চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সৌদি আরবের নয়া রাজনীতি: প্রিন্স সালমান আল সৌদ-এর জবানিতে

যে সময়টায় তিনি এই সাক্ষাৎকারটি দিয়েছিলেন, এরপর বেশ কয়েকমাস অতিক্রান্ত। এর মধ্যে সৌদি আরবে বেশ কিছু যুগান্তকারী পরিবর্তনের ঘোষণা এসেছে। সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বিন আবদুল আজিজ আল-সৌদ বলেছেন, তার দেশ মধ্যপন্থী ইসলামের পথে ফিরে যাবে। সৌদি আরব আগে এই আদর্শেই পরিচালিত হতো এবং সব ধর্ম ও পুরো বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত ছিল।

সম্প্রতি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে দুর্নীতির অভিযোগে সৌদি আরবের ১১ জন প্রিন্স এবং বেশ কয়েক জন বর্তমান ও প্রাক্তন মন্ত্রীকে গ্রেফতারের ঘটনা। ধৃতদের তালিকায় রয়েছেন সৌদির ধনকুবের প্রিন্স আল-ওয়ালিদ বিন তালাল। একই অভিযোগে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সৌদি ন্যাশনাল গার্ডের প্রধান এবং অর্থমন্ত্রীকেও।

২০০৯-এ জেদ্দায় বন্যার সময় দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরেই একটা কমিশন গঠন করা হয়। ওই কমিশনের মূল লক্ষ্য ছিল জনতার অর্থ অপচয় যাতে না হয় সেটা দেখা, দুর্নীতিগ্রস্তদের শাস্তি দেওয়া এবং যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। দুর্নীতি বিরোধী এই কমিশনের নেতৃত্বে রয়েছেন প্রিন্স মহম্মদ বিন সালমান।

ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তিনি দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য উদ্যোগী হন। গত দু’সপ্তাহ আগেই রিয়াদে বাণিজ্য সম্মেলন হয়। সেখানে বিশ্বের তাবড় তাবড় লগ্নিকারীরা হাজির হয়েছিলেন সেখানে। কীভাবে দেশের আর্থিক সংস্কারের জন্য কাজ করা হচ্ছে সেটা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়। পাশাপাশি, দেশের স্বচ্ছ ভাবমূর্তিকেও তুলে ধরতে কসুর করেননি প্রিন্স মহম্মদ।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, প্রিন্সের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা, বিদেশ নীতি, আর্থিক সংস্কার এবং বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপের বিরোধিতা করছিলেন ধৃতদের কয়েক জন। বার বার দুর্নীতির অভিযোগ উঠছিল সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে। দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতেই অবশেষে এই সাহসী পদক্ষেপ করলেন প্রিন্স মহম্মদ। এতে করে সৌদি আরবেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রিন্স মহম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান বা তাকে বহিষ্কার হতে পারেন বলেও জোর গুজব রয়েছে।

এর আগে গত ২৪ অক্টোবর রিয়াদে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ সম্মেলনে সৌদি যুবরাজ এই প্রতিশ্রুতি দেন। কট্টরপন্থা মোকাবিলায় সৌদি আরব আরও কিছু করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কট্টরপন্থী আদর্শের সঙ্গে যুঝতে গিয়ে জীবনের ৩০টা বছর সময় আমরা নষ্ট করব না আর।’ যুবরাজ আরও বলেন, ‘আমরা খুব শিগগির কট্টরপন্থার অবসান ঘটাব।’

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে টুইন টাওয়ার হামলা হওয়ার পর থেকে মৌলবাদ ও সন্ত্রাস মোকাবিলা এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা রাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে সুন্নি ইসলামের ওয়াহাবি মতাদর্শের রাজতন্ত্র সৌদি আরব। যে দেশে কট্টরপন্থী সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা প্রচণ্ড ক্ষমতাধর এবং দেশজুড়ে তার ব্যাপক প্রভাব সেই দেশে এ ধরনের প্রতিশ্রুতি গোটা বিশ্বে উৎসুকের জন্ম দিয়েছে।

