১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যা করা হয়। ভয়াবহ সেই দিনটির কথা উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় সাক্ষীদের জবানবন্দিতে। জবানবন্দি থেকে পাওয়া যায় সেদিনের ভয়াবহতার চিত্র। জানা যায় ঠিক কী ঘটেছিল সেদিন ৩২ নম্বরের বাড়িটির ভেতরে-বাইরে। সাক্ষীদের জবানবন্দির ভিত্তিতে চ্যানেল আই অনলাইনের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের নবম পর্ব।
প্রসিকিউশনের ২১নং সাক্ষী ল্যান্সনায়েক খালেক আদালতকে জানান, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ২-ফিল্ড আর্টিলারির ‘পাপা’ ব্যাটারিতে ছিলেন তিনি। মেজর মহিউদ্দিন তাদের ব্যাটারি কমান্ডার ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৪ই আগস্ট দিবাগত রাতে নাইট ট্রেনিং এর জন্য রোড মার্চ করে নিউ এয়ারপোর্টে যান। তাদের সঙ্গে লেঃ হাসান ছিলেন। রাত প্রায় ২টার দিকে তাদের কমান্ডিং অফিসার মেজর রশিদ ও মেজর মহিউদ্দিন, ক্যাপ্টেন হুদাসহ আরো কয়েকজন অফিসার আসেন। মেজর রশিদ বলেন, ‘‘তোমাদের একটি বিশেষ জরুরি ডিউটিতে যেতে হবে, হাতিয়ার ও গুলি নিয়ে প্রস্তুত হও।’’ পাশে একটি ট্রাক থেকে গুলি নেয়ার পরে তাদেরকে কয়েক ভাগে ভাগ করে আলাদা আলাদা ট্রাকে উঠানো হয়। রাত ৪.৩০ টার সময় ধানমন্ডি ৩২নং রোডে তাদের কয়েকজনকে নামিয়ে দিয়ে ঐ রোডে লোক চলাচল বন্ধ রাখার জন্য ডিউটি দেয়া হয়।
ওই দিনের বর্ণনা করে ল্যান্সনায়েক খালেক আদালতকে আরো জানান, প্রায় আযানের সময় পূর্বদিকে প্রচণ্ড গুলির আওয়াজ শোনেন। পরে কয়েকটা কামানের গোলার আওয়াজও শোনেন। সকাল হওয়ার পর পূর্বদিকে গিয়ে এক জায়গায় ২০-২৫ জন সৈনিক দেখে তাদের কাছে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির অবস্থান চিনেন। তারা বেশির ভাগ কালো পোশাকধারী ল্যান্সারের লোক ছিল। একজন বলল, উনি মেজর নুর, তাকে স্যালুট করলে না? তখন মেজর নুরকে স্যালুট করেন। তার কপালে রক্তের দাগ দেখে তারপর বঙ্গবন্ধুর বাড়ির ভেতরে গিয়ে সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর গুলিবিদ্ধ লাশ ও দোতলার একটি রুমে কয়েকজন মহিলা ও পুরুষের লাশ দেখেন। গেটের বাইরে এসে আর্টিলারি লোকদের কাছে জানতে পারেন মেজর নুর, ক্যাপ্টেন হুদা, মেজর মুহিউদ্দিন (ল্যান্সার) ও ল্যান্সার বাহিনীর সৈনিকরা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের লোকজনকে গুলি করে হত্যা করেছে। সেদিন সন্ধ্যায় ব্যারাকে গিয়ে জানতে পারেন মেজর ফারুক, মেজর নুর, মেজর মহিউদ্দিন, ক্যাপ্টেন হুদা, মেজর শাহরিয়ার, মেজর আজিজ পাশা, মেজর রাশেদ চৌধুরী, মেজর রশিদ, মেজর ডালিম এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল। মেজর মহিউদ্দিনকে তাদের ব্যাটারি কমান্ডার হিসাবে চিনেন। তিনি কিছুদিন তার বেডম্যানও ছিলেন।
২২ নং সাক্ষী হাবিলদার আজিজ
