চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

সৌন্দর্যের মাপকাঠি বদলে দিলেন যে দশ মডেল

মডেলিং জগত মানেই লম্বা, আকর্ষণীয় ফিগারের একই রকম দেখতে কিছু মানুষ। একটু মেদ বাড়লেই যাদেরকে শুনতে হয় নানা কটূক্তি। কয়েক বছর পরপর আবার এই সৌন্দর্যের মানও বদলে যায়। বদলায় ফ্যাশন। কিন্তু এই সাধারণ মডেলদের মাঝে থেকেই উঠে এসেছেন কিছু অসাধারণ মডেল যারা সৌন্দর্যের মাপকাঠিকে বদলে দিয়ে সকলের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে আছেন। জেনে নিন তাদের সম্পর্কে।

অ্যাশলে গ্রাহাম
মডেল মানেই ছিপছিপে দেহের হতে হবে, এই ধারণা পাল্টে দিয়েছিলেন আমেরিকান মডেল অ্যাশলে গ্রাহাম। ভোগ, হারপার’স বাজার এবং গ্ল্যামারের মতো ফ্যাশন ও লাইফ স্টাইল ম্যাগাজিনে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে একাধিকবার। তিনি হাই স্কুল এবং মডেলিং-এ নিজেদের দৈহিক গড়ন নিয়ে কটূক্তির বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ করেছেন এবং কিভাবে আত্মবিশ্বাসের সাথে পরিস্থিতি সামলে নিয়েছেন সেটাও জানিয়েছেন।

নায়াকিম গ্যাটওয়েচ
মডেল হতে হলে ফর্সা হতে হবে, এই ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করেছেন দক্ষিণ সুদানের মডেল নায়াকিম গ্যাটওয়েচ। তাকে ‘কুইন অব ডার্ক’ বলা হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে ফর্সা হওয়ার জন্য সবাই যখন ফেয়ারনেস ক্রিম এবং প্লাস্টিক সার্জারির আশ্রয় নিচ্ছেন, সেখানে নায়াকিম গ্যাটওয়েচ নিজের ত্বক নিয়েই আত্মবিশ্বাসী। গত মার্চ মাসে তিনি একজন উবার ড্রাইভারের সাথে কথোপকথন প্রকাশ করেন। উবার ড্রাইভার তাকে প্রশ্ন করেন, ‘কিছু মনে না করলে আপনাকে একটা প্রশ্ন করি? আপনাকে যদি দশ হাজার ডলার দেওয়া হয়, আপনি কি আপনার ত্বক ব্লিচ করে ফর্সা করবেন?’ নায়াকিম হেসে বলেছিলেন, ‘ঈশ্বরের আশীর্বাদ স্বরূপ পাওয়া এই সুন্দর ত্বককে কেন আমি পরিবর্তন করব?’

জিলিয়ান মারকাডো
জিলিয়ান মারকাডো মাসকিউলার ডিসট্রফিতে আক্রান্ত। তিন বছর বয়স থেকে হুইলচেয়ারেই কাটে তার জীবন। কিন্তু তাও তিনি আত্মবিশ্বাসের সাথে কাজ করে চলেছেন মডেল হিসেবে। ক্যাটওয়াকে হাঁটতে দেখবে না হুইলচেয়ারে বসা এই মডেলকে। কিন্তু একাধিক ব্র্যান্ডের মডেল হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি তিনি প্রচ্ছদ কন্যা হয়েছেন গ্ল্যামার এবং কসমোপলিটান ম্যাগাজিনে।

আলেক্স মিনস্কি
২৮ বছর বয়সী আলেক্স মিনস্কির পেশা প্রথমেই মডেলিং ছিল না। তিনি ছিলেন ম্যারিন কর্পোরাল। ২০০৯ সালে আফগানিস্তান সফরে তিনি বোমার আঘাতে মারাত্মক আহত হয়ে কোমায় ছিলেন অনেকদিন। ক্ষতি হয়েছিল ব্রেইনের এবং হারিয়েছিলেন একটি পা। সুস্থ হওয়ার পরে তার ভাইয়ের মৃত্যু হয় ড্রাগ ওভারডোজের কারণে। এরপর তিনিও ড্রাগের মরণ নেশায় ডুবে যান। সেখান থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এক পর্যায়ে শরীর চর্চায় মনোনিবেশ করেন। সেখান থেকেই চোখে পরেন ফ্যাশন ফটোগ্রাফারের। এরপর তার ছবি বিভিন্ন লাইফ স্টাইল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয় এবং তিনি ‘লাইভ ফিট’-এর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিযুক্ত হন।

