সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার কস্তুরিপাড়ার শফিকুলের বাড়িতে শোকের পরিবর্তে চলছে ঋণ পরিশোধের চিন্তা। নিহত শফিকুল দেড় বছর আগে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে চড়া সূুদে প্রায় ৮ লাখ টাকা ঋণ করে পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় পারি জমান সৌদি আরবে। কিন্তু গতকাল সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার পর থেকে শফিকুলের পরিবারের নেমে এসেছে অন্ধকার।
সরেজমিনে নিহত শফিকুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জীর্ণ একটি ঘরের বারান্দায় স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে নিহত শফিকুলের স্ত্রীকে। বাড়ির চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরিবারের লোকজন। বাড়িতে নেই কোন শোকের মাতম। তার পরিবর্তে প্রত্যেকটা মানুষের চোখে মুখে গভীর আতঙ্ক আর দুশ্চিন্তার ছাপ।
শোকের পরিবর্তে দুশ্চিন্তার কারণ জানালেন নিহত শফিকুলের পিতা আবেদ আলী। তিনি বলেন, দরিদ্র শফিকুল সপ্তম ও তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া দুই কন্যা সন্তানের জনক। পেশায় ছিলেন ভ্যান চালক। বাড়ির বসতভিটা ব্যতিত আর কোন সহায় সম্বল তার ছিলোনা।
ভ্যান চালোনার উপার্জনে সংসার চালিয়ে নিতেও পারছিল না। এর মধ্যে তার সঙ্গে পরিচয় হয় স্থানীয় এক দালালের। ওই দালালের পরামর্শে অধিক উপর্জনের আশায় বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চড়া সুদে প্রায় ৮ লাখ টাকা ঋণ করে দেড় বছর আগে পাড়ি জমায় সৌদি আরবে। সেখানে একটি কোম্পানীর পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসাবে সামন্য বেতনে কাজ পায় শফিকুল। যা দিয়ে ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা সংসার চালানোই আরো কঠিণ হয়ে পড়ে। টানা দেড় বছরে ওই আট লাখ টাকার সুদের টাকাই পরিশোধ করিতে পেরেছেন তারা। এখনো পরিশোধের বাকি রয়েছে আসল টাকা। এর মাঝেই গতকাল সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হলেন তিনি।
একই রকমের কথা জানালেন নিহত শফিকুলের স্ত্রী। স্বামীর মরদেহ ফেরত চাইলেও ঋণ পরিশোধ ও সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা বলে বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন তিনি।
একই চিত্র দেখা গেছে জেলার দেলদুয়ার উপজেলার ডুবাইল গ্রামের নিহত আমিন মিয়ার পরিবারে। সদ্য বিবাহিত স্ত্রী রেখে বছর খানিক আগে ৬ লাখ টাকা ঋণ করে পাড়ি জমান সৌদি আরবে। তিনি ওই কোম্পানীতে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসাবেই কাজ শুরু করেন।