প্রসিকিউশনের ২২ নং সাক্ষী হাবিলদার আজিজ আদালতকে বলেন, ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে ২-ফিল্ড আর্টিলারির ‘পাপা’ ব্যাটারিতে ছিলেন তিনি। মেজর মুহিউদ্দিন ‘পাপা’ ব্যাটারি কমান্ডার ছিলেন। ১৯৭৫ সনে ১৪ই আগস্ট দিবাগত রাতে নাইট ট্রেনিং-এর জন্য নিউ এয়ারপোর্টে যায়। লেঃ হাসান তাদের সাথে ছিল। রাত ২.৩০টার দিকে মেজর রশিদ, মেজর মহিউদ্দিন, ক্যাপ্টেন মোস্তফা, ক্যাপ্টেন হুদাসহ আরো কয়েকজন অপরিচিত অফিসার আসেন।
মেজর রশিদ তাদেরকে একটি বিশেষ ডিউটিতে যেতে হবে বলে গুলি নিতে হুকুম দেয়। পাশে একটি ট্রাক থেকে গুলি নিয়ে কয়েকভাবে ট্রাকে উঠিয়ে ধানমন্ডির ৩২নং রোডে এলে তাদের কয়েকজনকে একটা নালার পাশে নামিয়ে দিয়ে ঐ রাস্তায় লোকজনের যাতায়াত বন্ধ রাখার ডিউটি দেয়। তার সাথে সিপাহী খালেকও ছিল। কিছুক্ষণ পরে পূর্বদিকে গুলির আওয়াজ ও সাথে সাথে কামানের গোলার আওয়াজ শোনেন। সকাল হওয়ার পর তারা পূর্বদিকে এগিয়ে গেলে একটি বাড়ির সামনে আর্টিলারি ও ল্যান্সারের সৈনিকদেরকে দাঁড়ানো দেখেন। সেখানে একজন অফিসারও ছিল। সৈনিকদের কাছ থেকে সেই অফিসারের নাম মেজর নুর বলে জানতে পারেন। তার কপালে রক্তের দাগ ছিল। সেখানে সৈনিকদের কাছে বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখেন। দোতলায় গিয়ে কয়েকজন মহিলা, পুরুষ ও ছোট বাচ্চার লাশ দেখে সৈনিকদের কাছে মেজর মহিউদ্দিন (ল্যান্সার), মেজর নুর, ক্যাপ্টেন হুদা ও ল্যান্সার ইউনিটের সৈনিকরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে গুলি করে হত্যা করার কথা জানতে পারেন। সন্ধ্যার দিকে লেঃ হাসান তাদেরকে ক্লোজ করে ইউনিটে নিয়ে যায়।
২৩নং সাক্ষী রিসালদার আঃ আলী মোল্লা
প্রসিকিউশনে ২৩নং সাক্ষী রিসালদার আঃ আলী মোল্লা বলেন, ঘটনার সময় ১ম বেঙ্গল ল্যান্সারের বি-স্কোয়াড্রনে এস.ডিএম ছিলেন। তাদের স্কোয়াড্রন কমান্ডার মেজর ফিরোজ ঘটনার সময় ছুটিতে থাকার কারণে লেঃ কিসমত ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার ছিলেন। ১৪ই আগস্ট দিবাগত রাতে নাইট ট্রেনিংয়ে গিয়ে লেঃ কিসমতের নির্দেশে ১০টি ট্যাংক পরিস্কার করেন। রাত প্রায় ১২টার সময় মেজর ফারুক এসে বলেন, ‘ট্যাংক মহড়া আছে? ট্যাংক বাইরে যাবে। যাদের ট্যাংক স্টার্ট হয় তারা হাত তোল’। ৬ জন ড্রাইভার হাত তোলে। তখন ওই ৬ জন ড্রাইভারকে এক পাশে দাঁড় করিয়ে ট্যাংকের জন্য অন্যান্যদের মধ্য থেকে পছন্দমতো ফোর্স বাছাই করে নেয়। পরে ওই ফোর্স ও অফিসারের মধ্যে ট্যাংক বণ্টন করে মেজর ফারুক চলে যান। ভোর ৪/৪.৩০টার সময় মেজর ফারুক সঙ্গে মেজর শরিফুল হোসেন, লেঃ নাজমুল হোসেন ও ২ জন সৈনিকসহ আসেন এবং তিনি সামনের ট্যাংকে উঠেন, তার পিছনের ট্যাংকে লেঃ কিসমত ও সব পিছনের ট্যাংকে মেজর শরিফুল হোসেন ও ওই দুইজন সৈনিক উঠেন। তারপর ট্যাংক মুভ করে দক্ষিণ দিকে চলে যায়। লেঃ কিসমতের নির্দেশে তারা ১০-১২ জন লাইনে ফেরত যায়। সকাল প্রায় ৭.৩০টার দিকে জানতে পারেন মেজর ডালিম রেডিওতে ঘোষণা দিচ্ছেন ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে’।