আনদ্রেজা পেজিচ
অস্ট্রেলীয় সুপারমডেল আন্দ্রেজা মডেলিং করছেন ১৭ বছর বয়স থেকে। অন্যদের থেকে একটু আলাদা আনদ্রেজা পেজিচ। আর তার কারণ হলো তিনি ছিলেন একজন পুরুষ। নারী ও পুরুষ উভয় ভূমিকায় তিনি মডেলিং করেছেন অনেকদিন। এরপর সেক্স রিঅ্যাসাইনমেন্ট সার্জারির মাধ্যমে নারীত্বকে বেছে নেন তিনি। তিনিই ভোজ ম্যাগাজিনের তালিকাভুক্ত পৃথিবীর প্রথম ট্রান্স-জেন্ডার মডেল।

ম্যাডেলিন স্টুয়ার্ট
২০১৪ সালে মায়ের সঙ্গে একটি ফ্যাশন শো দেখতে গিয়েছিলেন ম্যাডেলিন স্টুয়ার্ট। সেদিনই তিনি ঠিক করেছিলেন যে তিনি মডেল হবেন। ‘ডাউন সিনড্রোম’-এর কারণে ছোটবেলা থেকেই বাড়তি মেদের সমস্যা ছিল ম্যাডেলিনের। মডেলিং এবং নিজের সুস্থতার জন্য তিনি ডায়েট, সাঁতার ও চিয়ার লিডিং অনেকটা ওজন ঝরিয়েছেন। এরপর ম্যাডেলিনের মা সামাজিক মাধ্যমে মেয়ের মডেলিং-এ আগ্রহের কথা জানিয়ে একটি ক্যাম্পেইন করেন। সেই ক্যাম্পেইন ব্যাপক সাড়া পায়। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি ম্যাডেলিনকে। ম্যাডেলিন স্টুয়ার্ট নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন উইকে হেঁটে চমকে দিয়েছিলেন বিশ্বকে।

জ্যামি ব্রিউয়ার
ডাউন সিনড্রোমকে তুচ্ছ করার প্রথম নজির সৃষ্টি করেন আমেরিকান হরর শো-খ্যাত অভিনেত্রী জ্যামি ব্রিউয়ার। তিনিই প্রথম ‘ডাউন সিনড্রোম’ আক্রান্ত মডেল যিনি নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন উইকের র‍্যাম্পে হেঁটেছিলেন। ৩২ বছর বয়সী এই মডেল এবং অভিনেত্রী এখন বিভিন্ন বয়সী মানুষের মনে সাহস যোগান।

শ্যানটেল উইনি হারলো
উইনির জন্ম কানাডার টরন্টোতে। চার বছর বয়সে তাঁর ‘ভিটিলিগো’ বা শ্বেতী ধরা পড়ে। ছোটবেলায় স্কুলে তাঁকে খ্যাপানো হতো। ফলে তিনি অবসাদগ্রস্ত হয়ে পরেন, অনেকবার স্কুল বদলান, এমনকি আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলেন। তবে মডেলিংয়ে ক্যারিয়ার গড়ার কথা ভাবেননি কখনো। ২০১৪ সালে টায়রা ব্যাঙ্কস ইনস্টাগ্রামে উইনির অ্যাকাউন্ট দেখে তাঁকে ‘আমেরিকা’জ নেক্সট টপ মডেল’এ সুযোগ দেন। তার ভিন্ন রকমের ত্বকের জন্য তিনি জনপ্রিয়তা পান। এরপর তিনি একাধিক ব্র্যান্ডের মডেলিং করেন এবং র‍্যাম্পে হাঁটা শুরু করেন।

শন রস
২৬ বছর বয়সী আমেরিকান মডেল শন রস। তিনি প্রথম পুরুষ অ্যালবিনো মডেল। অ্যালবিনো হওয়ার কারণে ছোটবেলায় এই আফ্রো-আমেরিকান মডেলকে নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। তবে মডেলিং শুরু করার পর তিনি অ্যালেক্সান্ডার ম্যাককুইন, গিভেঞ্চি ও আরও অনেক বিখ্যাত ডিজাইনারের হয়ে র‌্যাম্পে হেঁটেছেন। বেয়ন্সে, কেটি পেরি এবং লানা ডেল রে-এর মিউজিক ভিডিওতেও তাকে দেখা গিয়েছে।

মেলানি গেডোস
মেলানি গেডোস-এর মাথায় চুল নেই, মুখে দাঁতও নেই। চোখেও আংশিক অন্ধত্ব। বিরল জেনেটিক রোগ এক্টোডেরমাল ডাইপ্লাসিয়া রোগে আক্রান্ত তিনি। কিন্তু তার আরেকটি পরিচয় হলো তিনি একজন জনপ্রিয় মডেল। চেহারার ভিন্নতার কারণে মডেলিং-এ সুযোগ পেয়ে যান তিনি। এরপর কাজ করেন একাধিক নামী ফটোগ্রাফারের সঙ্গে। ইনস্টাগ্রামেও তার এক লক্ষ আটত্রিশ হাজারের বেশি ফলোয়ার আছে। ওয়ান্ডারস লিস্ট।