চলতি বছরের শুরুর দিকে হঠাৎ করেই ৩২ বছর বয়সী যুবরাজ বিন সালমানকে সৌদি সিংহাসনের উত্তরাধিকার মনোনীত করেন বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল-সৌদ। অনেকেই তাকে আধুনিক সৌদি রাজতন্ত্রের মুখ বলে মনে করেন। পাঁচশ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে মিশর ও জর্দানের সঙ্গে স্বতন্ত্র অর্থনৈতিক জোন গঠনের ঘোষণাও দিয়েছেন ৩২ বছর বয়সী এ যুবরাজ।

সৌদি আরবের যুবরাজ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশটিকে তেল নির্ভর অর্থনীতি থেকে বের করে আনতে ‘ভিশন: ২০৩০’ ঘোষণার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। গত মাসে নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর থেকেও নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় পরিচালিত এ দেশটি। বিশ্ববাজারে তেলের দাম পড়ে যাওয়ার পর নিজেদের পরিবর্তিত অর্থনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাকে বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের সামনে তুলে ধরার জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি।

যদিও কেউ কেউ এ কথাও বলছেন যে, নতুন শহরের নকশা, বড় বড় পরিকল্পনা পুরোটাই লোক-দেখানো। ইয়েমেন আর কাতারের সঙ্গে যুদ্ধে নিজের ভাবমূর্তি খুইয়ে এখন তা মেরামতির চেষ্টা যুবরাজের। আসল সৌদি থাকবে সৌদিতেই। কিন্তু পুরোটাই থাকবে কি? যদি এই ‘ভিশন ২০৩০’ আংশিক সাফল্যও পায়, তা হলে তার টানেই সমাজে একটা খোলা হাওয়া ঢুকতে বাধ্য। তখন হয়তো ‘ভিশন ২০৩০’-এর পূর্ণ সাফল্যের যেটুকু বাকি থাকবে, সেটা হাসিল করে দেবে যুবসমাজ। তাদের তরুণ রক্ত গ্রহণ করবে বহির্বিশ্বের নতুনত্ব। সেই নতুনত্ব সংক্রামক, রোখা মুশকিল। তার ওপর তাতে যদি থাকে সমাজ বদলের হাতছানি!

মোহাম্মদ বিন সালমান আল সৌদ (জন্ম ৩১ আগস্ট ১৯৮৫) হলেন সৌদি আরবের যুবরাজ, উপপ্রধানমন্ত্রী এবং পৃথিবীর সবচেয়ে কমবয়সী প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। তিনি আল সৌদ রাজদরবারের প্রধান এবং অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন বিষয়ক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। তার পিতা বাদশাহ সালমানের পরেই তার ক্ষমতা বিবেচনা করা হয়, ২০১৭ সালের ২১ জুন মুহাম্মদ বিন নায়েফকে যুবরাজের পদ থেকে অপসারণ করা হয় এবং তার স্থলে মুহাম্মদ বিন সালমানকে যুবরাজ মনোনীত করা হয় একই সঙ্গে রাজকীয় ফরমানের মাধ্যমে নায়েফকে তার সব পদ থেকে অপসারণ করে তার সকল ক্ষমতা মুহাম্মদ বিন সালমানকে দেয়া হয়।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাপ্তাহিক ইকোনমিস্ট-এ তার এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। এই নবীন নেতা সাক্ষাৎকারটিতে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে সৌদি আরবের ভূমিকা ও বিশ্বরাজনীতি সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরেন। সৌদি এবং মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে আগ্রহীদের সাক্ষাৎকারটির গুরুত্বপূর্ণ অংশ তুলে ধরা হলো।
দ্য ইকোনমিস্ট: প্রথমেই সম্প্রতি কার্যকর হওয়া মৃত্যুদণ্ডের প্রসঙ্গে আসা যাক। সৌদি আরবে সন্ত্রাসী হামলার পর এত বছর পর কেন এই বিষয়টি সামনে এলো? আপনি কেন শিয়া ধর্মবিশ্বাসীদের ওপর এই দণ্ড কার্যকর করলেন?