পরে বিভিন্ন সময়ে ফোর্সদের মুখে জানতে পারেন মেজর ফারুক, মেজর রশিদ, মেজর ডালিম, মেজর হুদা, মেজর নুর, মেজর মহিউদ্দিন (ল্যান্সার), মেজর শরিফুল হোসেন, লেঃ কিসমত, লেঃ নাজমুল হোসেন, রিসালদার মোসলেমউদ্দিন, রিসালদার সরওয়ার ও অন্যান্যরা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল।
প্রসিকিউশনের ২৪নং সাক্ষী হাবিলদার আমিনুর রহমান
প্রসিকিউশনের ২৪নং সাক্ষী হাবিলদার আমিনুর রহমান আদালতকে জানান, ঘটনার সময় ২-ফিল্ড আর্টিলারি হেড কোয়ার্টার ব্যাটারিতে ছিলেন তিনি। আনিসুল হক চৌধুরী তাদের সুবেদার মেজর ছিলেন। ১৪ই আগস্ট দিবাগত রাতে নাইট ট্রেনিংয়ের জন্য রোড মার্চ করে নিউ এয়ারপোর্ট যান তারা। তাদের সাথে হাতিয়ার ছিল, এমিউনিশন ছিল না। রাত ৩.৩০টার সময় তাদের কমান্ডিং অফিসার মেজর রশিদ সাথে আরো অফিসার নিয়ে তাদের সামনে এসে বলেন, ‘তোমাদেরকে এখন একটি জরুরি কাজে অন্য জায়গায় যেতে হবে।’
এরপর তাদের ব্যাটারি কমান্ডার ক্যাপ্টেন মোস্তফা তাদেরকে নিয়ে ল্যান্সার ইউনিটে এলে মেজর ফারুক ল্যান্সারের সৈনিকদের সাথে তাদেরকে মিলিয়ে দিয়ে সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং করেন। সেখানে মেজর রশিদ ও ২-ফিল্ড আর্টিলারির আরো কয়েকজন অফিসার এবং ল্যান্সার ইউনিটের অফিসারসহ সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত কয়েকজন অফিসারও ছিল। মেজর রশিদ এবং মেজর ফারুক ঐ চাকরিচ্যুত অফিসারদের মেজর ডালিম, মেজর রাশেদ চৌধুরী, মেজর শাহরিয়ার, ক্যাপ্টেন মাজেদ বলে পরিচয় দেন। পরে মেজর রশিদ ও মেজর ডালিম তাদেরকে বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে জীবন বাজি রেখে দেশ স্বাধীন করলাম। বর্তমান সরকার আমাদের মা বোনদের ইজ্জত রক্ষা করতে পারছে না, জনগণ না খেয়ে মরছে। এই সরকারকে উৎখাত করতে হবে।’
তারপর মেজর ফারুকের নির্দেশে ক্যাপ্টেন মোস্তফার সঙ্গে ল্যান্সারের ইউনিট থেকে হাতিয়ারের জন্য গুলি নিয়ে ক্যাপ্টেন মোস্তফার সঙ্গে গাড়িতে উঠেন। গাড়ি দক্ষিণ দিকে শহর অভিমুখে চলতে চলতে এক সময় একটি রাস্তার উপর থামলে ক্যাপ্টেন মোস্তফা তাদেরকে গাড়ি থেকে নামার নির্দেশ দেয়। তখন ক্যাপ্টেন মোস্তফার সাথে মেজর শাহরিয়ার ও ক্যাপ্টেন মাজেদকে দেখেন। ক্যাপ্টেন মোস্তফা তাদের কিছু সৈনিককে রাস্তার উপর ডিউটি দিয়ে ঐ অফিসার ও বাকি সৈনিকদের নিয়ে সামনে একটি বাড়ির ভেতরে যান। সামান্য পরে ঐ বাড়ির ভেতরে প্রচণ্ড গুলির আওয়াজ শোনেন। ১০-১৫ মিনিট পর তারা বাইরে আসেন। তখন তাদের সাথে স্টেনগান হাতে মেজর রাশেদ চৌধুরীকেও বাড়ির ভেতর থেকে আসতে দেখেন। সেখানে তাদের গাড়ি বাদে আরো একটা গাড়ি ছিল। তারপর সকলেই গাড়িতে উঠে রেডিও সেন্টারে এলে তাদেরকে রেডিও সেন্টারের চারদিকে ডিউটিতে মোতায়েন করেন।