প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ে না করা এবং আটক রাখার অভিযোগে হেফাজতে ইসলামের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেছেন জান্নাত আরা ঝর্ণা।
শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে জান্নাত আরা ঝর্ণা মামলা করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিল্লাল হোসাইন জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলার নম্বর ৩০।
মামলার এজাহারে জান্নাত বলেন, মামুনুল হক আমার স্বামী মাওলানা শহিদুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ২০০৫ সালে আমার স্বামীর মাধ্যমে মামুনুল হকের সঙ্গে পরিচয় হয়। একপর্যায়ে ২০১৮ সালের ১০ আগষ্ট মামনুলের পরামর্শে আমাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
জান্নাত আরা ঝর্ণার অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, বিচ্ছেদের পর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিকভাবে অসহায় হয়ে পড়ি। এ সময় মামুনুল আমাকে কুমন্ত্রণা দেয়। একপর্যায়ে পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তার প্রলোভনে পা দিতে বাধ্য হই। ২ বছর ধরে আমাকে ঢাকা ও ঢাকার পাশ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে মামুনুল হক। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরাঘুরি করে নিয়ে যায় হোটেল ও রিসোর্টে। সেখানে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার যৌন লালসা চরিতার্থ করে। এ পর্যায়ে সে আমাকে বিয়ের কথা বলে সময় ক্ষেপণ করে।
জান্নাত আরা ঝর্ণা অভিযোগে বলেন, ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে ঘোরাঘুরির কথা বলে মামুনুল হক নিয়ে যায়। সেখানে ওই রিসোর্টের ৫ তলার ৫০১ নম্বর রুমে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে। সেখানে অবস্থানকালে কিছু স্থানীয় জনগণ আমাদের আকস্মিক আটক করে ফেলে এবং আমাদের পরিচয় জানতে চায়। আমার কোন সদুত্তর দিতে না পারায় স্থানীয় জনতার রোষানলে পড়ি। পরে মামুনুল হকের অনুসারীরা রিসোর্টে হামলা করে আমাদের নিয়ে যায়। কিন্তু মামুনুল আমাকে নিজের বাসায় ধানমন্ডির নর্থ সার্কুলার রোডের ২৩/৩ নম্বর যেতে না দিয়ে তার পরিচিত একজনের বাসায় অবৈধভাবে জোর করে আটকে রাখে। সে আমাকে আমার সন্তানসহ পরিবারের সাথে যোগাযোগও করতে দেননি।
জান্নাত আরও বলেন, পরে কৌশলে আমি আমার বড় ছেলেকে আবদুর রহমানকে (১৭) আমার দুরাবস্থার সব কথা জানাই এবং আমাকে বন্দিদশা থেকে উদ্ধারের জন্য আইনের আশ্রয় নিতে বলি। পরে ডিবি পুলিশ আমাকে উদ্ধার করলে জানতে পারি, আমার বাবা রাজধানীর কলাবাগান থানায় আমাকের উদ্ধারের জন্য একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। পুলিশ আমাকে উদ্ধারের পর বাবার জিম্মায় দেয়। সেখানে আমি আমার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে পরামর্শ করায় অভিযোগ দায়ের করতে বিলম্ব হয়।
গত ১৮ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা থেকে মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের সময় ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত সহিংসতায় দেশে ১৭ জনের মৃত্যু হয়।
এসব সহিংসতার ঘটনায় সারাদেশে প্রায় অর্ধশতাধিক মামলা হয়েছে। মামুনুলকে এসব ঘটনার মূল ইন্ধনদাতা হিসেবে মনে করছে পুলিশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা যায়, ২৬ মার্চ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সহিংসতার ঘটনায় গত ৫ এপ্রিল মামুনুল হকসহ ১৭ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। মামলায় ২ হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা আসামিও করা হয়।