চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সৈয়দ হক: সীমানা ছাড়িয়ে পরাণের গহীন ভিতর

কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প- সাহিত্যের সব শাখায় ছিলো তার সাবলীল
পদচারণা। সব ধরনের সাহিত্যে সাবলীল থাকায় তাকে বলা হয় ‘সব্যসাচী লেখক’।
তিনি সৈয়দ শামসুল হক।

সব্যসাচী এই লেখকের জন্ম ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর। দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮১।

কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করা এই লেখক সব্যসাচী মাত্র ২৯ বছর বয়সে বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান। বাংলা একাডেমী পুরস্কার পাওয়া সাহিত্যিকদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে কম বয়সী সাহিত্যিক।

সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন ও হালিমা খাতুন দম্পতির আট সন্তানের প্রথম সন্তান এই সাহিত্যিক। বাবা পেশায় ছিলেন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার। এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা সৈয়দ শামসুল হক প্রথিতযশা লেখিকা ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হকের স্বামী। 

সৈয়দ হকের শিক্ষাজীবন শুরু হয় কুড়িগ্রাম মাইনর স্কুলে। সেখানে তিনি ক্লাস সিক্স পর্যন্ত পড়ালেখা করে ভর্তি হন কুড়িগ্রাম হাই ইংলিশ স্কুলে। এরপর ১৯৫০ সালে গণিতে লেটার মার্কসসহ ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

তার বাবার ইচ্ছা ছিলো ছেলেকে ডাক্তারি পড়াবেন। বাবার এমন দাবি এড়াতে ১৯৫১ সালে বম্বে পালিয়ে যান সৈয়দ হক। সেখানে তিনি বছরখানেকের বেশি এক সিনেমা প্রডাকশন হাউসে সহকারী হিসেবে কাজ করেন। এরপর ১৯৫২ সালে তিনি দেশে ফিরে এসে জগন্নাথ কলেজে স্বেচ্ছায় মানবিক শাখায় ভর্তি হন।

কলেজ পাসের পর ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। পরবর্তীতে স্নাতক পাসের আগেই ১৯৫৬ সালে সেখান থেকে পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখে বেরিয়ে আসেন। 

দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত লেখক সৈয়দ শামসুল হক উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে সস্ত্রীক লন্ডনে যান ২০১৬ সালের ১৫ এপ্রিল। একইসঙ্গে যুক্তরাজ্যেরও নাগরিক হওয়ায় লন্ডনে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা কর্তৃপক্ষের (এনএইচএস) নিয়মিত চিকিৎসকের (জিপি) মাধ্যমে চিকিৎসা শুরু করান তিনি। এরপর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ম্যাকডোনাল্ডের তত্ত্বাবধানে লন্ডনের রয়্যাল মার্সডেন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি।

পরে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ নিউসাম ডেভিসের তত্ত্বাবধানে চেলসি অ্যান্ড ওয়েস্টমিনস্টার হাসপাতালে কেমোথেরাপি নেন। কিন্তু টানা প্রায় তিন মাসের চিকিৎসা শেষে মন খারাপ করা খবর নিয়ে দেশে ফিরেন তিনি।

চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন আর মাত্র ছয় মাস বাঁচবেন কবি।

মৃত্যুমুখে দাঁড়ানো এই সময়টা কবি জীবনের শেষ দিনগুলো কাটাতে চান নিজের দেশে। তাই লন্ডন থেকে দেশে ফিরে ভর্তি হন রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখতে যান তাকে। নেন তার যাবতীয় চিকিৎসার দায়ভার।

তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্য কর্মের মধ্যে রয়েছে: তাস, শীত বিকেল, রক্তগোলাপ, আনন্দের মৃত্যু প্রভৃতি ছোটগল্প। একদা এক রাজ্যে, বিরতিহীন উৎসব, বৈশাখে রচিত পংক্তিমালা, প্রতিধ্বনিগণ, অপর পুরুষ, পরাণের গহীন ভিতর ইত্যাদি তার লেখা কবিতা। এক মহিলার ছবি, অনুপম দিন, সীমানা ছাড়িয়ে, নীল দংশন, নির্বাসিতা, মৃগয়ায় কালক্ষেপ, স্তব্ধতার অনুবাদ ইত্যাদি উপনাসের সৃষ্টি তারই হাতে। এছাড়াও তার লেখা অসংখ্য কাব্যনাট্য, শিশুসাহিত্য, অনুবাদ ও গল্প রয়েছে। 

একুশে পদক, বাংলা একাডেমী পুরস্কার ছাড়াও আরো অসংখ্য সাহিত্য পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন শামসুল হক।