সালমান: প্রথমত, তাদের আদালতে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিচারিক প্রক্রিয়ায় দণ্ড দেওয়া হয়েছিল এবং তাদের বিচার কার্যক্রমের তিনটি স্তর অতিক্রম করতে হয়েছে। তাদের অধিকার ছিল একজন আইনজীবী নিয়োগের এবং এই আইনজীবীরা বিচার প্রক্রিয়ার প্রতিটি স্তরে ভূমিকা পালন করেছেন। আদালতের দরজা সকল গণমাধ্যমকর্মী ও সাংবাদিকদের জন্য উন্মুক্ত ছিল, এবং বিচার কার্যক্রমের সকল বিবরণ জনগণের জানার জন্য প্রকাশ করা হয়েছিল।

আদালত কোনওভাবেই কে শিয়া বা সুন্নি তা বিবেচনায় নেয়নি। তারা একটি অপরাধ পর্যালোচনা করে বিচারিক পদ্ধতি মেনে তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে অপরাধীর বিরুদ্ধে দণ্ড ঘোষণা করেছে এবং তারই আলোকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। কিন্তু এই মৃত্যুদণ্ডের কারণে ইরানে সহিংস প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে সেখানে আপনাদের দূতাবাসে আক্রমণ পরিচালিত হয়েছে। আপনি বাহরাইন ও সুদানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। আঞ্চলিক পর্যায়ে এই উত্তেজনা বৃদ্ধির ফলাফল কী হতে পারে বলে মনে করেন?

: ইরানে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ আমাদের বিস্মিত করেছে। সৌদি আরবের একজন নাগরিক যে সৌদি আরবে একটি অপরাধমূলক তৎপরতা চালিয়েছে, প্রচলিত আইন অনুযায়ী সৌদি আদালতে তার বিচার ও শাস্তি হয়েছে। এটা আদালতের একটি সিদ্ধান্ত। ইরানের সঙ্গে এই ঘটনার সম্পর্ক কী? এই ঘটনা শুধু এটাই প্রমাণ করে যে ইরান এ অঞ্চলের দেশগুলির উপর তার খবরদারি বজায় রাখার ব্যাপারে আগ্রহী।

: অযৌক্তিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে আপনি কী উত্তেজনা সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করেননি?

: বিষয়টিকে আরেকভাবে দেখুন। আমরা যদি এটাকে ভয় করি, তাহলে তারা আরও বেপরোয়া হবে। কল্পনা করুন যদি কোনো সৌদি কূটনীতিক বা তার পরিবারের কোনো সদস্য বা শিশু ইরানে আক্রান্ত হয়, তখন ইরানের ভূমিকা আরও কঠিন হবে। আমরা বরং ইরানকে এমন একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করেছি। সৌদি মিশনে আগুন জ্বলছে এবং তা ইরানি সরকার দেখতে পাচ্ছে। যদি একটি শিশু অথবা একজন কূটনীতিক, কিংবা তাদের পরিবারের সদস্যদের উপর আক্রমণ করা হয়, তাহলে কি ঘটতে পারে? সে ক্ষেত্রে আমাদের প্রকৃত দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়তে হবে এবং তা বাড়বে।

: আপনি কি ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিরোধিতা করছেন? কারণ কী এই কার্যক্রম এবং তার ফলাফল?

: আমি মনে করি না যে এই কার্যক্রমের কারণে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়বে। যেহেতু ইরানের বাড়াবাড়ি চরম পর্যায়ে উপনীত হয়েছে, এখন আমরা কঠোর না হলে তারা আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। তাদের রেশ টেনে ধরা কঠিন হবে। আমরা শুধু আমাদের বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপের মোকাবেলা করবার জন্য যতটুকু করার তা-ই করছি।

: আপনাদের দুই দেশের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ কী সম্ভব?

