অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় পৃথিবী বর্তমানে সবচেয়ে বেশি রণসজ্জায় সজ্জিত। লাখো সৈন্যের বহরে সশস্ত্র সামরিক শক্তির মহড়ায় আজ আধিপত্যের জানান দিচ্ছে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো। সৈন্য সংখ্যার বিচারে এমন দশটি শীর্ষ সামরিক শক্তির তালিকা করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস।
সৈন্য সংখ্যার ভিত্তিতে শীর্ষ সামরিক শক্তির তালিকায় এক নম্বরে আছে বিশ্বের এক নম্বর জনবহুল দেশ চীন। এরপরই আধিপত্যের প্রতাপ জানান দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের পিছু না ছাড়া নাছোড়বান্দা ভারতের অবস্থান তৃতীয়।
এক নজরে শীর্ষ দশ সামরিক শক্তি:
চীন:
২৩ লাখ ৩৩ হাজার সশস্ত্র সৈনিকের দেশ চীন। রাইফেল উদ্যত এই বিপুল সংখ্যক নিয়মিত সেনা ছাড়াও অতিরিক্ত আরও ৬’শ মিলিয়ন নারী-পুরুষের রিজার্ভ ফোর্স আছে এই এশিয় পরাশক্তির। শুধু সৈন্য সংখ্যা নয় চীনের সামরিক শক্তিকে শীর্ষে নিয়ে এসেছে সামরিক অন্যান্য অনুষঙ্গ। হাজারো সামরিক যান এবং যুদ্ধবিমান ছাড়াও চীনের নৌবহরে রয়েছে ৬’শ জলযান। এগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই সাবমেরিন ও ডেস্ট্রয়ার।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র:
১৪ লাখ নিয়মিত সৈন্য নিয়ে এক্সপ্রেস তালিকার দ্বিতীয়তে আছে বিশ্বজুড়ে আধিপত্য কায়েম করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের সব সামরিক শক্তির সম্মিলিত যুদ্ধবিমানের তুলনায় মার্কিন যুদ্ধ বিমানের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুন।
ভারত:
নবীনতম পরাশক্তি ভারত বিশ্বেও তৃতীয় বৃহৎ সামরিক শক্তির দেশ। চীনের মতো অর্থনৈতিক ও জনশক্তিতে এগিয়ে না থাকলেও ভারতের সৈন্য সংখ্যা এই রাষ্ট্রটির শত্রুদের বুকে কাঁপন ধরাতে বাধ্য। ১৩ লাখ ২৫ হাজার সৈনিকের হুঙ্কারে ভারতের তিন রঙা পতাকা উড়ছে সগৌরবে। চীনের মতো না হলেও ভারতেরও আছে বিপুল সংখ্যক রিজার্ভ ফোর্স। বিমান, নৌ আর পরমাণু শক্তিতে বর্তমান বিশ্বের সমীহ আদায়কারী রাষ্ট্র ভারত।
নর্থ কোরিয়া:
অর্থনৈতিক টানাপোড়েন সত্তেও বিপুল সৈন্য নিয়ে সামরিক শক্তির জোরে মার্কিন আধিপত্য এবং প্রতিবেশি সাউথ কোরিয়াকে চোখ রাঙাচ্ছে নর্থ কোরিয়া। সামরিক ব্যয়ে দেশটি বরাবর এগিয়ে। সন্দেহ করা হয় দেশটি পরমাণু বোমার মালিক। ১৯৫০ এর কোরীয় যুদ্ধেও পর থেকেই উত্তেজনা ছড়াচ্ছে দেশটি। প্রায় ১২ লাখ সৈন্যের দেশ নর্থ কোরিয়া আছে এক্সপ্রেস তালিকার চার নম্বরে।
রাশিয়া:
