চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সৌদিতে দূতাবাসের সহায়তায় বকেয়া বেতন পেলেন ইয়াসমিন

সৌদিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় চাকরিদাতার কাছ থেকে বকেয়া বেতন প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টাকা পেয়েছেন নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশি গৃহকর্মী ইয়াসমিন আক্তার।

২০১৫ সালে এক চুক্তির পর বাংলাদেশ থেকে পুরুষদের পাশাপাশি নারী শ্রমিক পাঠানো শুরু হয় সৌদি আরবে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় তিন লাখের মতো নারী শ্রমিক গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছে মরুময় দেশটিতে।

তাদেরই একজন নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার ইয়াসমিন আক্তার। ৪ বছর আগে, ২০১৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে তিনি পাড়ি জমান সৌদি আরবের তাবুকে।

ইয়াসমিন আক্তারের অভিযোগ, নিয়োগকর্তা আব্দুল হাদিস আল আমরি স্থানীয় প্রশাসনের প্রভাবশালী কর্মকর্তা। কাজে যোগ দেয়ার পরদিন থেকেই ইয়াসমিনের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেন তিনি। তারপর শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। ঠিকমতো খাবার না দেয়ার পাশাপাশি সামান্য ভুল হলে গায়ে হাত তুলতেন, এমনকি দেশে পরিবারের সঙ্গেও কথা বলতে দিতেন না এই নিয়োগকর্তা।

শুধু তাই নয়, মাস শেষে বেতনের টাকা চাইলে বৈদ্যুতিক শকসহ অমানুষিক নির্যাতন চালানো হতো বলে অভিযোগ করেন ইয়াসমিন। এমন অবস্থায় ইয়াসমিন আক্তারের পরিবারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সৌদি দূতাবাসে আবেদন করা হয়।

নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে দূতাবাস থেকে অভিযোগ আসার পর ইয়াসমিনের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায় আরও। এক পর্যায়ে ইয়াসমিন আক্তার বাসা থেকে পালিয়ে জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলে আশ্রয় নেন।

পরে দূতাবাসের সহায়তায় স্থানীয় শ্রম আদালতে মামলা করা হয় নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে। চারটি শুনানির পর আদালত ভিকটিমের পক্ষে রায় দেন। ইয়াসমিনের ৪২ মাসের বকেয়া বেতনের ৪২ হাজার সৌদি রিয়াল আদায় করে ইয়াসমিনকে বুঝিয়ে দেন দূতাবাসের শ্রমকল্যাণ উইংয়ের মেহেদী হাসান। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর মূল্যমান ৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চ্যানেল আইন অনলাইনকে দূতাবাসের প্রেস কাউন্সিল ফখরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন জেদ্দা কনস্যুলেটের প্রচেষ্টায় এবং পরে দূতাবাসের অক্লান্ত পরিশ্রমে সঠিকভাবে নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে স্থানীয় শ্রম আইনে মামলা করা হয়। কিন্তু নিয়োগকর্তা সৌদি সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হওয়ায় মামলায় জিততে অনেক বেগ পেতে হয়েছে।

‘তবে এ কথা প্রমাণিত হয়েছে আইনের শাসন এবং যথাযথ ডকুমেন্ট থাকলে নিয়োগকর্তা যত বড় শক্তিশালী হোক না কেন, শ্রমিকদের পাওনা দিতে বাধ্য হয় এবং দূতাবাসের পক্ষে নির্যাতিত শ্রমিকদের জন্য কাজ করতে সহজ হয়,’ মন্তব্য করেন তিনি।

ফখরুল ইসলামের পরামর্শ, বাংলাদেশ থেকে যারাই কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশে পাড়ি জমাবেন তারা যেন দূতাবাসের নম্বরসহ যাবতীয় ডকুমেন্ট এবং সঠিক ট্রেনিং নিয়ে কাজ সম্পর্কে সচেতন হয়ে প্রবাসে আসেন। তাহলে ওইসব শ্রমিকদের সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে।

মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। দেশটিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের প্রায় ২২ লাখ প্রবাসী কাজ করছেন। পরিবারের সচ্ছলতার জন্য মরুর প্রচণ্ড খরতাপে কাজ করে এই প্রবাসীরা বাংলাদেশের রেমিটেন্স এর মাধ্যমে অর্থ প্রেরণ করে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখে চলেছেন।

সম্ভাবনাময় এই খাতটিতে বাংলাদেশী প্রচুর সংখ্যক নারী শ্রমিক কাজ করার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন প্রবাসীরা। কিন্তু পাঠানো নারী শ্রমিকদের সঠিকভাবে ট্রেনিং না করে পাঠানো এবং কিছুসংখ্যক দালালদের খপ্পরে পড়ে বিভিন্ন সময় এসব নারী শ্রমিকদের পড়তে হচ্ছে নানা সমস্যায়।