: এটি এমন একটা বিষয় যে বিষয়ে আগে-ভাগেই কিছু অনুমান করা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে আগ বাড়িয়ে কেউ কাউকে প্ররোচিত করাটা সুবিবেচনাপ্রসূত হবে না। সৌদি আরবে ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধ বাধলে শুধু এ অঞ্চলেই বিপর্যয় নেমে আসবে না, গোটা বিশ্বেই এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমরা কোনো মতেই এই ধরনের কোনো কিছু ঘটতে দিতে পারি না।

: আপনি কি মনে করেন ইরান আপনার সবচেয়ে বড় শত্রু?

: তেমনটি আমরা আশা করি না।

: ইয়েমেনে আপনি একটা অনাবশ্যক ঝামেলা সৃষ্টি করেছেন বলে অনেকেই মনে করছেন। ইয়েমেনের ওপর একটা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছেন। আপনি ইয়েমেনের যুদ্ধের স্থপতি। তো এই যুদ্ধ কখন শেষ হবে?

: প্রথমত আমি ইয়েমেনে শক্তিপ্রয়োগের স্থপতি নই। আমরা প্রাতিষ্ঠানিক একটি দেশ। ইয়েমেনের অভিযান পরিচালনাটা একটি যৌথ সিদ্ধান্ত। এর সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় , প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় , গোয়েন্দা সংস্থা, মন্ত্রী পরিষদ এবং নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কাউন্সিল-সকলের সুপারিশের ভিত্তিতে গৃহীত একটি সিদ্ধান্ত। সকলের মতামত ও সুপারিশের ভিত্তিতে মহামান্য বাদশাহ চূড়ান্ত নির্দেশ প্রদান করেন। মহামান্য বাদশাহ যে নির্দেশ দেন, প্রতিরক্ষার মন্ত্রী হিসেবে আমি তার সিদ্ধান্ত বাস্তবায় ন করি মাত্র। আমি কোন হুমকি যে আমি দেখতে জমা দিতে হবে। এবং যে কোনো ধরনের হুমকি দেখতে পেলে আমি তা জানাব এবং মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নেব।

: সিদ্ধান্তটি কিন্তু গ্রহণ করা হয়েছিল আপনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হওয়ার পর পরই। এই অপারেশন কবে নাগাদ শেষ হবে বলে আপনি আশা করছেন?

: এটা সত্য যে আমি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হবার পর সিদ্ধান্তটি হয়েছিল, আমাদের মহান বাদশাহ দায়িত্ব গ্রহণের প্রাক্কালে হুথি বিদ্রোহীদের রাজধানী সানার সকল ক্ষমতা করায়ত্ত করার অপচেষ্টার কথা আমরা কীভাবে ভুলে যাব? এর সঙ্গে আমার মন্ত্রী হওয়ার সম্পর্ক নেই বরং এর জন্য হুতিরাই দায়ী। হুথিরা যা করেছে এর জন্য সম্ভাব্য সব কিছুই করা হবে। আমার ভূপৃষ্ঠ জুড়ে মিসাইল বসানো আছে যা সীমান্ত থেকে মাত্র ৩০-৫০ কিলোমিটার দূরে। এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরিসর ৫৫০ কিলোমিটার দূরে পর্যন্ত আঘাত হানতে পারে। এসব মিসাইল মিলিশিয়া বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই মিলিশিয়ারা সীমান্তে মহড়া দিচ্ছে এবং তারা যুদ্ধপরিকল্পনার অংশ হিসেবেই কাজ করছে। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আমার সীমান্তে এই মিলিশিয়ারা যুদ্ধপরিকল্পনার অংশ হিসেবে এডেনে তাদের নিজের লোকদের বিরুদ্ধে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ আছে যে এই ধরনের অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত মিলিশিয়া বাহিনীকে মেনে নেবে?