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা করে আমিনুর রহমান আদালতকে বলেন, সেখানে সঙ্গী সৈনিকরা বলে, ‘একটু আগে তারা যে বাড়িতে গেছিলো সেটা মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসভবন ছিল, মেজর রাশেদ চৌধুরী ও অন্যান্য অফিসাররা স্টেনগান দিয়ে মন্ত্রী সেরনিয়াবাত ও তার পরিবারের লোকজনকে হত্যা করে। সকাল প্রায় ৬.৩০টার সময় সৈনিকদের আলাপ আলোচনায় জানতে পারেন বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের লোকজনকে হত্যা করা হয়েছে বলে মেজর ডালিমের ভাষণ রেডিওতে প্রচার হয়েছে। বেশ কিছুক্ষণ পর খন্দকার মোস্তাক আহমেদের সঙ্গে মেজর রশিদকে রেডিও সেন্টারে আসতে দেখে তাদের সঙ্গে থাকা একজন সিভিলিয়ানকে চিনতে পারি নি। পরে আর্মি চীফ মেজর জেনারেল শফিউল্লাহ রেডিও সেন্টারে আসেন। তার পিছনে খোলা জীপে সশস্ত্র অবস্থায় মেজর ডালিম ছিলেন। তারপর অন্যান্য প্রধান ও সিনিয়র অফিসাররা আসেন। তারা আরো জানতে পারেন যে, সেনাবাহিনীর একটি গ্রুপ ভোর রাতে শেখ ফজলুল হক মনি ও তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে।
২৫নং সাক্ষী নায়েক ইয়াছিন
প্রসিকিউশনের ২৫নং সাক্ষী নায়েক ইয়াছিন বলেন, ঘটনার সময় ২-ফিল্ড আর্টিলারির ‘কিউবেক’ ব্যাটারিতে ছিলেন তিনি। ১৪ই আগস্ট দিবাগত রাতে নাইট ট্রেনিংয়ের জন্য মার্চ করে নিউ এয়ারপোর্টে যান। তাদের কাছে হাতিয়ার ছিল। এমিউনিশন ছিল না। রাত প্রায় ৩.৩০টার সময় ক্যাপ্টেন মোস্তফার নির্দেশে মার্চ করে ট্যাংক বাহিনীর সঙ্গে একটি খোলামেলা জায়গায় মিলিত হন। সেখানে মেজর রশিদ, মেজর ফারুক, মেজর রাশেদ চৌধুরী, ক্যাপ্টেন মোস্তফা, মেজর ডালিম, ক্যাপ্টেন মাজেদসহ আরো কয়েকজন অফিসার উপস্থিত ছিলেন। মেজর রশিদ ও মেজর ডালিম তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বহু পরিশ্রম করে, বহু জানমালের বিনিময়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। এই সরকার মা বোনদের ইজ্জত রাখতে পারছে না, মানুষ না খেয়ে মরছে। এই সরকারকে উৎখাত করতে হবে। তোমরা আমাদের সাথে থাকবা।’
এরপর মেজর ফারুকের নির্দেশে তার ইউনিট থেকে এমিউনিশন নিয়ে তারা ৬টি ট্রাকে উঠে। তার ট্রাকে মেজর রাশেদ চৌধুরী উঠেন। তাদের ট্রাকটিসহ অপর একটি ট্রাক তৎকালীন মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়ির পাশে থামলে মেজর রাশেদ চৌধুরীর নির্দেশে তারা গাড়ি থেকে নেমে ঐ বাড়ির ভেতরে ঢুকে। মেজর রাশেদ চৌধুরীসহ অন্যান্য অফিসারগণ ফায়ার করতে করতে বাড়ির দিকে অগ্রসর হয়। এক পর্যায়ে ট্যাংক বাহিনীর সৈনিকরা দরজা ভেঙে দোতলায় উঠে সেরনিয়াবাতসহ তার স্ত্রীকে নিচের তলায় নিয়ে আসে। সাথে বেশ কয়েকজন মহিলাও ছিল। তারা সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়। একজন মহিলা ঐ ছেলেটিকে বাবা বলে জড়িয়ে ধরে। অফিসাররা আবারও গুলি করে।