সৈন্য সংখ্যা, সমরাস্ত্র উৎপাদন, ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ সার্বিক বিবেচনায় পরাশক্তি রাশিয়ার জুড়ি নেই।ঐতিহাসিকভাবেই সামরিক দিকে বেশি জোর দেয়া দেশটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, সোভিয়েত ক্ষত সত্তেও বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ সামরিক শক্তি। এক্সপ্রেসের হিসেবে ৭ লাখ ৬৫ হাজার সুপ্রশিক্ষিত সৈন্য নিয়ে রাশিয়া আছে তালিকার ৫ নম্বরে।তবে বিশ্বের পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়া এক নম্বরে। কারণ এতো পরমাণু বোমা পৃথিবীর আর কোনো রাষ্ট্রের নেই।
পাকিস্তান:
মার্কিন মিত্র ও চীনের কৌশলী বন্ধু হয়েও ভারতের তুলনায় সামরিকভাবে পিছিয়ে থাকা রাষ্ট্র পাকিস্তান। সব মিলিয়ে পাকিস্তানের সৈন্য সংখ্যা মাত্র ৬ লাখ ৩০ হাজার। নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনীর সমরাস্ত্র ও সামরিকযান বেশিরভাগই মার্কিন প্রযুক্তি ও অর্থ সহায়তায় কেনা। এই সৈন্য নিয়ে পাকিস্তান নিজের দেশের জঙ্গি সমস্যা নিয়েই তালগোল পাকিয়ে ফেলছে। তবুও সৈন্য সংখ্যার বিচারে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটির তালিকায় ছয় নম্বরে আছে পাকিস্তান।
সাউথ কোরিয়া:
পাকিস্তানের সমপরিমাণ সৈন্য নিয়ে তালিকায় ৭ নম্বরে আছে সাউথ কোরিয়া। দেশটিতে নিয়মিত সেনার সংখ্যা ৬৩ হাজার। জনসংখ্যার তুলনায় দেশটির এই বিপুল সৈন্য সংখ্যার মূল কারণ নর্থের সঙ্গে শীতল সম্পর্ক।
ইরান:
অবরোধের মধ্যেও নিজস্ব সম্পদে বিশাল সামরিক বাহিনী গড়ে তুলেছে ইরান। সৌদি আরবের সঙ্গে আধিপত্য নিয়ে টানাপোড়েনে একটি শক্ত সামরিক শক্তিই বলা চলে ইরানকে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় ইরানের সামরিক শক্তি এখন অনন্য উচ্চতায়। দামী ক্রুজ মিসাইল নয় ইরান এমন ড্রোন বানিয়েছে যা নিজে ধ্বংস হয়ে শত্রুকেও ধ্বংস করে দিতে সক্ষম। ৫ লাখ ৩৪ হাজার সৈনিকের ইরান আছে এক্সপ্রেস তালিকার ৮ নম্বরে।
তুরস্ক:
ন্যাটো ভুক্ত দ্বিতীয় বৃহৎ সামরিক শক্তির রাষ্ট্র তুরস্ক। ৫ লাখ ১০ হাজার সৈনিকের তুরস্ককে সামরিক শক্তির তালিকায় ৯ নম্বরে রেখেছে এক্সপ্রেস ডট কম। সৈন্য বাহিনী ছাড়াও তুরস্কের আছে ৯০টি বি-সিক্সটিওয়ান পরমাণু বোমা। তবে এই বোমা ব্যবহার করতে হলে তুরস্ককে ন্যাটোর অনুমোদন নিতে হবে।
ভিয়েতনাম:
ভিয়েতনামের সামরিক সক্ষমতার কথা ইতিহাস সাক্ষী। দেশটিতে আগ্রাসন চালানো মার্কিন বাহিনীকে ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত নাস্তানাবুদ হতে হয়েছিলো। আর এখন সেই ভিয়েতনাম আরও উন্নত প্রযুক্তির প্রাচুর্যে। ৪ লাখ ৮২ হাজার ভিয়েতনামী সৈন্যের দৃপ্ততায় আজ ভিয়েতনাম বিশ্বের দশম শীর্ষ সামরিক শক্তি।