চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সৈকতে ভেসে আসছে মৃত-আহত কচ্ছপসহ নানা বর্জ্য, নিরব পরিবেশ অধিদপ্তর

বিশ্ব মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে কক্সবাজারে চলছে দীর্ঘদিনের লকডাউন। এরই মধ্যে গত কয়েকদিন থেকে হঠাৎ করে সাগরতীরে ভেসে আসছে নানা প্রকার প্লাস্টিক বর্জ্য, মৃত ও আহত কচ্ছপ, সাপসহ নানা প্রাণী। এছাড়াও ভেসে আসছে বিভিন্ন প্রকার তেল, অ্যালকোহলের বোতলসহ নানা বর্জ্য।

পর্যটকশূন্য সমুদ্র সৈকত এলাকা লকডাউনের কারণে সৈকতসহ আশপাশের এলাকায় পরিবেশ ও প্রতিবেশের মনোরম পরিবেশও ফিরে এসেছিলো। এই অবস্থায় ওইসব বর্জ্য ভেসে আসায় আলোচনা ও কৌতুহলের জন্ম দিয়েছে।

সৈকতে এসব বর্জ্য যত্রতত্র পড়ে থাকলেও পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচির কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি। পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগকে এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিতেও দেখা যায়নি। তবে স্থানীয় পরিবেশ কর্মীদের জীবিত কচ্ছপগুলোকে সাগরে ছেড়ে দিয়ে প্রাণী রক্ষায় কাজ করতে দেখা যায়। জেলা প্রশাসন এই বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে বলে জানা গেছে।

রোববার দুপুরে সৈকতের হিমছড়ি পয়েন্টে কথা হয় পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্যা ন্যাচার বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক পারভেজ মোশাররফের সাথে। তিনি তখন তার কয়েকজন সহকর্মীকে নিয়ে বেশ কয়েকটি আহত কচ্ছপকে সাগরে ছেড়ে দিচ্ছিলেন।

পারভেজ বলেন, রোববার ভোর থেকে আমরা অন্তত ৫০টি কচ্ছপকে সাগরে ছেড়ে দিয়েছি। বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরে অনেকবার ফোন করে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলার পরও তারা কোন সাড়া দেয়নি।

সেভ দ্যা ন্যাচার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসেন রিয়াদ বলেন, আমার সংগঠনের কর্মীদের নিয়ে রোববার ভোররাত থেকে কক্সবাজার সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে আমরা কচ্ছপসহ বেশ কিছু প্রাণীকে নিয়ে কাজ করেছি। কচ্ছপ’র পাশাপাশি সাপও এসেছে সৈকতে। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগের কোনো সহযোগিতা আমরা পাইনি।

সৈকত এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ও আবুল কাশেম বলছেন, তারা এরকম বিপর্যয় আর দেখেননি। সাগর থেকে এভাবে কচ্ছপ ভেসে আসা তাদেরকেও চিন্তায় ফেলে দিয়েছে বলে জানান তারা।

পরিবেশ কর্মী মোঃ সায়েম বলেন, রোববার সারাদিন বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন কর্মকর্তা বা কাউকে দেখা যায়নি এসব মৃত্ আহত বা জীবিত কচ্ছপগুলোর ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে।

মারাত্মক পরিবেশের বিপর্যয় ঘটলেও কক্সবাজারে অবস্থান করা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ও বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। পাওয়া যায়নি তাদের অফিসে, মোবাইল ফোনও ছিলো বন্ধ। উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা গোলাম মাওলা, বন্যপ্রাণী বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ইয়াসিন, পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার এর উপ-পরিচালক নাজমুল হুদাকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালকের কার্যালয় গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সাগরে ভেসে আসা প্রাণী নিয়ে পরিবেশবাদী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল এর প্রধান নিবার্হী রাশেদুল মজিদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, গভীর সাগরে থাকা জাহাজ থেকে ফেলা বর্জ্যর কারণে সাগরে থাকা প্রাণীকুল মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়েছে। সাগরে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটেছে। সাগরে মাছ ধরার ট্রলিসহ যেসব জাহাজগুলোকে  কোনো নিয়ন্ত্রণ করা যায় না বলেই আজকে এই অবস্থা।

এই বিষয়ে পরিবেশবিদ এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, যে হারে কচ্ছপসহ নানা প্রকার বর্জ্য, তেল, অ্যালকোহলের বোতল ভেসে আসছে, তাতে মনে হয় সাগরের তলদেশে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটেছে। নানা প্রকার জীববৈচিত্র্যের মৃত্যু হয়েছে সেখানে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেটকে পাঠানো হয় সৈকতে। ঘটনা জানতে কমিটি গঠন সহ নানা পদক্ষেপের কথা কথা জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক বলেন, ঘটনার সাথে যদি কোনো জেলে বা কেউ জড়িত থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।জাহাজ থেকে বর্জ্য ফেলার বিষয়টিও খতিয়ে দেখে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে বিষয়টি অবহিত করা হবে।