বিশেষ করে যারা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ উপেক্ষা করছে এবং আমাদের জাতীয় স্বার্থের জন্য সরাসরি হুমকিতে পরিণত হয়েছে। এর আগে ২০০৯ সালেও তাদের সঙ্গে আমাদের খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল। কর্তৃক পরিচালিত সেই কার্যক্রমগুলি কোনও বিরোধিতা ছাড়াই সমর্থন পেয়েছিল। এই অপারেশন কোনো রকম বিরোধিতা ছাড়াই জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিল দ্বারা সমর্থিত ও পরিচালিত হয়েছিল।

: অপারেশন যখন শুরু হয়েছিল তখন, অনেকেই আশা করেছিলেন এটি দ্রুত শেষ হবে। দশ মাস অতিক্রান্ত হলো, আপনি কি তবে সামরিক ঘোড়দৌড়ের মধ্যেই আছেন?

: না, আসলে এটার পেছনে অনেকগুলো উদ্দেশ্য ছিল। অপারেশন ‘ডেসিসিভ-স্টর্ম’-এর প্রথম উদ্দেশ্য ছিল মিলিশিয়াদের মূল ক্ষমতার উৎসগুলোকে নিষ্ক্রিয় করা। তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা বিশেষত তাদের ক্ষেপণাস্ত্রের মজুদ অন্তত ৯০ ভাগ ধ্বংস করা। তারপর আমরা ইয়েমেনের একটি রাজনৈতিক সমাধান প্রক্রিয়া শুরু করেছিলাম, যা একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন পর্যায়। আমাদের সব প্রচেষ্টা রাজনৈতিক সমাধানের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা আমাদের ভূমি মিলিশিয়াদের তৎপরতার জন্য অবারিত করে দেব। তাদের অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে যে প্রতিদিন রাজনৈতিক সমাধানের সুযোগ তারা পাবে না, বরং এ সুযোগ হাতছাড়া করলে তারা পায়ের তলার মাটি হারিয়ে ফেলবে।

: এতে কত সময় লাগতে পারে?

: অভিজ্ঞ জেনারেল থেকে কনিষ্ঠ সৈনিক, যুদ্ধের ময়দানে কেউই আগেভাগে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারে না। আজ আমরা দায়েশ দেখছি, কিন্তু কখন তারা পরাজিত হবে এ ব্যাপারে কেউ ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারবে না। কিন্তু আমি যা বলতে পারি দশ মাস আগে এডেনের অর্ধেকও সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল না, এবং বর্তমানে ৮০ ভাগ ইয়েমেনি ভূমি বৈধ সরকার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমি জোর দিয়ে বলতে চাই যে, আজ বিশ্বের কাছে হুথিসের চরিত্র এবং তাদের গোপন খেলার রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। বিশেষ করে যে সব খেলা তারা মানবিক সাহায্যের নামে করছে।

: আপনি অর্থনীতির দায়িত্বে আছেন, এবার বাজেট প্রসঙ্গে কথা বলা যাক। প্রতি ব্যারেল তেল ৩৫ ডলার। গত বছর আপনার বাজেট ঘাটতি ছিল জিডিপির শতকরা ১৫ ভাগ। সৌদি আরব কী তবে অর্থনৈতিক সংকটের মখোমুখি?

