বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমায় সৌদি আরব অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানোর পাশাপাশি কিছু প্রকল্প বিলম্বিত করছে। তবে রাজপরিবারের বিলাসী জীবন ঠিক আগের মতোই থাকবে।
অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোও অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী ইব্রাহিম আল-আসাফ।
কিং সালমানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে সিএনবিসি আরাবিয়াকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব বিষয়ে কথা বলেন তিনি। তেলের দাম দেশটির রাজস্ব আদায়ে বিশাল ধাক্কা দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কিছুক্ষেত্রে খরচ কমানোর এটাই সবচেয়ে স্পষ্ট প্রশাসনিক বার্তা বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে এই সফরেই অপচয়ের অনেক উদাহরণ সৃষ্টি করেছে সৌদি রাজপরিবার।
আল-আসাফ বলেন, গত বছর থেকে তেলের মূল্য হ্রাসের প্রবণতার সাথে সামঞ্জস্য রাখতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ তেল রপ্তানিকারী দেশটি প্রস্তুত রয়েছে এবং সৌদির নীতিনির্ধারকেরাও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।
“আমরা মজুদ তৈরি করেছি, জনগণের ঋণ কমিয়ে প্রায় শুন্য পর্যায়ে নিয়ে এসেছি এবং আমরা এখন অপ্রয়োজনীয় ব্যয়গুলো কাটছাঁট করার কাজ করছি। আমাদের দৃষ্টি এখন রাজ্যের প্রধান প্রধান উন্নয়ন প্রকল্প এবং মানব সম্পদ তৈরিতে।”
তিনি বলেন, এমন কিছু প্রকল্প আছে যা কয়েক বছর আগে অনুমোদিত হয়েছিলো এবং এখন পর্যন্ত সম্পন্ন করা হয়নি, যার মানে জরুরিভিত্তিতে সেই সব প্রকল্পের প্রয়োজন নেই এবং এগুলো বাস্তবায়নে আরও বিলম্ব করা যায়।
“শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অবকাঠামো খাতের প্রকল্পগুলো শুধু বেসরকারি খাতের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, সৌদি অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির জন্যই সেগুলো প্রয়োজন।”
ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড (আইএমএফ) এবং বেসরকারি বিশ্লেষকদের মতে, তেলের মূল্য হ্রাসের জন্য চলতি বছর সৌদি অর্থনীতিতে ১২০ বিলিয়ন ইউএস ডলার বা তারও বেশি বাজেট ঘাটতি হতে পারে। তবে সৌদি আরবের ৬০০ বিলিয়ন ইউএস ডলারেরও বেশি পরিমাণের মজুদ রয়েছে যা আরও কয়েক বছর অর্থসম্পদ শেষ হওয়ার বিপদ থেকে দেশটিকে রক্ষা করতে পারবে।
কিন্তু দীর্ঘ সময়ব্যাপি তেলের কম দাম এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এটা যেভাবে মোকাবেলা করার আভাস জনগণকে দিয়েছেন তা আর্থিক বাজারকে আতঙ্কিত করতে শুরু করেছে। সৌদি সার্বভৌম ঋণের খেলাপির সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ঝুঁকির বিপরীতে ইন্সুরেন্স মূল্যও বাড়ছে।
খরচ কমানোর বিষয়ে বিস্তৃতভাবে কিছু বলেননি অর্থমন্ত্রী। সরকারি চাকুরেদের বেতন প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যয়টিকে যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা হবে বলে গত ডিসেম্বরে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিলো। কিন্তু বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সরাসরি বেতন কাটছাঁট করার বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে খুবই স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।
ইয়েমেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে সৌদি আরবের জন্য নিরাপত্তা খাতে ব্যয় কমানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই অবকাঠামো খাতে আঘাত আসতে পারে। যেমন: দেশে একটি ফুটবল স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রকল্পটি পিছিয়ে গেছে, ২০১ মিলিয়ন ইউএস ডলারে একটি দ্রুতগতির ট্রেন ক্রয়ের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে এবং একটি তেলক্ষেত্রের সম্প্রসারণ বিলম্বিত করা হয়েছে।
২০০৭ সালের পর গত জুলাই মাসে প্রথমবারের মতো বাজেট ঘাটতি পূরণ করতে রিয়াদ সার্বভৌম বন্ড ইস্যুও শুরু করেছে।
আল-আসাফ বলেন, নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য সরকার বন্ড ইস্যু করা অব্যাহত রাখতে পারে এবং ইসলামিক বন্ড বা ‘সুকুক’ও বিক্রি করে দিতে পারে।
“২০১৫ সালের সমাপ্তির আগেই সুকুক ইস্যু করা হতে পারে কিন্তু এটা চলমান থাকবে কিনা আমি তা বলতে পারি না। বাজেট ঘাটতি নিরসনের জন্য প্রয়োজনের উপর তা নির্ভর করে।”