তিনি মন্ত্রী সেরনিয়াবাতের বাড়ির বারান্দায় থেকে এই হত্যাকাণ্ড দেখেন। হাবিলদার আমিনুর রহমানও তাদের সাথে ছিল। তারপর মেজর রাশেদ চৌধুরী, ক্যাপ্টেন মোস্তফা ও আরো কয়েকজন অফিসারসহ রেডিও সেন্টারে এলে তাদেরকে রেডিও সেন্টারে ডিউটি দেয়। প্রায় একমাস রেডিও সেন্টারে ডিউটি করেন। ১৫ই আগস্ট সকালে ডিউটি করার সময় জানতে পারেন সপরিবারে বঙ্গবন্ধু, সেরনিয়াবাত ও শেখ মনিকে হত্যা করা হয়েছে। পরে বুঝতে পারেন অফিসাররা সৈনিকদের ধোঁকা দিয়ে এইসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
প্রসিকিউশনের ২৬নং সাক্ষী নায়েক জামরুল
প্রসিকিউশনের ২৬নং সাক্ষী নায়েক জামরুল বলেন, ঘটনার সময় ২-ফিল্ড আর্টিলারির এমিউনিশন সেন্টারের দায়িত্বে ছিলেন। ১৪ই আগস্ট বিকালে কমান্ডিং অফিসার মেজর রশিদ তাকে বললেন, ‘এমিউনিশন স্টোরের চাবি কোয়ার্টার মাস্টার ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরের কাছে জমা না দিয়ে তার কাছেই রাখতে’। ওই দিবাগত রাত ১১.৩০টার সময় মেজর রশিদ ও ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর একটি ডজ গাড়ি নিয়ে এমিনিশন স্টোরের সামনে আসেন। তাদের সাথে আর্টিলারির ও ল্যান্সারের ১০-১২ জন সৈনিক ছিল। মেজর রশিদের নির্দেশে এমিউনিশন স্টোরের তালা খুলে দিলে ওই সৈনিকরা কোন প্রকার হিসাব ছাড়াই কামানের গোলা, রাইফেল, স্টেনগান, এস. এম. জি., এল.এম.জি., পিস্তল, রিভলবার ইত্যাদি অস্ত্রের গোলাগুলি গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়। তারপর মেজর রশিদের নির্দেশে এমিউনিশন স্টোরে তালা লাগিয়ে দেয়।
মেজর রশিদ আরো বলেন, ‘তুমি লাইনে থাকবা আমাদের আরো এমিউনিশনের প্রয়োজন হতে পারে’ তারপর চলে যায়। ১৫ই আগস্ট সকাল প্রায় ৬টার সময় তাদেরকে হাতিয়ার ও গুলিসহ প্রস্তুত থাকার জন্য সুবেদার মেজর আমিনুল ইসলাম হুকুম দেয়। বাইরে থেকে আসা ২ ফিল্ড আর্টিলারির সৈনিকদের কাছে জানতে পারেন, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারসহ আত্মীয়-স্বজনকে হত্যা করা হয়েছে। তখন রেডিওতে মেজর ডালিমের ভাষণে শেখ মুজিবকে হত্যা করার কথা শোনেন।
মেজর রশিদ, মেজর ফারুক, মেজর মহিউদ্দিন, মেজর রাশেদ চৌধুরী, মেজর শাহরিয়ার, মেজর ডালিম, মেজর নুর, ক্যাপ্টেন মোস্তফাসহ অন্যান্য অফিসারগণ এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল বলে জানতে পারেন। বেশ কিছুদিন পর ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরের নির্দেশে এমিউনিশনের হিসাব মিলিয়ে দেখেন যে, সকল রকম এমিউনিশন কম। তখন ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর স্টোরে এমিউনিশন যা আছে তারই হিসাব রেখে দিতে বলেন।