁছাতে হবে। এ জন্য সময় লাগবে অনেক।
আপনার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আপনার কাজে কোনভাবে সহায়তা করেছে নাকি বাধার মুখে পড়েছেন?মোটর নিউরনের অসুখ আমার জন্য দুর্ভাগ্যজনক হলেও আমি সবকিছুর ক্ষেত্রে সৌভাগ্যবান। তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে কাজ করার সুযোগ আমি পেয়েছি, এক্ষেত্রে আমার অসুখ তেমন কোন বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। আমি বেশ কয়েকটি বইও লিখেছি।
নিজের জীবদ্দশায় বিজ্ঞানের কোন আবিষ্কার দেখতে চান?
পারমাণবিক শক্তির সংমিশ্রণে সত্যিকার জ্বালানী শক্তি দেখতে চাই, যা কোনরকম বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কিংবা দূষণ ঘটাবে না।
আপনার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় স্মৃতি কোনটি?
আমি যখন ১৯৯৭ সালে অ্যান্টার্কটিকা ভ্রমণে গিয়েছিলাম।
মহাবিশ্ব কি আসলেই ধ্বংস হবে? যদি হয়, তাহলে এরপর কী হবে?
মহাবিশ্ব ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে। শূন্যতা আর অন্ধকারের পরিমাণও বাড়ছে। মহাবিশ্বের কোন সমাপ্তি আসলে নেই। কিন্তু, বিগ ব্যাং এর একটা শুরু ছিল। তবে, তারও আগে কী ছিল এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে বলব, কিছুই ছিল না। যেমন দক্ষিণ মেরুর দক্ষিণে আর কিছুই নেই।
জীবনের প্রায় সব বিষয়ের রহস্য বা প্রশ্ন নিয়ে মানুষ আপনার কাছে জানতে চায়, এটিকে কি আপনি বিশাল এক দায়িত্ব বলে মনে করেন?
অবশ্যই আমার কাছে জীবনের সব সমস্যার সমাধান নেই। গণিত এবং পদার্থবিজ্ঞানের মাধ্যমে আমরা মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে জানা যায়। কিন্তু মানব চরিত্র নিয়ে কিছু বলা যায় না। এখনও অনেক কিছুর সমাধান বাকি। যেমন, অনেকের মতো আমিও নারী চরিত্র বুঝি না।
মৃত্যুর পরও চেতনা থাকার ব্যাপারে আপনি কি বিশ্বাস করেন?
মস্তিষ্ক হচ্ছে কম্পিউটারের মতো আর চেতনা হচ্ছে এর প্রোগ্রাম। কম্পিউটার বন্ধ হয়ে গেলে এটাও থেমে যায়। তাত্ত্বিক দিক থেকে নিউরাল নেটওয়ার্কে এটা আবার সৃষ্টি হতে পারে, কিন্তু বিষয়টি মানুষের স্মৃতিশক্তির সঙ্গে জড়িত বলে বিষয়টি একটু কঠিনই।
আপনার কোন বিষয়টি সাধারণ মানুষকে বিস্মিত করতে পারে?
গান। আমি সবধরনের গান পছন্দ, সেটা পপ, ক্লাসিকাল যা-ই হোক। ছেলে টিম এর সঙ্গে আমি ফর্মুলা ওয়ানও উপভোগ করি।
আপনার কি মনে হয় পদার্থবিজ্ঞান বোঝার জন্য যা প্রয়োজন তাঁর সবই মানুষ বুঝে ফেলবে- এমন দিন আসবে কখনও?
এটা আশা করি না। তাই যদি হয়, তখন তো আমার আর কোনো কাজ করার থাকবে না।