ক্ষমতার মুকুট মাথায় পেয়েই তড়িঘড়ি করে একটি দুর্নীতি দমন কমিটি গঠন করে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ধরপাকড় শুরু করলেন কেন? সম্প্রতি সৌদি আরবে ঘটে চলা অবিশ্বাস্য সব ঘটনা ও ধরপাকড়ের পেছনের মূল কারণ আসলে কি? যারা গ্রেফতার হয়েছেন তারা কি আসলেই দুর্নীতি করেছেন, নাকি ক্ষমতার পালাবদলের ফলে নিছক ঘটনার শিকার।
বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে এসবের পিছনে মূল নাটের গুরু ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। যিনি একই সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিটির প্রধানও। মোটাদাগে এসবের মূলে দুটি কারণ রয়েছে। আর তা হচ্ছে- ক্ষমতাকে নিজের নাগালে আনা এবং সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতি।
তেল সম্পদে সমৃদ্ধ সৌদি আরবে দুর্নীতির দৌরাত্ম এবং ঐতিহ্য বেশ প্রাচীন। ঘুষ, লভ্যাংশ দেয়া, খুশি করার সংস্কৃতি এখানে ব্যবসার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখানে উচ্চ পদস্থ কর্তা-ব্যক্তিরা নিজেদের পদ ও দায়িত্বের বিপরীতে সরকারি বেতনের চেয়ে কয়েক হাজার গুণ বেশি অর্থ রোজগার করে থাকেন। এমন অনেকেই আছেন যারা সামান্য চাকরি করে বিদেশি ব্যাংকগুলোতে কয়েক বিলিয়ন ডলার জমিয়েছেন!
ফলে দ্রুত বর্ধমান জনসংখ্যার এই দেশটির অর্থনীতিতে এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে, যেখানে তরুণ প্রজন্মের জন্য বিপুল পরিমাণ কাজের সুযোগ দরকার। এ কারণেই ৮২ বছর বয়সী কিং সালমানকে সঙ্গে নিয়ে কিছু ‘ধনকুবেরের’ পিছনে লেগেছেন তরুণ প্রিন্স।
এসবের মাধ্যমে তিনি সবাইকে একটি বার্তা পৌঁছে দিতে চান। যা অনেকটা এরকম, ‘পুরনো পন্থায় সৌদি আরবে আর ব্যবসা করা চলবে না, একবিংশ শতাব্দির পৃথিবীর সঙ্গে সফলভাবে তাল মিলিয়ে চলতে হলে সৌদি আরবের সংস্কার ও আধুনিকায়ন দরকার।’
বর্তমান সরকারের তৎপরতার ফলে বিদেশি ব্যাংকসমূহে পাচার হয়ে যাওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ ফিরে আসতে পারে। যা সংখ্যায় দাঁড় করালে ৮০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের মতো হবে।
কিন্তু এসবের শেষ কোথায়? সবেমাত্র প্রাথমিক পর্যায়ে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে দেশটির সরকারি আইনজীবী ইতোমধ্যে জানিয়েছেন। সামনে এই ধরপাকড় অব্যাবহত থাকবে এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি।
তেল বিক্রির যে অর্থ আসে, তা ঠিক কোন রাজপুত্রের পকেটে কী পরিমাণে যায়, তাদের পরিবার কী পরিমাণে ভাগ পান, এসব নিয়ে ক্ষমতাসীন সৌদি রাজ পরিবারের পক্ষ থেকে কোন দিন কোন টু শব্দ করা হয়নি। এমন রাজপুত্র সৌদি আরবে কয়েক হাজার রয়েছে।
২০১৫ সালে এক রাশিয়ান ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নিজের ব্যবহারের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের একটি প্রমোদতরী কিনেছিলেন বলে ক্রাউন প্রিন্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
জব্দ হওয়া অর্থ জনসাধারণের মাঝে বিতরণ করা হতে পারে এই আশায় সৌদির অনেক সাধারণ বাসিন্দা এই ধরপাকড়কে স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু কোথায় গিয়ে শেষ হবে এই তদন্ত, এ বিষয়ে এখনও স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।
এই ধরপাকড়ের পিছনে দ্বিতীয় প্রধান কারণ অবশ্যই ক্ষমতা। মাত্র ৩২ বছর বয়সেই এমবিএস (মোহাম্মদ বিন সালমান) সৌদি আরবের রাজনীতির ক্রীড়নকদের অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। তিনি পৃথিবীর সম্পদশালী দেশগুলোর মধ্যে সব থেকে তরুণ প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের একজন।
তেলের উপর দেশের নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা হবে এমন ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন তিনি। পিতার অনুগত পুত্র হওয়ার সুবাদে দেশটির সব আদালত পরিচালিত হয় তার নির্দেশে এবং এই ক্ষেত্রে বেশ কিছু বন্ধুও তৈরি করেছেন তিনি।
ওয়াশিংটন ডিসিতে ঘুরে এসে এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিয়াদ সফরের পর হোয়াইট হাউসের সঙ্গে ক্রাউন প্রিন্সের যোগাযোগ এখন খুবই মধুর।