কার্ডিফে আগে যে দুই জয় পেয়েছে বাংলাদেশ তার প্রতিটিই ঐতিহাসিক। ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়া, ১২ বছর পর নিউজিল্যান্ড; দুটি জয়ই একেকটি মহাকাব্য। তবে সৌভাগ্যের সেই মাঠে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার দল তাদের তৃতীয় ম্যাচে আরেকটি মহাকাব্যের সামনে। তবে সেটা লিখতে পারবে কিনা সেটা সময় বলবে। কারণ তা করতে হলে বিশ্বকাপে নতুন কীর্তি গড়তে হবে টাইগারদের! জিততে হবে রেকর্ড ৩৮৭ রান তুলে।
সোফিয়া গার্ডেনের উইকেট বৃষ্টির কারণে উইকেট ঢাকা ছিল প্রায় দুই দিন। সূর্যের দেখা না পাওয়া এমন উইকেট হতে পারে বোলারদের স্বর্গরাজ্য, এই ভাবনা থেকে তাই টস জিতে বোলিং করার স্বিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। কিন্তু সেই স্বিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত তার দিকেই বুমেরাং হয়ে ছুটে এল। সবুজ উইকেটেই সাকিব-মোস্তাফিজদের বেশুমার পিটিয়ে ৬ উইকেটে ৩৮৬ রানের পাহাড় বানালো ইংল্যান্ড! ওয়ানডে ক্রিকেটে যা সপ্তম সর্বোচ্চ ইনিংস।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে এ পর্যন্ত চারশ বা তার বেশি রান হয়েছে মোট চারবার। এর মধ্যে ২০১৫ বিশ্বকাপেই হয় তিনবার। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৪১৭ করে অস্ট্রেলিয়া। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সাউথ আফ্রিকা করেছিল ৪১১। প্রোটিয়ারাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে করে ৪০৮ রান। এছাড়া ২০০৭ বিশ্বকাপে বারমুডার বিপক্ষে ৪১৩ করেছিল ভারত। ইংল্যান্ড প্রায় কাছাকাছি গিয়ে থামল।
বিশ্বকাপের ইতিহাস বলে ৩৩০ রান করতে পারলেই প্রথমে ব্যাট করা দল হয়ে যায় নিশ্চিন্ত, কারণ ২০১১ সালে আয়ারল্যান্ড যে সীমা রেখে বেঁধে দিয়েছিল তা এখন পর্যন্ত পার করাই হয়নি কোনো দলের। সে আসরে ইংলিশদের বিপক্ষে ৩২৭ রান তাড়া করে আইরিশদের খেপাটে জয়টাই এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান তাড়ার জয়! বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের হ্যাটট্রিক করতে হলে এখন রান পাহাড় টপকানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প খোলা নেই টাইগারদের সামনে।
তবে বাংলাদেশের সামনে অনুপ্রেরণা হতে পারে ২০১৫ বিশ্বকাপ। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৩২১ রান তাড়া করে জিতেছিল মাশরাফী দল। এটা বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাড়া করে জেতার রেকর্ড।
বাংলাদেশের সৌভাগ্য, রানটা ৪০০ হয়নি। শুরুতে যেভাবে তেড়েফুঁড়ে খেলেছেন দুই ওপেনার জেসন রয় ও জনি বেয়ারস্টো, রান সাড়ে চারশো হলেও অস্বাভাবিক কিছু হত না। চার বছর আগে বাংলাদেশের কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ার ক্ষতে প্রলেপ দিতেই কী এমন আক্রমণাত্নক শুরু স্বাগতিকদের, এই সম্ভাবনাও কিন্তু উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না!
অথচ ইংলিশদের শুরুর পাঁচ ওভার দেখে মনে হয়নি পরের ৪৫ ওভারে দলটা ঘুরে যাবে ১৮০ ডিগ্রী! বল হাতে শুরু করেছিলেন সাকিব আল হাসান। পরে মাশরাফী। প্রথম পাঁচ ওভারে রান মাত্র ৬!
মাশরাফীর করা ষষ্ঠ ওভারে ১১ রান তুলে সেই যে ঘুরে দাঁড়াল ইংল্যান্ড, এরপর আর পেছনেই তাকায়নি। এরপর যেই বোলিংয়ে এসেছেন, তাকেই কচুকাঁটা করেছেন রয়-বেয়ারস্টো। পরের ১০ ওভারে ৯৫ রান তুলে ইংলিশরা পৌঁছায় শতকের ঘরে।
বেমালুম মার খাওয়া টাইগার বোলাররা তাদের কাঙ্ক্ষিত উইকেটের দেখা পেয়েছেন ২০তম ওভারে এসে। ৫০ বলে ৫১ রান করে মাশরাফীর বলে মিরাজের দারুণ এক ক্যাচের শিকার হয়ে সাজঘরে বেয়ারস্টো। ভাঙে ১২৮ রানের জুটি।
বেয়ারস্টো ফিরলেও উইকেটের অন্যপ্রান্তে ভয়হীন খেলে গেছেন জেসন রয়। ৩৮ বলে পেয়েছেন ফিফটি, ৯২ বলে শতক। ৩৫তম ওভারে মিরাজকে টানা তিন ছক্কা মেরে ছুঁয়েছেন দেড়শোও। তবে সেই ওভারের চতুর্থ বলেই কাঁটা পড়েছে তার ইনিংসের। ১২১ বলে থেমেছেন ১৫৩ করে, ১৪ চারের সঙ্গে ৫ ছক্কা হাঁকিয়ে।
রয় ফিরলেও বাংলাদেশি বোলারদের পেটানো অব্যাহত রাখেন জস বাটলার ও ইয়ন মরগান। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৬৬ বলে দুজনে তুলেছেন ৯৫ রান । একফাঁকে ৩৩ বলে ফিফটি তুলে নেন বাটলার।
তবে শেষ দিকে ৪৪ বলে ৬৪ করা বাটলার, মরগান(৩৫), স্টোকসের(৬) উইকেট দ্রুত পড়ে যাওয়ায় চারশো করা হয়নি ইংলিশদের। অবশ্য যা হয়েছে তাও কম নয়। যেখানে বাংলাদেশের ওয়ানডে সর্বোচ্চ ৩৩০, ইংলিশদের এই সংগ্রহ তো তাদের কাছে রীতিমত হিমালয়সম!
কার্ডিফে প্রথম ইনিংসের গড় রান ২২৩। আর দ্বিতীয় ইনিংসের গড় ২১০ রান। তবে এই মাঠে সর্বোচ্চ স্কোর ৩৪২। এই ইংল্যান্ডই গত বছর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করেছিল। সর্বনিম্ন রানটা আবার এক এশিয়ান দলের। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিল শ্রীলঙ্কা। আশার কথা কার্ডিফে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতা দলটিও এশিয়ার। ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই ৩০৪ রান তাড়া করে জিতেছিল পাকিস্তান।
তবে ১৬৯ রান করে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই মাঠে জিতেছিল ইংলিশরা। সেই বিচারে ৩৮৬ রান তো অনেক বেশি।