৩০ পার হলেই সৌম্য ডুবে যান মরীচিকায়! ঘরোয়া ক্রিকেট কিংবা জাতীয় দল; সব জায়গায় একই অবস্থা। কিন্তু কেন? সৌম্য নিজে সমস্যা ধরতে না পারলেও সাকিব-মুশফিকদের গুরু বলে পরিচিত কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম কিছু কারণের কথা বলেছেন।
‘মন্থর বলে সৌম্য সাবলীল নয়। এখানে ঘাটতি রয়ে গেছে। মন্থর বলগুলোতে চাইলেই সাবলীলভাবে রান করতে পারে না। সেটা অনেক সময় একজন ব্যাটসম্যানকে চাপে ফেলে দেয়,’ মন্তব্য করে বিসিবির সাবেক এই গেম ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার বলেন, ‘ডট বল দিচ্ছি, আবার ইচ্ছামতো খেলতে পারছি না, এসব ভেবে হয়তো অপ্রত্যাশিত শট খেলে আউট হয়ে যায়। আরও কয়েকজন খেলোয়াড় দেখেছি মন্থর বল আসলে সহজাত খেলাটা খেলতে পারে না। তখন ব্যাকরণের বাইরে চলে যায়। যেটা করতে অভ্যস্ত নয়, সেটা করে বসে। অনেক সময় আউটও হয়ে যায়। এজন্য স্কিল বাড়ানো দরকার। যে জায়গাটায় আটকে যায় সেখানটায় আলাদা করে কাজ করা উচিত।’
ক্রিকেটে অনেকেই ভাগ্যের দোহাই দেন। নাজমুল আবেদিন বিষয়টি মোটেও সেভাবে দেখেন না, ‘আমরা মনে করি ভাগ্যটাই হয়তো খারাপ। ভাগ্য খারাপ না, আসলে অন্য কোনো একটা ঘটনা নিশ্চয়ই ঘটছে। যে ৩০ করতে পারছে, সে কেন ৬০ কিংবা ১০০ করতে পারছে না? কারণ ছাড়া লম্বা সময় ধরে এমন হতে পারে না। টেকনিক্যাল ব্যাপার হতে পারে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপারও হতে পারে।’
এ বছর ওপেনিং জুটি ধুঁকেছে বাংলাদেশের। তামিম ইকবালকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি কেউ। এর পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নাজমুল আবেদিন বলেন, ‘যেকোনো ফরম্যাটে ওপেন করার জন্য একটু অন্য ধরনের স্কিল থাকতে হয়। যেকোনো কন্ডিশনে পারার যোগ্যতা থাকা দরকার। সেটা সুইং হোক, বাউন্স হোক। সমস্যা হচ্ছে যে একটা সময় ছিল যারা পেস খেলতে পারতো, ভাল সুইং বলে খেলতে পারতো তারাই ওপেনার হতো। এখন কিন্তু এটুকুই যথেষ্ট না। কারণ প্রথম ওভারেই দেখতে পাচ্ছি স্পিনার চলে আসছে। কনসেপ্টে পরিবর্তন এসেছে। শুরুতে স্পিন খেলার স্কিল অনেক ওপেনারের নেই। তাছাড়া পেসাররা স্লোয়ার করছে। আগের মতো ছয়টা বল গুড লেংথে করার যে চেষ্টা সেটা এখন নেই। ব্যাটসম্যানদের এসবের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে খেলা জরুরি।’
ভালো ওপেনার বের করতে ঘরোয়া ক্রিকেটের ব্যাটিং কন্ডিশন আরও কঠিন করার পক্ষে মত দেন তিনি, ‘আমাদের ব্যাটসম্যানদের ঘরোয়া ক্রিকেটে চাপের মুখে ব্যাটিং করতে হয় না। এটা একটা বড় সমস্যা। ডাটা বের করলে দেখবেন, মাঝের ওভারগুলোতে ঘরোয়া ক্রিকেটে আমাদের ব্যাটসম্যানরা পেস বল খেলে না, স্পিন খেলে। আন্তর্জাতিক ম্যাচে মাঝের ওভারগুলোতে যথেষ্ট পেস বল খেলতে হয়। ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাটিং কন্ডিশন কঠিন না হওয়ায় আন্তর্জাতিক ম্যাচে ওদের জন্য সমস্যা হয়ে যায়।’
সমস্যা নিয়ে সৌম্যর ভাবনাগুলো সমস্যার মতোই রহস্যময়। তিনি ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না কেন বারবার এমন হচ্ছে, ‘আমার যেটা হচ্ছে নিশ্চিতভাবে বলতে পারব না। একেকদিন একেকভাবে আউট হচ্ছি। হয়ত পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে গিয়ে হচ্ছে। হয়ত নিজেও ভাবছি ৩০ পার হয়ে গেছে…এরকম কোনো কিছু কিনা আসলে বের করতে হবে।’
এসব বলতে বলতে সৌম্য একটা যুক্তি দেখালেন তার এই অবস্থার জন্য, ‘অনেকের ইনিংসের শুরু থেকেই সমস্যা হয়। আমার হয়তবা ৩০ রান করার পর হচ্ছে। তারপর দলের কথা চিন্তা করতে হচ্ছে। ওই সময় যদি আমি মন্থর হয়ে যাই টিমের অবস্থান মন্থর হয়ে যাবে। কেবল নিজের জন্য খেললে হয়ত এখান থেকে বের হওয়া সম্ভব। কিন্তু দলের কথা চিন্তা করে খেললে একটু কঠিন হয়ে যায়। ৩০ রান করার পর যদি আমি দেখেশুনে ব্যাটিং করি, তাহলে দলে প্রভাব পড়তে পারে।’