: আমরা এই সংকট থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছি। আমরা ৮০ ও ৯০ দশকের থেকেও এখন এগিয়ে আছি। আমাদের আছে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল রিজার্ভ। আমরা এ বছর তেল বহির্ভূত রাজস্ব ২৯% বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। সৌদি আরবের অর্থনীতি সম্পর্কে বেশিরভাগ লোকের যা ধারণা সে তুলনায় ঘাটতি ও খরচের বিষয়ে আমরা অনেক ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছি।

আমাদের পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি আছে। যার কিছু আমরা ঘোষণা করেছি, বাকিটা আমরা নিকট ভবিষ্যতে ঘোষণা করব। আমাদের ঋণের পরিমাণ জিডিপির শতকরা ৫ ভাগ মাত্র। কাজেই শক্তিশালী হওয়ার সব উপাদান আমার আছে, অনেক সেক্টরে আমাদের তেল-বহির্ভূত রাজস্ব বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। সর্বপরি আমাদের একটি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক নেটওয়ার্ক আছে।

: আপনি তেল-বহির্ভূত রাজস্ব বৃদ্ধি করবেন কিভাবে? ভ্যাট ও আয়কর প্রবর্তনের মাধ্যমে?

: আমরা আয়কর ও সম্পদ করমুক্তকরণের পথে এগোচ্ছি। আমরা ভ্যাট এবং অপরাধকর (অপরাধমূলক কর হচ্ছে কিছু জিনিস যা সমাজের জন্য ক্ষতিকর বলে বিবেচিত হয়, উদাহরণস্বরূপ অ্যালকোহল এবং তামাক, ক্যান্ডি, ওষুধ, নরম পানীয়, দ্রুত খাবার, কফি ইত্যাদির উপর ধার্য কর)সহ নাগরিক দ্বারা সমর্থিত কর বা ফি সম্পর্কে কথা বলছি। এসব থেকে পর্যাপ্ত রাজস্ব অর্জন সম্ভব, তবে এটাই একমাত্র রাজস্ব খাত নয়। আমাদের খনিগুলোতে অনেক সুযোগ রয়েছে, যেমন-বিশ্বের ৬%-এরও বেশি ইউরেনিয়ামের মজুদ আমাদের রয়েছে, রয়েছে অনেক অব্যবহৃত সম্পদ। মক্কাতে আমাদের চার মিলিয়ন বর্গমিটার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জমি রয়েছে, যেগুলোর বাজারমূল্য অনেক। আমরা এসব সম্পদকে বিনিয়োগযোগ্য সম্পদে রূপান্তরিত করতে পারি। আমরা বিশ্বাস করি আমরা আগামী পাঁচ বছরে তেলসম্পদ বহির্ভূত রাজস্বের পরিমাণ ১০০ বিলিয়র ডলারে উন্নীত করতে পারব।

: আপনি ভ্যাট কবে নাগাদ চালু করবেন?

: আমরা ২০১৭-এর শেষ নাগাদ এটি চালু করব এবং আমরা তা দ্রুত বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।

: রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য আপনি কি বেসরকারিকরণের দিকে ঝুঁকবেন?

: স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাখাত, সামরিক খাতের কিছু কিছু অংশ, যেমন সামরিক শিল্প এবং কিছু রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি। এতে করে সরকারের ওপর চাপ কিছুটা কমবে এবং ভাল মুনাফা তৈরি করতে পারে।

: আপনি কি সৌদি আরামকোর শেয়ার বিক্রির কথা ভাবছেন?(সৌদি আরামকো হচ্ছে সৌদি আরবের জাতীয় পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি, যা বর্তমানে সৌদি আরবের তেল কোম্পানি হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছে)

: বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং আমরা বিশ্বাস করি যে পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি এ ব্যাপারে অত্যন্ত উৎসাহী। আমি বিশ্বাস করি এটি সৌদি বাজারের স্বার্থে, আরামকোর স্বার্থে, আরও স্বচ্ছতার স্বার্থে এবং দুর্নীতির বিপরীতে, যদি তেমন কিছু থেকে থাকে, তা মোকাবেলায় আরামকো ভূমিকা পালন করতে পারে। (চলবে)

সহযোগিতায়: ইসরাত বিনতে ওয়াহিদ, গবেষক, লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স-এর ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ থেকে এমএসসি।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)